ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৬ মাঘ ১৪৩১

শিয়েরারের পর বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ফাউলের শিকার নেইমার

খেলা ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০১৮ জুন ১৮ ১৫:৫১:০০
শিয়েরারের পর বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ফাউলের শিকার নেইমার

পরশু ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে সুইজারল্যান্ডের কোচ ভ্লাদিমির পেতকোভিচ ও ডিফেন্ডার স্টেফান লিচস্টাইনার স্পষ্ট করেই বলেছিলেন, নেইমারকে অকার্যকর রাখার বিশেষ পরিকল্পনা নিয়েই মাঠে নামবেন তারা। তাদের সেই বিশেষ পরিকল্পনাটা যে বল ধরলেই ফাউল করে থামিয়ে দেওয়া, সেটা স্পষ্ট হয়েছে মাঠে। পিএসজি তারকা বল ধরলেই কড়া ট্যাকলে তাকে থামিয়ে দিয়েছেন সুইজারল্যান্ডের খেলোয়াড়েরা। নেইমারকে তার খেলাটা খেলতেই দেয়নি।

প্রতিপক্ষ দলের সেরা খেলোয়াড়কে নিয়ে বিশেষ পরিকল্পনা সব দলের থাকে। কিন্তু ফাউল করে থামিয়ে দেওয়াটা ফুটবলের চেতনা বিরোধী, বিধি বর্হিভূত। কাল রস্তোভে নেইমারকে টার্গেট বানিয়ে সেই কাজটাই করে গেছেন সুইস খেলোয়াড়েরা। কখনো পায়ে আঘাত করেছেন। সেটা না পারলে কখনো জার্সি টেনে ধরে, হাত টেনে ধরে, এমনকি গলা ধরেও মাটিতে শুইয়ে দিয়েছেন ব্রাজিল তারকাকে।

নেইমার টার্গেটে পরিণত করার প্রথম নমুনাটা দেখান মিডফিল্ডার ভ্যালন বেহরামি। ম্যাচের ৪ মিনিটের মাথায়ই নেইমারকে ফাউল করেন বেহরামি। প্রথমে গলা চেপে ধরে নেইমারকে থামানোর চেষ্টা করেন। না পেরে পরে টেনে ধরেন হাত। তাতেও সফল না হলে শেষ পর্যন্ত জার্সি টেনে ধরে ফেলে দেন নেইমারকে। আর এই পুরো ঘটনাটাই ঘটে মেক্সিকান রেফারি সিজার রামোসের সামনে। কিন্তু তিনি পুরো ঘটনাটাই এড়িয়ে যান। কার্ড দেখানো দূরের কথা, ফাউলের বাঁশিও বাজাননি। পরে বেহরামিকে সাবধান করেন মুখে!

এই শুরু। এরপর থেকে ম্যাচের শেষ পর্যন্ত নেইমার বল ধরলেই তাকে ফাউল করে থামিয়ে দিয়েছেন সুইসরা। সব মিলে কতবার তারা নেইমারকে আটকে দিয়েছেন সেই হিসেব নাই-বা নিলেন। রেফারির বাঁশি বাজানোর হিসেবেই নেইমারকে মোট ১০ বার ফাউল করেছেন সুইসরা। সব মিলে ম্যাচে ১৭টি ফাউল করেছেন সুইজারল্যান্ডের খেলোয়াড়েরা। তার ১০ বারই নেইমারকে। এই তথ্য বলছে, ১৯৯৮ বিশ্বকাপে অ্যালান শিয়েরারের পর বিশ্বকাপের এক ম্যাচে সবচেয়ে বেশি ফাউলের শিকার নেইমার।

১৯৯৮ ফ্রান্স বিশ্বকাপের গ্রুপপর্বের এক ম্যাচেও ঠিক এভাবেই ইংল্যান্ডের অ্যালান শিয়েরারকে টার্গেট বানিয়েছিল তিউনিসিয়ার খেলোয়াড়েরা। ম্যাচে তিউনিসিয়ার খেলোয়াড়েরা ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ককে ফাউল করেছিল মোট ১১ বার! কাল রস্তোভে ১৯৯৮ বিশ্বকাপের সেই স্মৃতিই ফিরিয়ে আনেন সুইজারল্যান্ডের খেলোয়াড়েরা।

বিশ্ব সব গণমাধ্যমই একমত, ম্যাচে নেইমারকে যথাযথ সুরক্ষা দেননি রেফারি। সুইজারল্যান্ডের ড্র নয়, ম্যাচের চুম্বুক অংশ হিসেবে প্রতিটা গণমাধ্যমেই ছাপিয়েছে নেইমারকে ফাউল করার ছবি। কোনো কোনো পত্রিকা তো ফেউলের শিকার হয়ে নেইমারের কাতরানোর ছবিগুলোই সিরিজ আকারে ছাপিয়েছে।

ম্যাচে মোট ৩টি হলুদকার্ড পেয়েছেন সুইজারল্যান্ডের খেলোয়াড়েরা। তার ২টিই নেইমারকে ফাউল করে। ফুটবলবোদ্ধাদের গবেষণায় উঠে এসেছে, রেফারি ব্রাজিল তারকাকে যথাযথ সুরক্ষা দিলে সুইসদের কার্ড প্রাপ্তির সংখ্যাটা আরও বাড়ত।

যাই সুইজারল্যান্ডের ম্যাচ শেষে নেইমারকে নিয়ে ব্রাজিলিয়ানদের শঙ্কাটা আরও বেড়ে গেছে। দীর্ঘ তিন মাসেরও বেশি সময় চোটের সঙ্গে যুদ্ধ করে মাত্রই ফিরিয়েছেন। ম্যাচের আগের দিন ব্রাজিল তিতে স্পষ্ট করেই বলেন, নেইমার এখনো শতভাগ ফিট নয়। এই অবস্থায় প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়েরা যদি এভাবে ‘টার্গেট’ বানায়, তাহলে নতুন করে চোট শঙ্কাটা থাকেই। নেইমার নিজেও সেই শঙ্কার কথাই শোনালেন।

ম্যাচ শেষে তাকে টার্গেটে পরিণত করা এবং রেফারিং বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল তার কাছে। ২৬ বছর বয়সী নেইমার দুটি প্রশ্নেরই খেলোয়াড়ী সূলভ উত্তর দিয়েছেন, ‘আমি যতবার চোটে পড়েছি, প্রতিবারই প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়দের ট্যাকলের শিকার হয়ে। সব সময়ই প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়েরা আমাকে টার্গেট বানান। কিন্তু প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়েরা টার্গেট বানালে আমার তো কিছু করার নেই। তা ছাড়া রেফারিংও আমার কাজ নয়। আমার কাজ হলো খেলা। ফাউল ধরাটা রেফারির কাজ। কোনটা ফাউল ধরা উচিত, কোনটা উচিত নয়, রেফারিরাই ভালো বোঝেন।’

অতিমাত্রায় ফাউলের শিকার হয়ে নিজের স্বাভাবিক খেলাটা খেলতে না পারা, দলকে জেতাতে না পারার আক্ষেপ আছে। তবে ম্যাচে একটা প্রতিশ্রুতি ঠিকই রক্ষা করেছেন নেইমার, সেটা হলো মাথা গরম না করা। ম্যাচের আগেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়েরা যতই তিতিবিরক্ত করুণ, মাথা গরম করবেন না।

মেজাজ হারিয়ে উল্টাপাল্টা কিছু করে রেফারিকে লালকার্ড দেওয়ার সুযোগ দেবেন না। কাল রস্তোভে নিজের সেই প্রতশ্রিুতি রেখেছেন নেইমার। ম্যাচের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সুইস খেলোয়াড়েরা জ্বালাতন করলেও একবারের জন্যও মাথা গরম করেননি নেইমার। ঠাণ্ডা মাথার এই ‘কুল’ নেইমারকে দেখে ব্রাজিলিয়ান সমর্থকেরা নিশ্চয় খুশি।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



রে