জর্ডানে গিয়েও পতিতালয় খুললেন ‘বাংলাদেশের সোনিয়া’
কেউ মেশে না, কথা বলে না, কোনো ধরনের লেনদেন করতে চায় না তাদের সঙ্গে। এই অবস্থায় পৃথিবীর আলো-বাতাস তাদের কাছে বিষাক্ত হয়ে উঠেছে। কারণ, তাদের অবিবাহিত মেয়েটি সন্তানসম্ভবা। ৮ মাসের গর্ভবতী। মেয়েটি জর্ডানে গিয়েছিলেন বাবার সংসারের সচ্ছলতা আনতে। কিন্তু সেখানে একটি চক্রের হাতে পড়ে দীর্ঘদিন ধরে যৌন-নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। যার ফলশ্রুতিতে এসেছে তার গর্ভের এই সন্তান।
এদিকে সন্তান প্রসবের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ছে পরিবারের সদস্যদের। এই সন্তান নিয়ে এখন তিনি কোথায় যাবেন, কোন পরিচয়ে বেড়ে ওঠবে সন্তান? এ ভাবনা তাকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। রোববার রাতে রাজধানীর আশকোনায় অবস্থিত ব্র্যাক লার্নি সেন্টারে কথা হয় মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার এ হতদরিদ্র পিতার এই হতভাগা মেয়ের সঙ্গে। কথা বলতে বলতে মাঝে মধ্যেই খেই হারিয়ে ফেলছিলেন এই নারী।
বারবারই অন্যমনস্ক হয়ে পড়ছিলেন। অন্তঃসত্ত্বা জর্ডানফেরত মেয়েটির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তিনি ২০১৪ সালের শুরুর দিকে জর্ডান গিয়েছিলেন গৃহকর্মীর কাজ নিয়ে। সেদেশে পৌঁছানোর পর তাকে একটি বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ দেয়া হয়। মাসিক বেতন নির্ধারিত হয় ১৫ হাজার টাকা। মালিক ভালো হলেও তার ছেলে প্রায়ই তাকে নির্যাতন করতো। মারধর করতো। এই নির্যাতন থেকে রেহাই পেতে একদিন তিনি ওই বাসা থেকে পালিয়ে যান। এরপর আশ্রয় নেন পূর্বপরিচিত মানিকগঞ্জেরই আরেক মেয়ে সোনিয়া খাতুনের কাছে। সে তাকে কাজ দেয়ার কথা বলে নিয়ে যায় তার বাড়িতে।
নির্যাতিত মেয়েটি সেখানে গিয়ে দেখেন পাঁচ তলা বাড়ির পুরোটাই ভাড়া নিয়েছে সোনিয়া। ওই বাসাতেই প্রায় অর্ধশত মেয়ে। তিনি এত মেয়ে একসঙ্গে থাকার কারণ জানতে চান। সোনিয়া তাকে জানায়, এরা যে কাজ করে, তাকেও একই কাজ করতে হবে। তখন সেখান থেকে চলে যেতে চাইলে বাধা দেয়া হয়। ফলে বাধ্য হয়ে সেখানেই থেকে যান তিনি। এরপর চলতে থাকে তাকে দিয়ে অসামাজিক কাজ করানোর চেষ্টা। রাজি না হলে চলে মারধর, নির্যাতন। জোর করে মদ খাওয়ানো হয়। এরপর একের পর এক পুরুষ পাঠানো হয় তার কাছে। বলেন, আমার কাছে প্রতিদিনই ৪-৫ জন করে পুরুষ মানুষ পাঠাতো। কখনো কখনো একসঙ্গে দু’জন করে আসতো। তাদের কাছে অনুনয়-বিনয় করেও রেহাই পাইনি। উল্টো মারধর করতো, জোর করে মদ খাওয়াতো।
এতে করে মাঝে মাঝে বমিও করে দিতাম। কিন্তু নিস্তার পেতাম না। নির্যাতিত মেয়েটি জানান, প্রতি বৃহস্পতিবারে রাতে তাদের ওপর নির্যাতন বেশি হতো। ওইদিন রাতে খদ্দেররা আসতো, সারারাত থাকতো, এরপর শুক্রবার সকালে চলে যেতো। যারা আসতো তারা কারা- জানতে চাইলে মেয়েটি জানান, বিভিন্ন দেশের লোক ছিল এরা। বিশেষ করে ইন্ডিয়ান, ফিলিপাইন ও শ্রীলঙ্কান। দু’একজন বাংলাদেশিও যেতো তাদের কাছে।
ওইসব খদ্দেররা তাকে কোনো টাকা পয়সা দিতো কিনা জানতে চাইলে বলেন, কোনো টাকা-পয়সা দিতো না। সব দিতো সোনিয়ার কাছে। সেই তাদের কাছে লোক পাঠাতো। বাড়িতে কিছু টাকা-পয়সা পাঠানোর জন্য অনুনয় বিনয় করলেও সোনিয়া কোনো টাকা দেয়নি তাকে। বরং উল্টো মারধর করতো। সোনিয়া মদ খেয়ে এসে তার বুট জুতা এবং কোমরের বেল্ট দিয়ে বেধড়ক পেটাতো। তার ইন্ডিয়ান স্বামী নিষেধ করলেও শুনতো না। এভাবে এক বছর পর সেখান থেকে পালিয়ে যাই। পাশেই এক দোকানে একটি বাঙালি মেয়ের সঙ্গে দেখা হয়। সে তার মালিকের বাড়িতে নিয়ে যায়। তাকে অন্য একটি বাড়িতে কাজ দেয়। কিন্তু কিছুদিন পর সোনিয়া তাকে সেখান জোর করে নিয়ে আসে।
ওই বাড়িতে কাজ করার কোনো কাগজপত্র না থাকায় বাড়ির মালিকও তাকে বাধা দিতে পারেনি। এরপর তাকে ফিরিয়ে এনে বেদম মারধর করেছে। মেয়েটির বাবার কাছে ফোন দিয়ে বলেছে, তার মেয়ে কোথা থেকে আকাম করে আসছে। তাই মারধর করেছি। মেয়েটি বলেন, সোনিয়া তার বাড়িতে প্রায়ই ফোন দিয়ে বলতো তাদের মেয়ে পতিতাবৃত্তি করে। এ কথা বলার কারণ, তার পিতা-মাতা যেন তাকে গ্রহণ না করে। কথা বলার একপর্যায়ে মেয়েটি কেঁদে ওঠেন। বলেন, আমার প্রতিদিনই খুব কষ্ট হতো। বাধা দিলে আরো বেশি নির্যাতন চালাতো। এভাবে একসময় তিনি এই কষ্টে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন। এরমধ্যে সোনিয়া একবার দেশে আসে। ওই সময় চেষ্টা করেছিলো পালাতে কিন্তু বাড়ির মালিক তাকে পালাতে দেয়নি। সোনিয়ার গ্রামের বাড়িতে গিয়ে তার বাবা দেখা করে। মেয়েকে ফেরত পাঠাবে বলে কথা দেয়। কিন্তু জর্ডান ফিরে গিয়ে কথা রাখেনি সে। একইভাবে নির্যাতন চালায়। বরং মাত্রা বাড়তে থাকে।
এক সময় অসুস্থ হয়ে পড়লে সোনিয়া তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। এরপর দু’মাস কাটে জেলে। পরে তাকে দেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়। নিপীড়িত মেয়েটি বলেন, গত ১৭ই এপ্রিল তাকে দেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়। তিনি ক্রমেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে আল্ট্রাসনোগ্রাম করালে চিকিৎসক জানান, তিনি ৬ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। এ সময় গর্ভপাত করানোরও উপায় ছিল না বলে জানান তিনি। বলেন, তিনি এখন ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। ঘটনাটি ইতিমধ্যে এলাকায় জানাজানি হয়েছে। সমাজ তাদের একঘরে করে রেখেছে। তার পিতা ভ্যান চালান। তিনি বাজার-ঘাটে যেতে পারেন না। তার ভ্যানেও কেউ ওঠতে চায় না। কথা বলে না। পাড়া-প্রতিবেশীরা তাকে ও তার মাকে নানাভাবে গালমন্দ করে। তাদের বাড়িতে কেউ আসে না। তারা কোনো বাড়িতে যেতে পারেন না।
তিনি বলেন, আব্বাও আমাকে খুব গালমন্দ করে। আমার খুব খারাপ লাগে। কথাটি বলতে বলতে, ডুকরে কেঁদে ওঠেন তিনি। পাড়ার মানুষ আরো খারাপ ভাষায় বলে। সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার পর কী করবেন জানতে চাইলে তিনি অসহায় দৃষ্টিতে তাকান। এরপর বলেন, আমি তো রাখতে পারবো না। তিনি জানান, তার নানী বলে, তোর তো বিয়ে হয়নি, তুই ক্যামনে রাখবি এই সন্তান? বলেন, কাউকে পালতে দেবো। কাকে পালতে দেবেন জানতে চাইলে বলেন, তাও জানি না।
মেয়েটিকে বিশেষভাবে দেখাশুনা করছেন ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম। তাকে আর্থিকসহ নানা ধরনের সহযোগিতাও দিচ্ছে তারা। সোমবার বিদেশফেরত নির্যাতিত যে ২২ জন নারীকর্মীকে জনপ্রতি এক লাখ টাকার চেক ও দু’টি নতুন শাড়ি দেয়া হয় জর্ডানফেরত এই নারীও তাদের মধ্যে একজন।#মানবজমিন
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- বোর্ড মিটিং শেষ, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির জন্য বাংলাদেশের ১৬ সদস্যের স্কোয়াড ঘোষণা
- ব্রেকিং নিউজ: বাংলাদেশে নেমে এলো শোকের কালো ছায়া, ৪৯৭ জন নি*হ*ত, আ*হ*ত ৭৪৭
- আজ ১৮/১২/২০২৪ তারিখ, দেখেনিন আজকের ১৮ ক্যারেট, ২১ ক্যারেট, ২২ ক্যারেট সোনা ও রুপার দাম
- ঢাকার অবস্থা ভ*য়া*ব*হ খারাপ
- ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৩-০তে উড়িয়ে দিয়ে আইসিসি রেটিংয়ে বড় লাফ বাংলাদেশের, দেখেনিন সর্বশেষ তালিকা
- অবশেষে দুই দিন পর বাড়লো সৌদি রিয়াল রেট, দেখেনিন আজকের রেট কত
- সৌদি রিয়াল রেটের বিশাল লাফ, দেখেনিন আজকের রেট কত
- এইমাত্র পাওয়া: খুলে গেল চোখ মুস্তাফিজকে দলে নেওয়ার জন্য চিঠি পাঠিয়েছে চেন্নাই সুপার কিংস
- ব্রেকিং নিউজ: নি*হত ৮৫৮ জন, আ*হত ১১ হাজার ৫৫১ জন
- সৌদি রিয়াল রেটের বিশাল লাফ, দেখেনিন আজকের রেট কত
- ব্রেকিং নিউজ: হেলিকপ্টার দু*র্ঘ*ট*না*য় ভারতের সেনা প্রধান নি*হ*ত
- এইমাত্র পাওয়া: বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে নিষিদ্ধ করলো ভারত
- সব জল্পনা কল্পনার অবসান, ঘোষাণা দিয়ে দিলেন মুস্তাফিজ
- চট্টগ্রামের পরিস্থিতি থমথমে: ব্যাপক সং*ঘ*র্ষ, ১৫ জন আ*হ*ত
- কমলো সৌদি রিয়াল রেট, দেখেনিন আজকের রেট কত