ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৪ ফাল্গুন ১৪৩১

এই ‘বিভীষিকা’ ভুলে কিভাবে ফিরবে টাইগাররা!

খেলা ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০১৮ জুলাই ০৫ ১০:৫৩:৩৩
এই ‘বিভীষিকা’ ভুলে কিভাবে ফিরবে টাইগাররা!

টেস্ট, ওয়ানডেতে হোয়াইটওয়াশ করেছিল স্বাগতিকদের। কিন্তু ২০১৮ সালের আরেক সফরের শুরুতেই কি চরম বিভীষিকা। প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে মাত্র ৪৩ রানের লজ্জায় শুরু টাইগারদের।

চার বছর আগে ২০১৪ সালে সর্বশেষ ক্যারিবিয় সফর করে বাংলাদেশ। সেবারও কাজে আসেনি ২০০৯ সালের সুখস্মৃতি। ২০০৯ সালে বোর্ডের সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের শীর্ষ ক্রিকেটাররা খেললেন না। দ্বিতীয় সারির দলকে পেয়ে বিদেশের মাটিতে প্রথম টেস্ট সিরিজ জয়ের পর ওয়ানডে সিরিজও জয় করে বাংলাদেশ। একমাত্র টি-টুয়েন্টিতে অবশ্য পরাজয়। ২০১৪ সালের সফরে টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টুয়েন্টি সবকিছুতেই অসহায় আত্মসমর্পন বাংলাদেশের।

এবার সেই গল্পটা বদলাবে বলেই আশা ছিল সবার। কিন্তু দুই টেস্ট, তিন ওয়ানডে ও সমান সংখ্যক টি-টুয়েন্টির সিরিজে যেভাবে শুরু হলো বাংলাদেশের, তাতে সামনের সময়গুলোতে এখন বিনিদ্র রজনী উপহার দেয় কিনা কে জানে। বুধবার অ্যান্টিগায় স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডসন স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ৪৩ রানে গুটিয়ে যায় টাইগারদের প্রথম ইনিংস। লাঞ্চ বিরতিতে যাওয়ার আগে কোনো উইকেট না হারিয়ে ৯ রান তোলে ক্যারিবিয়রা।

কদিন আগেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজ খেলেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সেই সিরিজই প্রমাণ দেয় বাউন্স আর গতির সামনে টাইগারদের বড় পরীক্ষা দিতে হবে। অবশ্য ক্যারিবিয়ন পাড় সবসময়ই সব দলের কাছেই সেই পরীক্ষা নেয়। আগের দিন অ্যান্টিগার উইকেটে ঘাসের আবরণই বলে দিয়েছে কী অপেক্ষা করছে টাইগারদের জন্য। কিন্তু অধিনায়ক সাকিব আল হাসান চ্যালেঞ্জের কথা জানালেন। তার দল যে তৈরি সব চ্যালেঞ্জ নিতে জানিয়ে দিলেন সেটিও। কিন্তু ক'দিন আগে আফগানিস্তানের বিপক্ষে টি-টুয়েন্টি সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হওয়া বাংলাদেশকেই যেন এদিন খুঁজে পেলেন সবাই সাদা পোশাকে।

রীতিমতো স্টিম রোলার চালালেন কেমার রোচ। ইনজুরি নিয়ে মাঠ ছাড়ার আগে হাত ঘোড়ালেন মাত্র ৫ ওভার। আর ওই স্পেলটুকুতেই পাঁচ পাঁচটি টাইগার উইকেট খুঁজে নিল তার বল। ৮.৫ ওভারে মাত্র বাংলাদেশকে ১৮ রানে ৫ উইকেটে পরিণত করে দিলেন তিনি। আসলে ভেঙে দিলেন টাইগারদের ব্যাটিং মেরুদন্ড। এরপর রোচ মাঠ ছাড়লে কি হবে। ক্যারিবিয়ন গতি তো আরো আছে। অধিনায়ক জেসন হোল্ডার, মিগুয়েল কামিন্স। এই দুজন টাইগার মিডল আর লোয়ার অর্ডার ধসিয়ে দিলেন। কামিন্স নিলেন ৩টি, রোচ ২টি। তাতে নিজেদের ইতিহাসে সর্বনিম্ন ৪৩ রানে অলআউট বাংলাদেশ।

চার চার জন ব্যাটসম্যান রানের খাতাই খুলতে পারলেন না। কামরুল ইসলাম রাব্বির কথা না হয় আলাদা করেই বলা যাক। অন্য তিন নামগুলো দেখুন- মাশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান ও মাহমুদউল্লাহ। দলের শীর্ষ তিন ব্যাটসম্যানই শূন্য রানে ফিরলেন। প্রথমজন ফিরলেন ২টি করে বল খেলে। পরের জন প্রথম বলেই আউট। কেমার রোচের নবম ওভারটি সারা জীবন ভীতির নাম হয়েই থাকবে বাংলাদেশের দর্শকদের কাছে।

অথচ তামিম ইকবাল ও লিটন দাসের উদ্বোধনী জুটি যখন ১০ রান যোগ করল তখন কে ভেবেছিল এমন দুঃস্বপ্ন উপহার দেবে ভিভ রিচার্ডসন স্টেডিয়াম। ৪ রান করে তামিম ফিরেন সবার আগে। সেটি ছিল রোচের পঞ্চম ওভারের শেষ বল। পরের ওভারে ফিরে ১ রান করা মুমিনুল হককে তুলে নিলেন। আর তার পরের ওভারে তো ওই জুজু। নেই দলের সেরা তিন ব্যাটসম্যান। লিটন দাস একামাত্র ছিলেন ব্যাতিক্রম। কেউ যখন দুই অঙ্কের স্কোর ছুঁতে পারেননি তখন তিনি ২৫ রান করলেন। ২০১৭ সালের জানুয়ারির পর টেস্ট খেলতে নামা নুরুল হাসান হোসানের সঙ্গে জুটি গড়লেন ১৬ রানের। কিন্তু যেভাবে ফিরলেন লিটন তাকে আত্মহত্যা বলা ছাড়া উপায় নেই।

লিটন ফেরার পর বাংলাদেশের গুটিয়ে যেতেও আর সময় লাগল না। সোহান ফিরে গেলেন ৪ রান করে। ১ রান মেহেদী হাসান মিরাজের। কামরুল ইসলাম রাব্বীর ০ রানের পর অভিষেক টেস্ট খেলতে নামা আবু জাহেদ রাহী করলেন ২ রান। রুবেল হোসেন ৬ রানে অপরাজিত থেকে গেলেন। কিন্তু ৪৩ রানের লজ্জা নিয়ে শুরু হলো সফর।

টেস্টে বাংলাদেশের আগের সর্বনিন্ম স্কোর ছিল ৬২ রান। সেটি কলম্বোয় শ্রীলঙ্কায় বিপক্ষে ২০০৭ সলে। কিন্তু এবার তারচেয়ে নিদারুণ বিভিষীকা। সবমিলে অবশ্য সর্বনিম্ন রানে অল আউটের তালিকায় এটি ১১তম। ৪৩ রানের অলআউট হওয়ার রেকর্ড আছে দক্ষিণ আফ্রিকারও, সেটি ১৮৮৯ সালে। ১৯৫৫ সালে সর্বনিন্ম ২৬ রানে অলআউট হয় নিউজিল্যান্ড।

এই ক্যারিবিয়ানেই ২০০৯ সালে হঠাৎ বাংলাদেশের নেতৃত্ব পেয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা ইনজুরিতে পড়ায়। পরে সাকিবের নেতৃত্বেই সেবার ক্যারিবিয় কীর্তি গাঁথা টাইগারদের। এরপর অনেক পথ পেরিয়েছে। সাকিব অধিনায়কত্ব হারান। দ্বিতীয় মেয়াদে টি-টুয়েন্টি ও টেস্টের নেতৃত্ব ফিরে পেয়েছেন।

টি-টুয়েন্টিতে নিদাহাস ট্রফি ও আফগানদের সিরিজে নেতৃত্ব দিলেও টেস্টে অধিনায়ক সাকিবের এখানেই নতুন শুরু। কিন্তু সেই শুরুতে ঝড়ে লণ্ডভণ্ড বাংলাদেশ। এখন বরং প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে এই ঝড় কিভাবে সামলাবে বাংলাদেশ? বলা হচ্ছিল এই সিরিজ কঠিন পরীক্ষা অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের জন্য। আফগান সিরিজের পর উঠে তার নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন। যদিও পুরো দলই ছিল ব্যর্থ। এখানেও তাই।

তবে সিরিজের শুরুতেই যখন এমন টালমাতাল অবস্থা, তখন বাকী সময়গুলো কঠিনই হবে পুরো দলের। বাংলাদেশ তাই কিভাবে ফিরে সেটিই হবে দেখার। এই টেস্টেই তো অনেক কিছু ঘটতে পারে এখনো। বাংলাদেশ না হয় অলৌকিক কিছু করুক।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ



রে