ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১

চীনে ব্যাগভর্তি টাকা ফিরিয়ে দিলেন এক বাংলাদেশি

বিশ্ব ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০১৮ জুন ১২ ১৪:৪৯:১৯
চীনে ব্যাগভর্তি টাকা ফিরিয়ে দিলেন এক বাংলাদেশি

৯ জুন, শনিবার রাতে ওই ব্যাগটি পান ওয়ালিদ। পরদিন তা মালিককে ফিরিয়ে দেন।

ঘটনার পর ওয়ালিদ তার ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দেন। নিচে তার স্ট্যাটাসের লেখাটি তুলে ধরা হলো।

স্ট্যাটাসে ওয়ালিদ লেখেন, ‘বেইহাং ভার্সিটির ভাই-বোনদের সাথে আড্ডা দিতে দিতে বেশ রাত হওয়ায় ট্যাক্সি পেতে বেশ ঝামেলাই হলো। কোনোমতে এক বড় ভাই ট্যাক্সি ঠিক করে দিলে তাতে ওঠার সাথে সাথে বোধ করলাম আমি একটা ব্যাগের উপর বসেছি। ব্যাগটা হাতে নিতেই বুঝলাম আমার আগের জন ব্যাগটা ফেলে গিয়েছেন। পরে ব্যাগটা খুললাম যে, তার ভেতর কোনো ফোন নম্বর পাওয়া যায় কি না। খুলে দেখলাম ব্যাগভর্তি টাকা। আর আছে ভদ্রলোকের বাড়ির দলিল, এটিএম কার্ড ৩-৪টা, ন্যাশানাল আইডি, আরও কয়েকটা কার্ড।

আফসোস, দলিলটা ছাড়া সবকিছু মান্দারিন ভাষায় লেখা। ট্যাক্সিওয়ালাকে খুব বেশি সুবিধার মনে না হওয়াই চুপ করে থাকলাম এটা ভেবে যে, ভদ্রলোক যদি App থেকে ট্যাক্সি ভাড়া করেন তাহলে আমি থাকতে থাকতেই ট্যাক্সিওয়ালাকে ফোন দেবেন। আর যদি তা না করেন, তাহলে আমি পুলিশ স্টেশনে যাবো। কিন্তু, রাত অনেক বেশি হওয়ায় আর ভাষাগত জটিলতার কারণে তা এতোটা সহজ হবে না। ভদ্রলোক ড্রাইভারকে ফোন দিলেন না আমি গাড়িতে থাকতে। অর্থাৎ, ব্যাগটার ব্যবস্থা আমাকেই করতে হবে।

প্রথমে বেইজিং-এর পরিচিত কয়েক ভাইকে ফোন দিলাম। তারা পরামর্শ দিলেন, ওটা ভদ্রলোককে নিজেই পৌঁছে দেবার। আমি ওটা সাথে নিয়ে তাই রুমে চলে এলাম। সকালবেলা আর্থারকে (আমাদের গাইড) সব খুলে বলে ভদ্রলোকের কার্ড দিয়ে বললাম পুলিশ হেল্পলাইনে কল দিয়ে ভদ্রলোকের ফোন নম্বর খুঁজে বের করতে। কিছুক্ষণ পর কোনো এক ভদ্রলোক আমার নম্বরে ফোন দিলেন।

ভদ্রলোক ইংরেজি বোঝেন না, আর আমি চায়নিজ। কিছুক্ষণ পর গুগল ট্রান্সলেট ব্যবহার করে তাকে টেক্সট করলাম, আমাকে টেক্সট করবার জন্য। অবশেষে বুঝতে পারলাম, ব্যাগটার মালিক ওই ভদ্রলোকই। আমি তাকে ঠিকানা পাঠিয়ে আসতে বললাম। ভদ্রলোক এলেনও। আমার ক্লাস থাকায় ভদ্রলোক দেড় ঘণ্টা বৃষ্টির ভেতর দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে থাকলেন। ক্লাস শেষ করে আমি পৌঁছানোমাত্র ভদ্রলোক খুশিতে জড়িয়ে ধরলেন আমাকে। আমি ব্যাগটা তার হাতে দেওয়া মাত্র ভদ্রলোক টাকাগুলো বের করে আমার হাতে দিলেন।

আর্থার জানালো, তার কাছে টাকাগুলো মুখ্য না, মুখ্য তার দলিল, কার্ড—এগুলো। তাই, টাকাগুলো তোমাকে কৃতজ্ঞতাস্বরূপ দিতে চাচ্ছেন।

ভদ্রলোক আর্থারকে বললেন, এটা তৃতীয়বারের মতো তিনি ব্যাগ হারাচ্ছেন। প্রতিবার টাকার পরিমাণ কম থাকলেও তিনি তা ফেরত পাননি। এবার এতো টাকা আর এতো গুরুত্বপূর্ণ জিনিস থাকা সত্ত্বেও তিনি তা ফেরত পেয়ে আনন্দে আত্মহারা। টাকা তার দরকার নেই, দরকার অন্যান্য জিনিসপত্র।

আমি আর্থারকে বললাম, ‘তুমি তাকে বলো, আমরা বাংলাদেশিরা কিছু পাবার আশায় কারও উপকার করি না।’

ওয়ালিদ তার স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘হয়তো এতো RMB (চায়নিজ ১ RMB = ১৩.৭০ টাকা)-তে আমার কয়েক লাখ টাকা হতো। কিন্তু, বাংলাদেশি হিসেবে তার কাছে নিজেকে ছোট করা হতো।

লোকটা যাবার সময় আর্থারকে বলে গেলেন, ‘সবাই যদি বাংলাদেশিদের মতো হতো, তাহলে চায়না আজ অনেক উন্নত হয়ে যেত।’

সবশেষে ওয়ালিদ লেখেন, ‘এবারের ট্যুরের সবচেয়ে বড় পাওনা ভদ্রলোকের এই মন্তব্যটাই।’

বাংলাদেশ সরকারের এই কর্মকর্তা পড়াশোনা করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগে। তার গ্রামের বাড়ি যশোরে।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ



রে