ইসলামে রাজনীতি চান না যুবরাজ বিন সালমান?
গত বৃহস্পতিবার সৌদি আরবের যুবরাজ হিসেবে অধিষ্ঠিত হওয়ার এক বছর পূরণ করেছেন মোহাম্মদ বিন সালমান। এর দুদিন পর পূর্ণতা পেল নারীদের গাড়ি চালানোর অনুমতি দেওয়া সরকারি সিদ্ধান্ত। বার্তা সংস্থা এএফপির বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, এই এক বছরে যুবরাজ এমন সব পদক্ষেপ নিয়েছেন, যা রক্ষণশীল সৌদি আরবকে স্রেফ ঝাঁকুনি দিয়েছে। তাঁর হাত ধরেই পরিবর্তনের পথে হাঁটছে দেশটি।
কিন্তু এই পরিবর্তন আসলে কী রকম? ওয়াশিংটন পোস্ট বলছে, যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের একমাত্র লক্ষ্য হলো নিজের আধিপত্য টিকিয়ে রাখা। এ জন্যই তিনি ধর্মীয়ভাবে গোঁড়া ও প্রগতিশীল—এই দুই পক্ষকেই চাপে রাখছেন।
এত দিন সৌদি শাসকেরা দেশটিতে কড়া ধর্মীয় অনুশাসন জারি রাখার পক্ষে ছিলেন। কিন্তু মোহাম্মদ বিন সালমান যুবরাজ হিসেবে অভিষিক্ত হওয়ার পর থেকেই এই নীতিতে আমূল পরিবর্তন আনছেন। তাঁর নেওয়া বিভিন্ন সংস্কারমূলক কার্যক্রমের মূল লক্ষ্য হলো কট্টর ধর্মীয় নেতাদের কোণঠাসা করা। এ জন্য তাঁদের জেলেও পোরা হচ্ছে। ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্ট বলছে, ইসলাম ধর্মকে রাজনীতিমুক্ত করতে চাইছেন যুবরাজ বিন সালমান। এর মাধ্যমে কট্টর নেতাদের প্রভাব দূর করা সহজ হবে বলে মনে করছেন তিনি। আর সেটি সম্ভব হলে আখেরে লাভই হবে তাঁর। কারণ যে অনুপাতে ধর্মীয় নেতাদের প্রভাব খর্ব হবে, ঠিক একই অনুপাতে তাঁর ক্ষমতার ভিত্তি শক্ত হবে।
বাদশাহ সালমান গত বছর রাজকীয় ফরমান জারি করে তাঁর ছেলে মোহাম্মদ বিন সালমানকে উত্তরসূরি মনোনীত করেন। যুবরাজ এরপর ঘোষণা করেন ভিশন ২০৩০। এই পরিকল্পনার আওতায় সৌদি আরবের সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ব্যাপক সংস্কার কার্যক্রমের সূচনা হয়। যুবরাজ বলছেন, তরুণ সম্প্রদায়ের কথা মাথায় রেখেই এত পরিবর্তন। রাতারাতি দেশটিতে খুলে গেল সিনেমা হল, শুরু হলো কনসার্ট।
নারীদের গাড়িচালকের আসনে বসিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন যুগের সূচনা করছেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। প্রতীকী ছবিনারীদের গাড়িচালকের আসনে বসিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন যুগের সূচনা করছেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। প্রতীকী ছবিআবার দুর্নীতিবিরোধী অভিযানও শুরু করেছেন বাদশাহ সালমানের ছেলে। রিয়াদের বিলাসবহুল রিটজ-কার্লটন হোটেলকে বানানো হয়েছে অভিজাত বন্দিশালা। সেখানে থাকতে হচ্ছে রাজপরিবারের অনেক প্রভাবশালী সদস্য থেকে শুরু করে মন্ত্রী ও ধনী ব্যবসায়ীদের। নিন্দুকেরা বলছেন, কেউ যেন যুবরাজের বিরুদ্ধাচরণ করতে না পারেন—সেই জন্যই এ ব্যবস্থা। ধরপাকড় থেকে রেহাই পাচ্ছেন না মানবাধিকার ও নারী অধিকারকর্মীরাও।
তবে সংস্কারের কথা বলে সামাজিক যেসব বিধিনিষেধে পরিবর্তন আনছেন সৌদি যুবরাজ, সেগুলো আনকোরা নয়। এগুলো সৌদি আরবে আগেও ছিল। সুনির্দিষ্টভাবে বললে, ১৯৭৯ সালের আগে ওই দেশে সিনেমা প্রদর্শন বা কনসার্ট উপভোগে কোনো বাধা ছিল না। নিষিদ্ধ ছিল না আধুনিক সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠাতা আবদেল আজিজ আল সৌদের শাসনামলেও। কিন্তু ১৯৭৯ সালে মক্কায় সুন্নি কট্টরপন্থীদের জোরালো বিক্ষোভের মুখোমুখি হয়ে সৌদি রাজপরিবারের নীতিতে আসে আমূল পরিবর্তন। ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার বিষয়ে সুন্নি বা শিয়াদেরও ছাড়িয়ে যান তাঁরা!
যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান বলেছেন, বর্তমানে যে সংস্কার কার্যক্রম চালানো হচ্ছে, তার লক্ষ্য হলো আগের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাওয়া। এ বিষয়ে মুসলিম ওয়ার্ল্ড লিগ নামের একটি সংস্থার প্রধান শেখ মোহাম্মদ আলিসা বলেন, ‘নিজের মতো করে ইসলাম বরাবরই উদার। মৌলবাদ এই ধর্মকে ছিনতাই করেছে—এটি সত্যিই দুর্ভাগ্যের।’
ফ্রান্সের সায়েন্সেস-পো ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক স্টেফানে ল্যাঁখোয়া বলছেন, মিথ তৈরির চেষ্টা করছেন সৌদি যুবরাজ। ইকোনমিস্টকে তিনি বলেন, ১৯৭৯ সালের পরে আয়াতুল্লাহ খোমেইনি ইরানে শাসনক্ষমতায় আসেন। তিনি ক্ষমতাসীন হওয়ার আগেও সৌদি শাসকেরা কট্টর ছিলেন। পার্থক্য হলো ওই বছর থেকে সৌদি আরবের শাসনকাঠামোয় কট্টরপন্থী ধর্মীয় নেতাদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। বৈশ্বিকভাবে জিহাদি কর্মসূচি শুরু হওয়ার পর আল-কায়েদা, তালেবান বা ইসলামিক স্টেটের মতো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা মিথ্যা প্রমাণ করতে সৌদি শাসকদের বেশ কষ্ট হয়েছে। তবে এসব সন্ত্রাসী গোষ্ঠী যেসব অনুশাসন মেনে চলে বা চলতে বলে, তার সঙ্গে সৌদি কট্টরপন্থীদের খুব একটা পার্থক্য নেই। তফাত শুধু রাজনৈতিক সহিংসতার ক্ষেত্রে।
যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের নেতৃত্বে সৌদি শাসকেরা এখন বলছেন, ওয়াহাবিবাদ বলতে কিছু নেই। যদিও কিছুদিন আগে পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের ওয়াহাবিবাদের প্রচারের রাষ্ট্রীয়ভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করত সৌদি আরব। সালাফিদের ঠেকাতে বলা হচ্ছে, সত্যিকারের সালাফিবাদে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা থাকা উচিত নয়, বরং শাসকদের নির্দেশ মেনে চলাই এর মূল বক্তব্য।
বর্তমানে সৌদি শাসকদের চক্ষুশূল হলো মুসলিম ব্রাদারহুড। এই সংগঠনটি সালাফিদের তুলনায় ধর্মীয় বিশুদ্ধবাদের চর্চা কম করে। একই সঙ্গে অধার্মিক শাসকদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক বিদ্রোহের বিষয়টিও সমর্থন করে। আর এ কারণেই সংগঠনটিকে ‘সমস্যা সৃষ্টিকারী’ হিসেবে দেখে সৌদি ও পারস্য উপসাগর অঞ্চলের শাসকেরা। ২০১১ সালে আরব বসন্তের পর থেকে এই ভীতি আরও বেড়েছে। তবে আগে ভয়ের জায়গায় ছিল প্রীতি! তখন শাসকেরা ভাবতেন, একমাত্র মুসলিম ব্রাদারহুডকে দিয়েই জাতীয়তাবাদী ও বামপন্থীদের ঠেকানো যাবে। ১৯৯০ সালে ইরাকের সাবেক স্বৈরশাসক সাদ্দাম হোসেন কুয়েতে আগ্রাসন চালানোর পর এই মোহ ভেঙে যায়। কারণ, ওই সময় সাদ্দামকে সমর্থন জানিয়েছিল মুসলিম ব্রাদারহুড। তখনই সংগঠনটির রাজনৈতিক চরিত্র প্রকাশিত হয়ে পড়ে।
মুসলিম ব্রাদারহুড সম্পর্কে লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের গবেষণা কর্মকর্তা কোর্টনি ফ্রিয়ার বলেন, এই সংগঠনটি পারস্য অঞ্চলের অর্থনীতির দিকে দৃষ্টি দিয়েছে। যেখানে ব্রাদারহুডের বিরোধী পক্ষগুলো ধর্মীয় অনুশাসন কঠোরভাবে পালনকেই একমাত্র কাজ বলে মনে করে।
ইকোনমিস্ট বলছে, সংযুক্ত আরব আমিরাতের মূল শাসক মোহাম্মদ বিন জায়েদ মুসলিম ব্রাদারহুডকে ‘বিপদ’ বলে মনে করেন। এখন তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। আরব বিশ্বে ব্রাদারহুডের প্রধান পৃষ্ঠপোষক বলে মনে করা হয় কাতারকে। ঠিক এ কারণেই তিন মিত্রকে সঙ্গে নিয়ে সৌদি আরব কাতারের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদে মদদ দেওয়ার অভিযোগ তুলেছে। দেশটির ওপর আরোপ করা হয়েছে অবরোধ। বিশ্লেষকেরা বলছেন, বিন সালমানের এখন তিন শত্রু—ইরান, ইসলামিক স্টেট ও মুসলিম ব্রাদারহুড।
‘উদারবাদী ইসলাম’ প্রতিষ্ঠার আওয়াজ তুলছে সৌদি আরব। এটি আরব বিশ্বে পরস্পরবিরোধী কিছু ভাবনার জন্ম দিয়েছে। শিয়ারা এখন আশা করছে, এর ফলে ওই অঞ্চলে ওয়াহাবি কট্টরপন্থীদের শিয়াবিরোধী কর্মকাণ্ড কমে আসবে। পুরো মধ্যপ্রাচ্যেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে শিয়ারা। নিজেদের বৈষম্যের শিকার বলে মনে করে তারা। আরব বসন্তের সময় স্বাধীনভাবে জীবননির্বাহের দাবিতে রাস্তায় নেমেছিল শিয়ারা। তখন মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে শিয়াদের সহিংসভাবে দমন করা হয়েছিল। আবার যদি শিয়াদের মধ্যে বিদ্রোহ দেখা দেয়, তবে তা পুরো অঞ্চলেই অস্থিরতা সৃষ্টি করবে। এ ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক বিপর্যয় সবচেয়ে বড় সমস্যা হিসেবে আবির্ভূত হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
আর এই সবকিছুর আশঙ্কা থেকেই ইরানকে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ হিসেবে বিবেচনা করছেন মোহাম্মদ বিন সালমান। দেশ ও দেশের বাইরের সব সমস্যায় ইরানকে দোষী করছেন তিনি। কারণ আরব অঞ্চলে সৌদি প্রভাব টিকিয়ে রাখতে এর বিকল্প নেই। আর দোষ চাপানোর এই খেলায় সৌদি যুবরাজের সঙ্গী যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো।
ধর্মের রাজনৈতিক রূপ খারিজ করার মাধ্যমে নিজের দেশের রাজনীতিতে সর্বেসর্বা হতে চাচ্ছেন যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। ওপরে ওপরে কট্টরপন্থা থেকে সরে আসার কথা বললেও সত্যিকার অর্থেই সৌদি মানসিকতায় পরিবর্তন আসবে কি না, সময়ই তার উত্তর দেবে।
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- বাড়লো সৌদি রিয়াল রেট, দেখেনিন আজকের রেট কত
- ব্রেকিং নিউজ: বাংলাদেশে নেমে এলো শোকের কালো ছায়া, ৪৯৭ জন নি*হ*ত, আ*হ*ত ৭৪৭
- আজ ১৮/১২/২০২৪ তারিখ, দেখেনিন আজকের ১৮ ক্যারেট, ২১ ক্যারেট, ২২ ক্যারেট সোনা ও রুপার দাম
- ৪৩ বলে ৮৩ রান: ২০০ স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিং ঝড় তুলে দলকে জিতে মাঠ ছাড়লেন সাব্বির
- বোর্ড মিটিং শেষ, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির জন্য বাংলাদেশের ১৬ সদস্যের স্কোয়াড ঘোষণা
- ঢাকার অবস্থা ভ*য়া*ব*হ খারাপ
- অবশেষে দুই দিন পর বাড়লো সৌদি রিয়াল রেট, দেখেনিন আজকের রেট কত
- সৌদি রিয়াল রেটের বিশাল লাফ, দেখেনিন আজকের রেট কত
- এইমাত্র পাওয়া: খুলে গেল চোখ মুস্তাফিজকে দলে নেওয়ার জন্য চিঠি পাঠিয়েছে চেন্নাই সুপার কিংস
- ব্রেকিং নিউজ: নি*হত ৮৫৮ জন, আ*হত ১১ হাজার ৫৫১ জন
- ব্রেকিং নিউজ: হেলিকপ্টার দু*র্ঘ*ট*না*য় ভারতের সেনা প্রধান নি*হ*ত
- সৌদি রিয়াল রেটের বিশাল লাফ, দেখেনিন আজকের রেট কত
- ব্রেকিং নিউজ: ব্যাপক উ*ত্তেজ*না, শত শত সে*নাসহ জে*নারেল আ*টক
- ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৩-০তে উড়িয়ে দিয়ে আইসিসি রেটিংয়ে বড় লাফ বাংলাদেশের, দেখেনিন সর্বশেষ তালিকা
- চট্টগ্রামের পরিস্থিতি থমথমে: ব্যাপক সং*ঘ*র্ষ, ১৫ জন আ*হ*ত