ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১

ব্যাপকহারে আত্মহত্যা করছে আফগান নারীরা

বিশ্ব ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০১৮ জুন ০৮ ২০:২৫:২৬
ব্যাপকহারে আত্মহত্যা করছে আফগান নারীরা

শুক্রবার এক প্রতিবেদনে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসির আফগান বিভাগ এতথ্য জানিয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, আফগানিস্তানের হেরাত প্রদেশের স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের হিসেবে শুধু ২০১৭ সালেই ১,৮০০ মানুষ সেখানে আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়েছেন। এর মধ্যে ১,৪০০ জনই নারী।সেখানে আত্মহত্যায় মৃত্যু হয়েছে ৩৫ জনের। এই সংখ্যা তার আগের বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।

গত ২০১৬ সালে এক হাজারের মতো মানুষের আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল বলে জানান স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।

আফগান ইন্ডিপেনডেন্ট হিউম্যান রাইটস কমিশন জানিয়েছে, শুধু হেরাত প্রদেশের নয়, পুরো আফগানিস্তান জুড়েই এমন প্রবণতা লক্ষণীয়।

তারা বলছে, দেশটিতে বছরে তিন হাজারের মতো মানুষ আত্মহত্যার চেষ্টা করে যাদের ৮০ শতাংশই নারী।

তবে এসব আত্মহত্যার চেষ্টার অর্ধেক ঘটনাই ঘটছে হেরাতে। এই সংখ্যা বেশিও হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আফগানিস্তানের মতো রক্ষণশীল সমাজে অনেক ঘটনা হয়ত পুলিশ বা হাসপাতাল পর্যন্ত গড়ায় না।

আফগান ইন্ডিপেনডেন্ট হিউম্যান রাইটস কমিশনের হাওয়া আলম নুরিস্তানি বলেন, ‘জোর করে বিয়ে দেয়া, পারিবারিক নির্যাতন, মানসিক সমস্যাসহ বহুবিধ কারণে আফগান নারীরা মারাত্মক চাপে রয়েছে। হেরাত হল বড় প্রদেশ এবং একটু সেকেলে।’

আফগানিস্তানে মানসিক রোগ সম্পর্কে সঠিক কোন পরিসংখ্যান নেই। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, দেশটিতে ১০ লাখের বেশি মানুষ বিষণ্ণতায় ভোগে। আর ১২ লাখ মানুষ উদ্বেগজনিত ব্যাধিতে ভুগছে।

আফগানিস্তানে ৪০ বছর ধরে সশস্ত্র সংঘাত চলছে। মানসিক ব্যাধি সেখানে গুরুত্ব পায় না। তাই সেখানে এই সম্পর্কিত প্রকৃত সংখ্যা বের করা মুশকিল। সেখানে নারীর প্রতি সহিংসতার মাত্রা এমনিতেই ভয়াবহ, হয়তো সেটিও একটি কারণ।

জাতিসংঘের হিসাবে, অন্তত ৮৭ শতাংশ আফগান নারী শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন এবং যৌন সহিংসতার শিকার।

তবে জোর করে বিয়ে দেয়াকে আত্মহত্যার একটি বড় কারণ মনে করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে অসুখী বিয়ে থেকে হয়ত মুক্তি পেতে চেয়েছেন এই নারীরা।

নুরিস্তানি বলছেন, ‘নারীদের আত্মহত্যার মুল কারণই হল নির্যাতন। যেমন ধরুন জোর করে বিয়ে দেয়া। তার কোন মতামতকে গুরুত্ব না দেয়া। তার স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয়া।’

জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ বলছে, আফগানিস্তানের এক তৃতীয়াংশ মেয়েরই ১৮ বছরের আগে বিয়ে হয়ে যায়। আর এসব কারণের পাশাপাশি দারিদ্র্য একটি কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।

আফগানিস্তানে ইঁদুর মারা বিষের সহজলভ্যতাও সম্ভবত নারীদের আত্মহত্যা চেষ্টার একটি বড় কারণ। হেরাতের চিকিৎসকেরা বিবিসিকে জানিয়েছেন, গত এক বছরে যারা আত্মহত্যার চেষ্টায় সফল হয়েছেন, তাদের বেশিরভাগই পদ্ধতি হিসেবে ব্যবহার করেছেন নিজেকে গুলি করা, কোনো ওষুধের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার বা ওভারডোজিং এবং ইঁদুর মারা বিষ খেয়ে।

আগে নিজের গায়ে তেল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়া ছিল আত্মহত্যার প্রধান পদ্ধতি।

হেরাতের প্রধান হাসপাতালের মুখপাত্র মোহাম্মদ রফিক সিরাজি বলছেন, ‘গত কয়েক বছরে পশু চিকিৎসকদের ব্যবহৃত ওষুধ বা ইঁদুর মারা বিষ অনেক বেশি সাধারণ মানুষজনের নাগালের মধ্যে চলে এসেছে। যেকোনো দোকানে গেলেই পাওয়া যাচ্ছে।’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তার ২০১৭ সালের স্বাস্থ্য গবেষণা কীটনাশক বা এমন বিষ দিয়ে আত্মহত্যার প্রবণতা বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করেছে। ভারতেও দরিদ্রদের মধ্যে আত্মহত্যায় এমন বিষ ব্যবহারের প্রবণতা রয়েছে।

আত্মহত্যা প্রবণতা ঠেকাতে আফগানিস্তানে পুরো দেশব্যাপী ব্যবস্থা না নিলে তা রোধ করা যাবে না বলে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন।

ডা. নাবিল ফাকিরিয়ার বলছেন, ‘দেশব্যাপী একটি পরিকল্পনা নিতে হবে এবং আত্মহত্যার কারণগুলোকে স্বীকৃতি দিতে হবে।’

কাবুলে আফগান স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, এরকম একটি জাতীয় পরিকল্পনা তারা হাতে নিয়েছেন।

দেশটির সহকারী স্বাস্থ্যমন্ত্রী ফিদা মোহাম্মদ পাইকান স্বীকার করেছেন, আত্মহত্যা দেশটির জন্য একটি সমস্যা। তিনি বলছেন, ‘আপাতত তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হচ্ছে। সেটির উপর ভিত্তি করে কর্মপন্থা ঠিক করা হবে।’

আর হাওয়া আলম নুরিস্তানি বলছেন, কোথায় গেলে সাহায্য পাওয়া যাবে তা মানুষকে আরো বেশি করে জানাতে হবে।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ



রে