ঢাকা, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

সব সম্পদ দান করে দিলেন তিনি

বিশ্ব ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০১৮ জুন ১০ ২০:৫৬:৪০
সব সম্পদ দান করে দিলেন তিনি

ইউটিউবার এডাম সালেহকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে দেখা যায়, আলী বানাতের বাসার একটি কক্ষে সাজানো দামি ঘড়ি, ব্রেসলেট, জামা-কাপড়, জুতাসহ আরো নানা জিনিস। এর মধ্যে ব্রেসলেটটির দাম ছিল ৬০ হাজার ডলার, ব্যক্তিগত ব্যবহারে থাকা অনেক গাড়ির মধ্যে একটির (ফেরারি স্পাইডার) মূল্য ছয় লাখ ডলার।

সেই বিলাসী জীবনে আকস্মিক হানা দিল মরণব্যাধি ক্যান্সার। একদিন চা খেতে গিয়ে মুখে ফোসকা ফুটল। আলী বানাত ডাক্তার দেখালেন। সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ডাক্তার জানিয়ে দিলেন—তাঁর ক্যান্সার হয়েছে, চতুর্থ স্তরে আছে, ফলে চিকিৎসায় আর ভালো হওয়ার নয়। ডাক্তার বললেন, আপনার আয়ু আছে আর মাত্র সাত মাস। ২০১৫ সালের জুলাইতে নিরাময় অযোগ্য টেস্টিকিউলার ক্যান্সার ধরা পড়ার পরই তাঁর জীবনের মোড় ঘুরে যায়।

মুহূর্তেই যেন আকাশ ভেঙে পড়ল আলী বানাতের মাথায়। ভেবে পাচ্ছিলেন না কী করবেন। তারপর ভাবলেন এবং উপলব্ধি করলেন গাড়ি-বাড়িসহ এ অঢেল সম্পদ তাঁর কাছে অর্থহীন। তাই সিদ্ধান্ত নিলেন সব দান করে মানুষের জন্য কাজ করবেন। তিনি বলেন, ‘আমার টেস্টিকিউলার ক্যান্সার ধরা পড়ল। প্রথমে হতবিহ্বল হলেও পরে বুঝতে পারলাম ক্যান্সারটি ছিল আমার জন্য স্রষ্টার কাছ থেকে একটি উপহার। যেভাবে জীবন চলছে আর সেভাবে নয়, যত দিন বেঁচে থাকি মানুষের জন্য কিছু করতে হবে। ইউটিউভে ছড়িয়ে পড়া তাঁর ভাইরাল ভিডিও ‘গিফটেড উইথ ক্যান্সার’ নাড়া দিয়েছে সব মানুষকে।

এরপর তিনি সংগ্রহে থাকা জিনিসপত্র এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দুটি বিক্রি করে দেন। বলেন, ‘আমি আমার দামি গাড়ি, বাড়ি, ঘড়ি এমনকি জামা-কাপড় এ সব কিছু থেকে মুক্ত হতে চেয়েছি। তাই সব বিদেশে নিয়ে গিয়ে অনেক মানুষের মধ্যে বিতরণ করে দিই।’ ২০১৫ সালের অক্টোবরে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন চ্যারিটি সংগঠন—‘মুসলিমস অ্যারাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড (এমএটিডাব্লিউ)’। আফ্রিকার টোগোতে গিয়ে দরিদ্র মানুষ ও শিশুদের জন্য কাজ শরু করেন। তিনি বলেন, যখন আপনি বুঝতে পারবেন আপনি অসুস্থ কিংবা আর বেশি দিন বাঁচবেন না। তখন সব ছেড়ে দিয়ে যে কাজটি করতে চাইবেন, মূলত সেই কাজটিই আমাদের করা উচিত এবং এ জন্যই আমরা প্রতিদিন বেঁচে থাকি।

বানাতকে তাঁর ডাক্তার বলেছিলেন তিনি মাত্র সাত মাস বেঁচে থাকবেন। কিন্তু আল্লাহর দয়ায় তিনি তিন বছর বাড়তি জীবন পেয়েছিলেন। আর এ বাড়তি জীবনের প্রতিটি দিনই কাজ করেছেন মানুষের জন্য। আফ্রিকার টোগো, ঘানা এবং বুরকিনা ফাসোতে হাজার হাজার মানুষের মধ্যে নিজের সম্পদ বণ্টন করেছেন।

এমএটিডাব্লিউকে আরো কার্যকর করতে তিনি আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে ঘুরেছেন, স্পন্সর খুঁজে বেড়িয়েছেন। চেষ্টা করেছেন দানের সব অর্থ যেন দরিদ্র মানুষের কাছে পৌঁছে, অন্য কোনোভাবে এ অর্থের অপচয় না হয়। এমএটিডাব্লিউর উদ্যোগে একটি গ্রাম প্রতিষ্ঠা করেন। যেখানে ২০০ বিধবা নারীর জন্য আবাসনের ব্যবস্থা হয়, একটি মসজিদ, একটি স্কুল, একটি হাসপাতাল এবং ৬০০ এতিম শিশুর জন্য থাকার ব্যবস্থা। প্রতিষ্ঠা করেন বেশ কিছু ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, যাতে স্থানীয় মানুষ এ থেকে উপকৃত হতে পারে। মাত্র কিছুদিন আগে ২০১৮ সালের ২৯ মে আলী বানাত পরপারে পাড়ি জমান। তাঁর জন্ম ১৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৮২। ডেইলি টাইমস, এসবিএস ডটকম।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ



রে