মোস্তাফিজের সাথে নেই তাসকিনও, পুরনোদের নিয়েই পেস ডিপার্টমেন্ট

রুবেল হোসেন, আবু জাইদ রাহি, আবু হায়দার রনি আর আবুল হাসান রাজুরা আফগানদের থামিয়ে রাখতে পারেননি। সেটাও ব্যর্থতার অন্যতম কারণ। এমনিতেই মাশরাফি নেই। তারওপর যে দুজন পেসারের ওপর নির্ভর করে বাংলাদেশ, সেই মোস্তাফিজ আর তাসকিন-দুজনই ইনজুরির কারণে ছিলেন না দেরাদুনে।

আইপিএলের শেষ ম্যাচে পায়ের অগ্রভাগে চোট পেয়ে দেশে ফেরা কাটার মাস্টার দেরাদুন যাবার আগের রাতে অসহ্য ব্যথায় কাতর হয়ে স্বেচ্ছায় সরে দাঁড়ান। আর পিঠের ব্যথা সম্পূর্ন না সারায় তাসকিনকেও বিবেচনায় আনা হয়নি। তিন ফ্রন্টলাইন পেসার মাশরাফি, তাসকিন আর মোস্তাফিজকে ছাড়া আফগানদের সাথে বাংলাদেশ খেলেছে সামর্থ্যের অর্ধেক পেস শক্তি নিয়ে। ভাবা হচ্ছিলো, দুজনই ইনজুরি মুক্ত হয়ে হয়তো ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে ফিরবেন।

কিন্তু না। মোস্তাফিজ তো ননই, তাসকিনকেও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে দেখা যাবে না। তাদের দুজনই ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে দলের বাইরে থাকছেন।

মোস্তাফিজ নেই। তা জানা হয়ে গেছে কাল রাতেই। আজ সকালে প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু জাগো নিউজকে জানালেন, তাসকিনেরও টেস্ট খেলার মত অবস্থা নেই। মিনহাজুল আবেদিন জানান, চিকিৎকরা তাদের (নির্বাচকদের ) বলেছেন, তাসকিনের পাঁচ দিনের টেস্ট খেলা ও লম্বা স্পেলে বোলিং করার মত ফিটনেস আসেনি এখনো। বড়জোর তিন-চার ওভার বোলিং করতে পারবেন। তারপর পুরো ম্যাচে আর বোলিং করতে পারবেন, এমন নিশ্চয়তাও নাকি নেই।

তাই তাসকিনের বিষয়ে বাড়তি ঝুঁকি নিতে নারাজ নির্বাচক ও টিম ম্যানেজমেন্ট। সে কারণেই টেস্ট দলের বাইরে থাকছেন ডানহাতি এই পেসার। আর কাটার মাস্টারের বিষয়ে প্রধান নির্বাচকের ব্যাখ্যা, মোস্তাফিজের প্রথম টেস্টের আগে ম্যাচ ফিটনেস ফিরে পাবার কোনই সম্ভাবনা নেই। তাই তাকেও ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে প্রথম টেস্টে নেয়া সম্ভব হচ্ছে না।

দেরাদুনে আফগানদের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি টোয়েন্টি সিরিজে রুবেল হোসেনের সাথে মোস্তাফিজ Ñ তাসকিনের বিকল্প হিসেবে খেলানো হয়েছিল আবু জাইদ রাহি ও আবু হায়দার রনি এবং আবুল হাসান রাজুকে। কিন্তু তিন জনের কেউই সে অর্থে নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি। রাজু রিতিমত ব্যর্থ। আবু হায়দার রনিও সুবিধা করতে পারেননি। আবু জাইদ রাহিও মোটামুটি উৎরে গেছেন।

এখন তাই প্রশ্ন উঠেছে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেও কি রুবেলের সাথে ঐ তিন পেসারই দলে থাকবেন? নাকি নতুন বা তরুণদের মধ্য থেকে কাউকে বেছে নেয়া হবে? এবারের প্রিমিয়ার লিগে নজর কাড়া দুই সম্ভাবনাময় তরুণ ইয়াসিন আরাফাত ও কাজী অনিকের কাউকে কি সুযোগ দেয়া হবে?

এমন প্রশ্নর জবাব খুঁজতে গিয়ে জানা গেল, তাদের দুজনার দিকেই চোখ আছে নির্বাচকদের। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মত কঠিন শক্তির বিপক্ষে অনভ্যস্ত ও সম্পূর্ন নতুন পরিবেশে তাদের অভিষেকটাকে যুক্তিযুক্ত মনে করছেন না নির্বাচকরা। তবে দুজনার বিষয়েই প্রধান নির্বাচকের দৃষ্টি ভঙ্গি বেশ ইতিবাচক।

মিনহাজুল আবেদিন নান্নুর কথা শুনে মনে হলো, তারা ইয়াসিন আরাফাত আর কাজী অনিককে ভবিষ্যতে সুযোগ দেয়ার কথা ভাবছেন বেশ জোরে সোরে। তার কথায় পরিষ্কার ইঙ্গিত, বাঁহাতি ফাস্ট বোলার কাজী অনিককে সীমিত ওভারে; বিশেষ করে ৫০ ওভারের ফরম্যাটে দলে নেয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। আর ইয়াসিন আরাফাতকে দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেটে খেলানোর চিন্তা রয়েছে। তবে সম্ভবত সেটা ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে নয়।

তাহলে কাদের নিয়ে সাজানো হবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্টের পেস বোলিং ডিপার্টমেন্ট? দল ঘোষণার আগে এই বিষয়ে নির্বাচকরা গোপনীয়তা অবলম্বন করছেন। তবে ভিতরের খবর, ক্যারবীয়দের সাথে টেস্টে রুবেল হোসেনের সাথে আবার দলে ফিরতে যাচ্ছেন শফিউল ইসলাম ও কামরুল ইসলাম রাব্বি। তাদের সাথে আবু জাইদ রাহির থাকার সম্ভাবনাও প্রচুর।

এদিকে স্পিনার কোটায় সাকিব আল হাসানের সাথে আরেক বাঁহাতি তাইজুল ইসলাম ও অফস্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজের দলভুক্তিও মোটামুটি নিশ্চিত। এর বাইরে ওপেনার তামিম, অধিনায়ক সাকিব, মুশফিক, মুমিনুল, মাহমুদউল্লাহ, ইমরুল কায়েস ও লিটন দাস প্রায় অটোমেটিক চয়েজ। এছাড়া সম্ভাবনাময় তরুণ নাজমুল হোসেন শান্তর দলে থাকাও প্রায় শতভাগ নিশ্চিত।

বাকি একজন কে? তা নিয়েই খানিক সংশয়। সাব্বির রহমান আর মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের কেউ একজনই হয়ত হবেন। টানা অফ ফর্মে সম্ভবত বাদ পড়তে যাচ্ছেন সৌম্য সরকার। তার বদলে ব্যাটসম্যান কোটায় মোসাদ্দেক-সাব্বিরের সাথে নুরুল হাসান সোহানের নামও আছে।

সব কিছু ঠিক থাকলে আজ সন্ধ্যা নাগাদ দল ঘোষণার কথা। দুপুরে ১৫ জনের খেলোয়াড় তালিকা জমা পড়বে বোর্ডে। পড়ন্ত বিকেলে হোটেল সোনারগাঁ প্যান প্যাসিফিকে বোর্ড পরিচালক পর্ষদের সভায় তা অনুমোদনের পরই বাকি ঘোষণা।

দেখা যাক, মোসাদ্দেক-সাবির ও সোহানের মধ্য থেকে শেষ পর্যন্ত কে সুযোগ পান!

গুগল নিউজে ফলো করুন