ঢাকা, শনিবার, ১ মার্চ ২০২৫, ১৭ ফাল্গুন ১৪৩১

৪ আর ৮-এর চক্করে ক্রোয়েশিয়া!

খেলা ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০১৮ জুলাই ১২ ১৭:৫৪:৪১
৪ আর ৮-এর চক্করে ক্রোয়েশিয়া!

এতো সাধনা, এতো লড়াই, এতো ঝাম ঝরিয়ে ফাইনালে যখন উঠেছে, ক্রোয়াটরা নিশ্চিতভাবেই চাইবেন ৮-এর গোলকের মিলতে। কিন্তু আরও একটি দল যেহেতু ফাইনালে উঠেছে, সেই ফ্রান্সও যেহেতু শিরোপা স্বপ্নে বিভোর, কাজেই ইতিহাস ক্রোয়েশিয়াকে মিলিয়ে দিতে পারে ৪-এর সঙ্গেও।

আর ভনিতা না করে এবার ৪ আর ৮-এর গোলকধাঁধার রহস্য উন্মোচন করা যাক। ফুটবল ইতিহাসে ৪টি দল আছে, যারা বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠলেও শিরোপা জিততে পারেনি কখনোই। মানে ফাইনালে হারার হতাশাই তাদের চির সঙ্গী হয়ে আছে। ফাইনালে কপাল পোড়া সেই ৪টি দল হলো চেকোস্লোভাকিয়া (বর্তমানে চেক প্রজাতন্ত্র), হাঙ্গেরি, হল্যান্ড ও সুইডেন।

এর ৪ দলের মধ্যে সুইডেনের হতাশাটাই হয়তো তুলনামূলকভাবে একটু কম। কারণ, তারা মাত্র একবারই ফাইনালে উঠেছিল। ১৯৫৮ সালে নিজেদের ঘরের মাটির সেই বিশ্বকাপের ফাইনালে সুইডেন ৫-২ গোলে হেরে যায় ব্রাজিলের কাছে। এছাড়া চেকোস্লোভাকিয়া ও হাঙ্গেরি এই হতাশায় পুড়েছে দুবার করে। ১৯৩৪ সালের পর ১৯৬৬ সালেও বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছিল চেকোস্লোভাকিয়া।

দুবারই তাদের মাঠে কান্নায় ভেঙে পড়তে হয় স্বপ্নভঙ্গের হতাশায়। তবে এদের চেয়েও বেশি কপাল পোড়া হল্যান্ড তথা নেদারল্যান্ডস। একবার, দুবার নয়, টোটাল ফুটবলের জনকেরা বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছে তিন বার। ১৯৭৪, ১৯৭৮ ও ২০১০ সালে। কিন্তু তিনবারই হার। চির কপাল পোড়া ডাচ’রা যুগে যুগে অবিশ্বাস্য সব দল গড়েও স্বপ্নের সোনার ট্রফিটা ছুঁতে পারেনি কখনোই।

আগামী রোববারের ফাইনালে হারলেই এই ৪ দলের কাতারে নাম উঠে যাবে ক্রোয়েশিয়ার। ইতিহাসের পঞ্চম দল হিসেবে পুড়তে হবে ফাইনালে উঠেও শিরোপা জিততে না পারার হতাশায়। লুকা মড্রিচরা নিশ্চিতভাবেই এই ‘অভিশপ্ত ৪’-এর খপ্পরে পড়ে তালিকাটা ৫-এ উন্নীত করতে চাইবে না। কায়মনো বাক্যে তারা হয়তো একটা স্বপ্নই দেখছেন, ৮-এর সঙ্গে মিলে নয় নম্বর দেশ হওয়ার।

বিশ্বকাপের ইতিহাস বলছে, এ পর্যন্ত ৮টি দল বিশ্বকাপ শিরোপার স্বাদ পেয়েছে। সেই দেশ গুলো হলো উরুগুয়ে, ইতালি, জার্মানি, ব্রাজিল, ইংল্যান্ড, আর্জেন্টিনা, ফ্রান্স ও স্পেন। এর মধ্যে ব্রাজিল জিতেছে ৫ বার। জার্মানি ও ইতালি ৪ বার করে। উরুগুয়ে ও আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ জয়ের উৎসবে মেতেছে দুবার করে। ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও স্পেন একবার করে।

একবার যেহেতু বিশ্বকাপ জয়ের উৎসব করে ফেলেছে, তাই রোববারের দুই ফাইনালিস্টের একটি, ফ্রান্সের ৪-এর গোলকের মেলার সুযোগ নেই। তবে হারলে ফরাসিদের ফাইনালে হারার হতাশাটা দ্বিগুণ হবে। ১৯৯৮ সালে প্রথম বার ফাইনালে উঠে জিতলেও ২০০৬ বিশ্বকাপের ফাইনালে ঠিকই তারা হেরে যায় ইতালির কাছে।

যাই হোক, ফ্রান্সের গল্পটা অন্য। ক্রোয়েশিয়ার সামনে ৪ আর ৮-দুটি গোলকেরই হতাছানী। হারলে হবে ফাইনালে হারা পঞ্চম পোড়া দল। জিতলে ইতিহাসের নবম দেশ হিসেবে পাবে বিশ্বকাপ জয়ের অমৃত স্বাদ। ক্রোয়েশিয়া কোন ধারায় মিলবে, মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়াম উত্তরটা দেবে আগামী রোববার রাতেই। সে পর্যন্ত আপনাকে অপেক্ষা করতেই হবে।র্নামেন্টে খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার সোনার বল ঘোষণা করে ফিফার টেকনিক্যাল স্টাডি গ্রুপ। তারা মড্রিচ বা এমবাপের মধ্য থেকে একজনের হাতেই এটা তুলে দেন নাকি, তাদের হতাশ করে অন্য কারো হাতে উঠে, সেটা হয়তো জানা যাবে, রোববারের ফাইনালের পরই।

তবে চ্যাম্পিয়ন দলের একজনের হাতেই যে টুর্নামেন্টের সবচেয়ে আকর্ষণীয় এই ব্যক্তিগত পুরস্কারটি উঠবে, বিষয়টা এমন নয়। অতীত বরং বলছে উল্টোটাই। সেই ১৯৮২ বিশ্বকাপ থেকে এই পুরস্কার দিয়ে আসছে ফিফা। সেই থেকে গত ৯ আসরে ৯ জনের হাতে উঠেছে এই পুরস্কার। এর মধ্যে ৪ বারই এই পুরস্কার গেছে রানার্সআপ দলের খেলোয়াড়ের হাতে।

১৯৯৮ বিশ্বকাপে ব্রাজিলের রোনাল্ডো, ২০০২ বিশ্বকাপে জার্মানির গোলরক্ষক অলিভার কান, ২০০৬ বিশ্বকাপে ফ্রান্সের জিনেদিন জিদান ও ২০১৪ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার লিওনেল মেসি পেয়েছেন এই পুরস্কার। এই বিজয়ীদের প্রত্যেকের দলই স্ব স্ব আসরের রানার্সআপ হয়।

এর বিপরীতে চ্যাম্পিন দলের খেলোয়াড়েরা এই পুরস্কার পেয়েছেন তিনবার। ১৯৮২ বিশ্বকাপে ইতালির পাওলো রসি, ১৯৮৬ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার ডিয়েগো ম্যারাডোনা ও ১৯৯৪ বিশ্বকাপে ব্রাজিলের রোমারিও। বাকি দুবার জিতেছেন সেমিফাইনালে হেরে যাওয়া দুই দলের দুই খেলোয়াড়, ১৯৯০ ও ২০১০ বিশ্বকাপে।

১৯৯০ সালে নিজেদের মাটির বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে হেরে শেষ পর্যন্ত তৃতীয় স্থান লাভ করা ইতালির সালভেদর শিলাচি পান সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার সোনার বল। ৬ গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার সোনার জুতোও উঠে ইতালির ফরোয়ার্ড শিলাচির হাতেই। ২০১০ বিশ্বকাপে সোনার বল জিতে নেন সেমিফাইনালে হেরে শেষ পর্যন্ত চতুর্থ হওয়া উরুগুয়ের দিয়েগো ফোরলান।

উপরের এই তালিকা বলছে, ১৯৯৪ বিশ্বকাপের পর থেকে কখনোই চ্যাম্পিয়ন দলের খেলোয়াড়দের হাতে সোনার বল উঠেনি। এবার কি ধারা পাল্টাবে?

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ



রে