যার এক ফোনে দল থেকে বাদ পড়লো সাব্বির

হালাল খাবার ছাড়া খান-ই না তিনি। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে এক ওয়াক্ত নামাজও মিস করেন না সাব্বির রহমান। অথচ তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের প্রচার পাওয়া অন্ধগলিতে অধর্মের নানা ল্যান্ডমার্ক। বাংলাদেশের ক্রিকেটে দল নির্বাচনী পদ্ধতিও ‘হিপোক্রেসি’তে ঠাসা। দল নির্বাচনী কমিটি আছে, চিরায়ত রীতি মেনে ম্যাচের একাদশ নির্বাচনে টিম ম্যানেজমেন্টের অধিকারকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলা হয়। কিন্তু বাস্তবে পুরো প্রক্রিয়াটিতে ওতপ্রোতভাবে জড়িত বোর্ডের ক্ষমতাবানরা। সেন্ট কিটসে অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টির একাদশে সাব্বির রহমানের না থাকাটি যেমন নিশ্চিত করা হয়েছে ঢাকা থেকে টেলিফোনে। অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ও কোচ স্টিভ রোডসের পছন্দ অগ্রাধিকার পায়নি বলে জানা গেছে।
দল নির্বাচন থেকে শুরু করে একাদশ গঠনে বোর্ডের শীর্ষ কর্মকর্তার হস্তক্ষেপ নতুন কিছু নয়। দল সাফল্য পেলে খেলোয়াড় বাছাইয়ে নিজের নির্ভুল নির্বাচনের কথা একাধিকবার জানিয়েছেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান স্বয়ং। সেসব যতই অনধিকার চর্চা হোক না কেন। স্কোয়াড নির্বাচনে বোর্ড সভাপতির হস্তক্ষেপের সুযোগ সংস্থার গঠনতন্ত্রেই দেওয়া আছে। নির্বাচকদের গড়া দলের অনুমোদন নিতে হবে বোর্ডের কাছ থেকে। এমন অনুমোদনের দোহাই দিয়ে স্কোয়াডে পরিবর্তন প্রায় নিয়মিত। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের ওয়ানডে স্কোয়াডে হয়েছে। অদ্ভুতুড়ে কাণ্ড ঘটেছিল টেস্ট সিরিজের সময়ও।
প্রথম টেস্টে একটি ফিফটি করেই বোর্ড কর্তাদের মন জয় করে ফেলেছিলেন নুরুল হাসান। কিন্তু দ্বিতীয় টেস্টে ‘পেয়ার’ পেতেই বিরাগভাজন তিনি। তাতে মাত্র ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে নুরুল ওয়ানডে স্কোয়াডে ঢোকার এবং বাদ পড়ার খবর শুনেছেন। তৃতীয় ওয়ানডের দল থেকে এনামুল হককে বাদ দেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি হয়েছিল ঢাকা থেকে। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে সে চাপ জয় করেছিলেন মাশরাফি বিন মর্তুজা ও স্টিভ রোডস। সাকিব আর সে ঝামেলায় যাননি, নতুন কোচও হয়তো বুঝতে শুরু করেছেন এ দেশীয় ক্রিকেটের ভাও!
মনে হতে পারে, সাব্বির খেললে বুঝি প্রথম টি-টোয়েন্টিটা জিতেই যেত বাংলাদেশ। বিষয়টি তেমন নয়। তবে যে প্রক্রিয়ায় এসব কাণ্ডকারখানা ঘটে চলেছে বাংলাদেশে, তা মোটেও ক্রিকেটবান্ধব নয়। প্রতিপক্ষকে নিয়ে রণপরিকল্পনা সাজায় কোচ-অধিনায়কের টিম ম্যানেজমেন্ট। কাকে কখন কোথায় কিভাবে ব্যবহার করা দরকার—ক্রিকেটে তা অধিনায়কের চেয়ে ভালো আর কারো জানার কথা নয়। ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটে পাতি কর্মকর্তাদের তো নয়ই। তবু একাদশ নির্বাচনের আগে ফোন আসে ঢাকা থেকে— সাব্বির কিংবা অন্য কারো কারো একাদশে থাকা না থাকা নির্ভর করে সেই ফোনের ওপর।
এমন নয় যে সাব্বির রহমান জাতীয় দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্যদের অত্যন্ত স্নেহভাজন। বরং তাঁর মাঠের বাইরের ‘অ্যান্টিকস’ নিয়ে দলের প্রভাবশালীরা বিরক্তই। কিন্তু ব্যাটসম্যান সাব্বিরকে আবার দলে চান তাঁরাই। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে তাঁর মতো হার্ডহিটার যে আর দলে নেই। ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম ফরম্যাট টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের সেরা সাব্বির, যদি ব্যাটিং গড় ও স্ট্রাইক রেটকে গুরুত্বপূর্ণ বলে ধরে নেওয়া হয়। এই ফরম্যাটে তাঁর ব্যাটিং গড় ২৫.৮৮ আর স্ট্রাইক রেট ১২২.৫৯—দুই ক্যাটাগরিতেই সাকিব ও তামিম ইকবালের চেয়ে এগিয়ে সাব্বির। পরিসংখ্যানে ফর্মের ছাপ সব সময় থাকে না। তবে টি-টোয়েন্টির সাব্বিরের ফর্ম কিন্তু মন্দ নয়। দুই ম্যাচ আগে, নিদাহাস ট্রফির ফাইনালেই ৭৭ রানের দুর্দান্ত ইনিংস রয়েছে তাঁর। তবে কি ওয়ানডের ব্যর্থতাই ছিটকে দিল সাব্বিরকে? হতে পারে। টেস্টে খারাপ করার জন্য টি-টোয়েন্টি থেকে বাদ আবার ওয়ানডেতে ভালো করার সুফল হিসেবে টেস্ট ক্যাপ উপহার দেওয়ার ঘটনা একমাত্র বাংলাদেশেই ঘটে!
অবশ্য পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন ঘটনায় মনে হতে পারে যে নিছক ফর্মই নয়—সাব্বিরের বাদ পড়ার পেছনে শৃঙ্খলার বিষয়টিও জড়িত। ঢাকায় তাঁর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে ব্যাপক ঘাঁটাঘাঁটি হয়েছে এবং হচ্ছেও। সে কারণেই কি সাব্বিরকে একাদশে না রাখার জন্য চাপ এসেছে ঢাকা থেকে? এমন স্পর্শকাতর প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার ‘দুঃসাহস’ টিম ম্যানেজমেন্ট পর্যায়ের কারোর নেই। তবে এটি যদি একমাত্র কারণ হয়ে থাকে, তাহলেও সাধুবাদের চেয়ে অপবাদই বেশি জুটবে বিসিবির ভাগ্যে।
সাব্বিরের ‘বিশৃঙ্খলা’র খবরের আদ্যোপান্ত্ত জানে বিসিবি। দলে সাফল্যের আশায় এবং অধিনায়কের ইচ্ছায় তাঁর ওয়েস্ট ইন্ডিজ যাত্রার পথে বাধা দেয়নি বিসিবি। এটাও তো এক ধরনের আপস। কঠোর শৃঙ্খলার কথা বলে জাতীয় স্বার্থের নামে ‘বিশৃঙ্খল’ ক্রিকেটারকে দলে নেওয়া মানে তো আপসই। সাব্বিরের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে আগেও দ্বিমুখী নীতি অনুসরণ করেছে বিসিবি। ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির একটি ম্যাচের সময় এক কিশোর সমর্থককে মারধর করার পর ম্যাচ রেফারিকেও হুমকি দেওয়ায় ছয় মাসের নিষেধাজ্ঞা জারি হয় সাব্বিরের ওপর। তাতে অবশ্য আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে অসুবিধা হয়নি তাঁর, শাস্তিটা যে ছিল শুধুই ঘরোয়া ক্রিকেটে। তাতে ঘরোয়া ক্রিকেটে নিষেধাজ্ঞা মাথায় নিয়েও নির্বিঘ্নে সাব্বিরের আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলিয়ে যাওয়ার ‘বিরল দৃষ্টান্ত’ গড়েছে বিসিবি। আর ‘শাস্তি’ দেওয়ার জন্যই যদি প্রথম টি-টোয়েন্টিতে তাঁকে না খেলানো হয়ে থাকে, তাহলে তো ওয়ানডের পরই দেশে ফিরিয়ে আনা যেত।
স্কোয়াডে রেখে দেওয়া মানেই সাব্বিরকে খেলানোর অনুমতি দেওয়া টিম ম্যানেজমেন্টকে। প্রচলিত এ রীতি অনুসরিত হলে সাব্বির খেলতেন প্রথম টি-টোয়েন্টিতে। সেটি না হওয়ার পেছনে তৃতীয় কারণ হতে পারে তাঁর অফ ফর্ম। তবে সে তো ওয়ানডেতে। টি-টোয়েন্টির ফর্ম বিবেচনায় একাদশ থেকে বাদ পড়ার কথা নয় সাব্বিরের। তবে কি ওয়ানডেতে ব্যর্থতার ধাক্কাতেই টি-টোয়েন্টি থেকে ছিটকে পড়লেন তিনি? বাংলাদেশের ক্রিকেট বলয়ে এমন অভাবিত কাণ্ড ঘটার নজির রয়েছে, তা যতটাই হাস্যকর মনে হোক না কেন।
যেকোনো ম্যাচের আগে একাদশ নির্বাচনে বোর্ড কর্মকর্তাদের এ ধরনের হস্তক্ষেপ হঠকারিতা। অযৌক্তিক তো বটেই
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- প্যারোলে মুক্তি পেল আওয়ামী লীগ নেতা
- আবারও বাড়লো সৌদি রিয়াল রেট বিনিময় হার
- একাধিক গণমাধ্যমে দাবি ‘নয়াদিল্লিতে শেখ হাসিনার মৃত্যুর’ জানা গেল খবরের সত্যতা
- ওবায়দুল কাদেরের মৃত্যু, জানা গেল সত্যতা
- চরম দু:সংবাদ: ভিসা বন্ধ ঘোষণা
- আফগানিস্তান ইংল্যান্ডকে হারানোর পেছনের নায়ক বাংলাদেশের বুলবুল
- নাহিদের পদত্যাগে নতুন বিতর্ক, ভারতীয় সাংবাদিকের পোস্টে তোলপাড়
- বাংলাদেশের একটি শক্তির কারণে যুদ্ধে জড়াবে না ভারত
- বাড়লো আজকের সৌদি রিয়াল রেট বিনিময় হার
- নাহিদ ইসলামের জায়গাতে নতুন উপদেষ্টা হচ্ছেন যিনি
- আগামী নির্বাচনকে ঘিরে আত্মপ্রকাশ করছে ৩টি বড় রাজনৈতিক জোট
- সুখবর: দীর্ঘ অপেক্ষার পর আরব আমিরাতের ভিসা চালু
- কঠিন সমীকরণ: শেষ ম্যাচ না জিতেও সেমি ফাইনাল খেলবে আফগানিস্তান
- মাসের শুরুতেই কমলো সৌদি রিয়াল রেট বিনিময় হার
- আজ বাড়লো সৌদি রিয়াল রেট বিনিময় হার