ঢাকা, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

২০১৮ বিশ্বকাপ মাতাতে পারেন যে তরুণ প্রতিভারা

খেলা ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০১৮ জুন ০৪ ২৩:০৬:১২
২০১৮ বিশ্বকাপ মাতাতে পারেন যে তরুণ প্রতিভারা

আসন্ন রাশিয়া বিশ্বকাপও তার ব্যাতিক্রম হবে না। চোখ রাখতে পারেন এমন কিছু উঠতি প্রতিভার সাথে যারা বিশ্বকাপে রাখতে পারেন নিজেদের সামর্থ্যের ছাপ। চলুন দেখে নিই এমন কিছু তরুণ তারকাকে-

গ্যাব্রিয়েল জেসুসঃ পাকা গোলশিকারী বলতে যা বোঝায় গ্যাব্রিয়েল জেসুস যেন ঠিক তাই। তা না হলে মাত্র ২১ বছর বয়সেই বিশ্বকাপের মত মঞ্চে ব্রাজিলের মত দলের নাম্বার নাইন হবেন কেন? ২০১৭ সালের জানুয়ারীতে ইংলিশ ক্লাব ম্যানচেস্টার সিটিতে যোগদান করা জেসুস গত দুই মৌসুমে সিটিজেনদের হয়ে রীতিমত গোলের ফোয়ারা ছুটিয়েছেন। ক্লাবের পাশাপাশি জাতীয় দল ব্রাজিলের জার্সিতেও একই রকম বিধ্বংসী জেসুস, যার প্রমাণ সেলেসাওদের হয়ে ১৫ ম্যাচ খেলে ইতিমধ্যেই করে ফেলেছেন ৯ গোল। জেসুসের মূল অস্ত্র নিঁখুত ফিনিশিং। মূলত সেন্ট্রাল ফরোয়ার্ড হলেও আদতে জেসুস একজন ভার্সেটাইল অ্যাটাকার, খেলতে পারেন উইঙ্গার, ফলস নাইন এমনকি অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার হিসেবেও।

ওসমান ডেম্বেলেঃ সদ্যই বয়স মাত্র ২০ পেরোলেও গত বছরেই বরুশিয়া ডর্টমুন্ড থেকে ১৪৫ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে বার্সেলাোনায় পাড়ি জমান ডেম্বেলে। এর মাধ্যমে কাতালান ক্লাবটির ইতিহাসে সবচেয়ে দামী এবং ফুটবল ইতিহাসের দ্বিতীয় দামী খেলোয়াড় হন এই ফরাসি তরুণ। যদিও হাঁটুর ইনজুরির কারণে প্রায় মাস চারেক মাঠের বাইরে থাকতে হয়েছিল তাকে। তবে ইনজুরি থেকে ফিরে যতটুক সুযোগ পেয়েছেন তাতে ২৪ ম্যাচ খেলে ৪ গোল আর ৯ এসিস্ট করেছেন ডেম্বেলে। তাছাড়া বরুশিয়ার হয়েও গোল-এসিস্টের মাধ্যমে ৩২টি গোলের অংশ ছিলেন ডেম্বেলে। মূল পজিশন রাইট উইং হলেও খেলতে পারেন লেফট উইঙ্গার হিসেবেও। ড্রিবলিং এবং থ্রু পাসে দক্ষতার পাশাপাশি গতিশীল হবার কারণে কাউন্টার অ্যাটাকে ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারেন ডেম্বেলে। ২০১৩ থেকে ফ্রান্স জাতীয় দলের বিভিন্ন বয়সভিত্তিক দলে খেলার পর ২০১৬ সালে মূল দলে অভিষিক্ত ডেম্বেলে ইতিমধ্যেই হয়ে উঠেছেন দলের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

কিলিয়ান এমবাপ্পেঃ তারুণ্য নির্ভর ফ্রান্স দলের আরেক গুরুত্বপূর্ণ সদস্য কিলিয়ান এমবাপ্পে। ২০১৬-১৭ মৌসুমে ২৩ গোল আর ১১ এসিস্টের মাধ্যমে মোনাকোকে লিগ ওয়ানের শিরোপা জিতিয়ে আর চ্যাম্পিয়ন্স লিগে সেমিফাইনালে নিয়ে গিয়েই আলোচনায় আসেন ক্যামেরুনিয়ান বংশোদ্ভূত ফরোয়ার্ড। আর্সেন ওয়েঙ্গারের মতে কিলিয়ান এমবাপ্পে ফুটবলের এক অসামান্য প্রতিভা। গত সিজনেই এই প্রতিভাকে দলে টেনেছে প্যারিস সেইন্ট জার্মেইন। মোনাকোর ফর্মটা এমবাপ্পে টেনে নিয়ে গেছেন পিএসজিতেও, যার প্রমাণ ৪৬ ম্যাচ খেলে ২১ গোল আর ১৬ এসিস্ট। গত বছরেই ফ্রান্সের হয়ে অভিষিক্ত হবার পর ১৩ ম্যাচ খেলে ৩টি গোল করেছেন। ফিনিশিং, ড্রিবলিং, গতি সবমিলিয়ে এমবাপ্পে যেন আক্রমণভাগের এক পারফেক্ট প্যাকেজ। দলের প্রয়োজনে তাই আক্রমণভাগের সব জায়গায়ই খেলতে দক্ষ এই ১৯ বছর বয়সী।

টিমো ওয়ের্নেরঃ জার্মানির কিংবদন্তি স্ট্রাইকার মিরোস্লাভ ক্লোসার উত্তরসূরী বলা হয়ে থাকে টিমো ওয়ের্নারকে। ২০১৭ সালের মার্চে জার্মানির জার্সিতে অভিষিক্ত ওয়ের্নার ১২ ম্যাচে করে ফেলেছেন ৭ গোল। গত বছর রাশিয়ায় কনফেডারেশন্স কাপে যৌথভাবে সর্বোচ্চ গোলদাতা ছিলেন এই জার্মান। ২০১৬-১৭ সিজনে লেইপজিগ আর ২০১৭-১৮ সিজনে ভিএফবি স্টুটগার্টের হয়ে যথাক্রমে ২১ গোল ও ১৮ গোল করেছিলেন ওয়ের্নার। হেডিং এর পাশাপাশি প্লেসিং এ দক্ষ ওয়ের্নারই ছিলেন গত দুই মৌসুমে বুন্দেসলিগায় জার্মানদের মধ্যে সর্বোচ্চ স্কোরার। ২২ বছর বয়সী এই তরুণই তাই সম্ভবত হতে যাচ্ছেন আসন্ন বিশ্বকাপে জার্মানির প্রধান স্ট্রাইকার।

মার্কো অ্যাসেন্সিওঃ খুব বেশিদিন হয়নি স্পেনের মূল দলে অভিষিক্ত হয়েছেন। কিন্তু এই সময়ের মধ্যেই নিজেকে স্পেন দলের অপরিহার্য এক অংশ হিসেবে গড়ে তুলেছেন অ্যাসেন্সিও। ক্লাব ফুটবলে রিয়াল মাদ্রিদের সিনিয়র দলের হয়ে প্রথম দুটি মৌসুমই কেটেছে স্বপ্নের মত; দলীয় সাফল্য হিসেবে ১টি লা লিগা আর ২টি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের পাশাপাশি যথাক্রমে করেছেন ১০ ও ১১টি করে গোল, যার অধিকাংশই বদলী হিসেবে নেমে। স্পেনের হয়ে ১০টি ম্যাচ খেলে ফেলার পর যদিও এখনো গোলের দেখা পাননি, তবে অবদান রেখেছেন ৩টি গোলে। মূল পজিশন লেফট উইং হলেও একাধারে রাইট উইং এবং মিডফিল্ডেও খেলতে পারেন মার্কো। ২২ বছর বয়সী এই তরুণের প্রধান অস্ত্র তার গতি, নিঁখুত দুরপাল্লার শট এবং যেকোন অ্যাটাকিং পজিশনে মানিয়ে নেয়ার ক্ষমতা। স্পেনের বিশ্বকাপ মিশনে তাই বড় একটি ট্রাম্পকার্ড হতে পারেন এই অ্যাসেন্সিও।

আন্দ্রে সিলভাঃ পর্তুগাল দলে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোই সবেধন নীলমণি। একটা সময়ে স্কোরিং এর ভার কেবল তার ওপরই বর্তাতো। কারণ দলে একজন অল্টারনেট গোল স্কোরারের অভাব। সোনালি প্রজন্মের বিদায়ের পর পলেতোর মত একজন স্কোরিং স্ট্রাইকারের অভাবে পর্তুগাল ভুগেছে দীর্ঘদিন। তবে আন্দ্রে সিলভার হাত ধরে সেই অভাবটা এতদিনে ঘুচে এলো বলে। বাছাইপর্বে একটি হ্যাটট্রিকসহ ৯ গোল করেছেন এই এসি মিলান ফরোয়ার্ড। সব মিলিয়ে পর্তুগিজদের জার্সিতে ২১ ম্যাচে করেছেন ১২ গোল। সম্প্রতি তিউনিসিয়ার বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচে স্কোর করার মাধ্যমে দেশের ইতিহাসের ১০০০তম গোল করেছেন এই ২২ বছর বয়সী স্ট্রাইকার। নিজের ফর্মটা বিশ্বকাপে বজায় রাখতে পারলে তার নিজের জন্যে যেমন মঙ্গল তেমনি তার দল পর্তুগালেরও সম্ভাবনা যাবে বেড়ে।

মার্কাস রাশফোর্ডঃ ইংল্যান্ডের বর্তমান দলে যে কয়জন তরুণ প্রতিভা আছে তাদের মধ্যে সবচেয়ে সম্ভাবনাময় হিসেবে ধরা হয় রাশফোর্ডকে। ইংলিশ ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মূল দলের হয়ে অভিষেকের পর থেকে ৩ মৌসুম মিলিয়ে রেড ডেভিলদের হয়ে ৩২ গোল করার পাশাপাশি অবদান রেখেছেন ১৭টি গোলেও। একই বছর ইংল্যান্ড জাতীয় দলে অভিষেকের খেলেছেন ১৭টি ম্যাচ, যাতে করেছেন ২ গোল। গতি আর ড্রিবলিং তার মূল অস্ত্র। স্ট্রাইকারের পাশাপাশি একাধারে উইঙ্গার আর ফলস নাইন হিসেবেও খেলতে পারেন। প্রায় দুই মৌসুম বেঞ্চ গরমের পর গত মৌসুমে নিজ যোগ্যতায় ম্যানইউর একাদশে নিয়মিত হয়েছে। জাতীয় দলে এখনো ততটা নিয়মিত না হলেও বদলী হিসেবে নেমে যেকোন সময়েই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারেন ২১ বছর বয়সী এই ইংলিশ উইঙ্গার।

ক্রিশ্চিয়ান প্যাভনঃ আর্জেন্টিনার ঘরোয়া লিগে বর্তমান সময়ের সেরা এক উঠতি প্রতিভা প্যাভন। মূল পজিশন রাইট উইং, তবে সাপোর্টিভ স্ট্রাইকার বা ফলস নাইনের ভূমিকায়ও খেলতে পারেন। খেলে থাকেন ঐতিহ্যবাহী ক্লাব বোকা জুনিয়র্সে। গেল মৌসুমে বোকার হয়ে ৭টি গোল করার পাশাপাশি অবদান রেখেছেন ১৭টি গোলেও। আর্জেন্টিনার বয়সভিত্তিক দলগুলোয় নিয়মিত গোল পেয়ে ২০১৭ সালের নভেম্বরে আর্জেন্টিনার মূল দলে অভিষেক হয়েছে ২২ বছর বয়সী প্যাভনের। সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার কোচ হোর্হে সাম্পাওলির হাতে ইতালিয়ান সিরি আ’র পরীক্ষিত পারফর্মার ইন্টারন্যাজিওনাল অধিনায়ক মাউরো ইকার্দি থাকলেও তিনি বেছে নিয়েছেন প্যাভনকেই। আক্রমণভাগে গঞ্জালো হিগুয়েইন, সার্জিও অ্যাগুয়েরো বা পাওলো ডিবালার নামের ভারে হয়ত প্রধান একাদশে জায়গা পাবেন না। তবে সুযোগ পেলে তিনিও হয়ে উঠতে পারেন আলবিসেলেস্তেদের আক্রমণের বড় নির্ভরতা।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



রে