ঢাকা, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

আমার গানে সাকিব আল হাসান বাজনা বাজাইতেছে, বিশ্বাস করা যায়! : আরমান আলিফ

খেলা ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০১৮ জুন ০২ ২২:৩০:২৬
আমার গানে সাকিব আল হাসান বাজনা বাজাইতেছে, বিশ্বাস করা যায়! : আরমান আলিফ

যারা গাইছেন তারা বাংলাদেশ জাতীয় দলের ক্রিকেটার। ট্রায়াল রুমে দলবদ্ধ সবাই গাইছেন গানটি। ছোট্ট অংশের জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের গাওয়া এই অংশটুকুও সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল। ভিডিও ক্লিপে দেখা যায় সাকিব আল হাসান, রুবেল, সৌম্য সরকার, সাব্বিরসহ অনেককেই! কিন্তু তাদের মুখে হঠাৎ এই গান কেনো? কার গান এটা?

জাতীয় ক্রিকেটারদের মুখে এই গানের কারণ খুঁজতে গিয়ে ঘটলো বিস্মিত হওয়ার মতো ঘটনা! প্রথমত দেখা গেলো এটা কোনো প্রতিষ্ঠিত গীতিকার বা শিল্পীর গান নয়। নেত্রকোনা জেলার এক অখ্যাত মুখ আরমান আলিফ নামের এক ইন্টারমিডিয়েট পড়ুয়া তরুণের গান। সম্প্রতি সোশাল মিডিয়ায় যা ভাইরাল হয়েছে। ‘অপরাধী’ নামের গানটি নিয়ে আরো বিস্মিত হওয়ার মতো খবর হলো, ইউটিউবে ভিউয়ার্স-এর দিক থেকে বাংলা গানের জগতে ইতিহাস করে ফেলেছে গানটি।

ইউটিউব গ্লোবাল র‌্যাঙ্কিংয়ে সেরা ১০০ গানের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে আলিফের ‘অপরাধী’। গানটির প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ঈগল মিউজিক। তারা জানায়, গ্লোবাল রেঙ্কিংয়ে এখন গানটি শীর্ষ ৮০-এর মধ্যে স্থান করে নিয়েছে। এক মাসের মধ্যে গানটির ভিউয়ার্স ৪ কোটি ছাড়িয়ে যাওয়ার কী রহস্য, তা ভেদ করা সম্ভব হয়নি কারো। আর এসব বিষয় জানতেই তরুণ এই গীতিকার ও শিল্পীর কাছে প্রশ্ন :

প্রথমেই আরমান আলিফকে প্রশ্ন, ‘অপরাধী’র উদযাপন কেমন করছেন?উদযাপনতো হচ্ছেই এক মাস ধরে। ২ কোটি ভিউয়ার্স-এর উদযাপন যখন করতে যাবো, তখন দেখি ৩ কোটি হয়ে গেছে।

আপনিতো জনপ্রিয় কোনো শিল্পী নন, পরিচিত মুখও না। তারপরও চার কোটি বার ইউটিউবে মানুষ আপনাকে দেখলো। কেমন ফিল করছেন?আসলে গানটাই আমাকে সবার কাছে পরিচয় করিয়ে দিলো। এই গানটা ইউটিউবে যাওয়ার পর থেকে সবাই এখন আমাকে ভালোবাসতেছে। অনুপ্রেরণা দিচ্ছে। সাহস যুগাচ্ছে গান চালিয়ে যাওয়ার। এইতো!

কোটি কোটি মানুষের কাছে পৌঁছে যাওয়ার পর আগের আলিফ আর এখনের আলিফের মধ্যে পরিবর্তনটা কেমন দেখছেন?আমার আশে পাশের পরিবর্তন?

হ্যাঁ…পরিবর্তন বলতে আমার আশেপাশের যারা ছিলেন, আমার কাছের ছিলেন তারাতো আগে থেকেই আমাকে সাপোর্ট দিয়ে আসছেন। তারা সব সময়ই আমাকে বলেন, তুমি ভালো লেখো, ভালো গান করো। এটা চালিয়ে যাও। খুব তাড়াতাড়ি ভালো একটা জায়গা যেতে পারবে। এই গানের মধ্য দিয়ে যতোটুকুই নাম হলো তা প্রত্যেকের দোয়া আর ভালোবাসার কারণেই বলে আমার মনে হয়। আজ সবাইকে খুব কাছের মনে হয়।

এখন পর্যন্ত গানের জগত থেকে কারো ফোন কিংবা অ্যাপ্রিসিয়েশন পেয়েছেন কিনা?ফোন পাইনি। তবে মেসেজে অনেকের সাথেই কথা হয়েছে। তারা আমার গানের প্রশংসা করলেন। সামনে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা দিলেন। কোনো ধরনের পরামর্শের দরকার হলে তাদের দরোজা খোলা এমনটাও আমাকে জানালেন। এটা আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া।

‘অপরাধী’ গানটাতো আপনার লেখা। গান তৈরি হওয়ার ব্যাকগ্রাউন্ডটা বলেন…আসলে একদিন আমরা ফ্রেন্ড সার্কেল মিলে আড্ডা দিচ্ছিলাম। হঠাৎ করে টিউনটা মাথায় চলে আসে। ভাবলাম, এই সুরটা তো ভাল লাগছে। তারপর ভাবলাম, এই সুরে কিছু কথা লাগাই। আমার কাছে আগে থেকেই গানের কিছু কথা মাথায় ছিলো। তখন ওইখানে বসেই কথাগুলোকে সুর দিয়ে গানটা তৈরি করি। ওইখানেই বসেই রেকর্ড করে প্রথমে ইউটিউবে ছেড়ে দিয়েছিলাম। মানে ওই এক আড্ডায় বসেই গানটা তৈরি করা। ওই সময় গিটার আর কাহন ছিলো শুধু ইন্স্ট্রুমেন্টে।

অ্যাকুয়েস্টিকে ছাড়া ‘অপরাধী’ গানটি তখন কেমন রেসপন্স ছিলো?তখন আমার চ্যানেলটা নতুন ছিলো। তেমন প্রচারণা ছিলো না। এতো মানুষের কাছে পৌঁছেও নি। কম মানুষের কাছে পৌঁছালেও যে কয়জন দেখেছিলো গানটা তারা খুব প্রশংসা করেছিলো। প্রত্যেকে ভালো মন্তব্য করেন। অনেকেই তখন গানটা আস্তে আস্তে শেয়ার করা শুরু করে। আর তখনই ঈগল মিউজিকের চোখে পড়ে তারা আমার সাথে যোগাযোগ করেন। ফোন করে আমার কাছে জানতে চান, আমার লেখা ও গাওয়া ‘অপরাধী’ গানটি নিয়ে তারা একটি মিউজিক ভিডিও করতে চান। তারা আমার পারমিশন নিতে এবং আমাকে নিয়ে গানটি তৈরি করার প্রস্তাব দিলে আমি রাজি হই। আর গানটা করার পর তো দেখছেনই কতোটা রেসপন্স মানুষের।

গানের লিরিক নিয়ে এবার একটু বলা যাক আপনার আপত্তি নেইতো…?না। বলুন।

‘মাইয়া তুই বড় অপরাধী তোর ক্ষমা নাই রে’-এরকম আরো বহু কথা আছে গানটির শরীরে। এগুলো কী আপনার ব্যক্তি জীবনের অভিজ্ঞতা?হ্যাঁ। ব্যক্তি জীবনের সাথেতো মিল আছেই। তবে পুরোপুরি না। কিছুটা।

কী রকম সেটা?যেমন এক জায়গায় আছে ইস্কুলের টিফিনের টাকা জমায়ে আবেগ কেনা, স্কুল পলায়ে দেখতে যাওয়া এ বিষয়গুলোতো আমার জীবনেরই ঘটনা। লাইফ টাইমের কিছু কথা আমি গানে সহজ কথায় তুলে ধরেছি।

তো গানেতো আপনি বিরাট অর্থে প্রেমিকাকে ‘অপরাধী’ সাব্যস্ত করলেন। কেমন হলো বিষয়টা…?ওইতো আগে বললাম, কিছুটা ব্যক্তি জীবন থেকেই নেয়া।

চার কোটি মানুষ ইতিমধ্যে আপনার ‘অপরাধী’ দেখে ফেলেছে। ঠিক একই গান একজন মেয়েও গাইলেন। তিনিও সোশাল মিডিয়ায় হিট। দেখেছেন গানটা?হ্যাঁ, টুম্পা নামের একজন মেয়ে গানটা গেয়েছে। আমি ওর গাওয়া গানটাও শেয়ার করেছিলাম। এবং তাকে বলেছিলাম গানটা ভালো হয়েছে। এরপর মেয়েটা আমাকে নক করে জানায় যে, ভাইয়া আপনার গানটা আমার খুব ভালো লেগেছে তাই কভার করেছি।

আচ্ছা, এতো মানুষ এই গানটা দেখার কারণ কী বলেন মনে করেন?আসলে আমার গানের কথাগুলো সহজ ছিলো। সহজ কথায় যদি একটা গান তৈরি করা হয় সেটা শুনতেও আরাম লাগে। তারচেয়ে বড় কথা গানের লিরিক। আমার বয়সি বা তরুণদের মধ্যে বেশি এই গানটা জনপ্রিয়তা পেয়েছে। স্কুল, কলেজ পড়ুয়ারাই বেশি গানটা দেখেছে, শেয়ার করেছে। বেশির ভাগ মানুষের জীবনের সঙ্গে গানের কথাগুলো মিলে গিয়েছে। তারা আমাকে জানিয়েছে তাদের জীবনের সঙ্গে গানের প্রতিটি কথা মিলে গেছে। এমন ফেসবুক, ইউটিউবে প্রচুর কমেন্ট দেখেছি যে ‘মিলে গেলো’!

এটাতে প্রমাণ হয় বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষ বিরহকাতর! তাই না?এটা একদম ঠিক আছে। বিরহ কম বেশি সবার মধ্যেই থাকে। তাই আমার গানটাও সবাইকে স্পর্শ করে গেছে। আর শুধু বাংলাদেশে নয়, পশ্চিম বাংলাতেও নাকি গানটা সাড়া ফেলছে অনেক।

বাহ! এটাতো বিরাট ব্যাপার…হ্যাঁ, বিকালে দেখলাম বাংলাদেশ ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানসহ আরো আমাদের বেশকিছু ক্রিকেটার ট্রায়াল রুমে বসে আমার গানটা গাইছে। বিশ্বাস করবেন না, এমন দৃশ্য দেখে আমি নিজেকে খুব গর্বিত মনে করেছি। আমার গানে সাকিব আল হাসান বাজনা বাজাইতেছে, বিশ্বাস করা যায়! এটা দেখে খুব আনন্দ লাগছে। এখন পর্যন্ত ‘অপরাধী’ গান নিয়ে সবচেয়ে বড় পাওয়া আমার কাছে এই মুহূর্তটা।

এতো গেল ‘অপরাধী’ নিয়ে আপনার অর্জনের কথা। সামনে নতুন কোনো গান করছেন?অনেকে কাজ করার কথা বলছিলেন। কিন্তু আমি নিজে একটা গান করছি। রোজার ঈদে সেটা আসবে। আশা করি এই গানটাও ভালো লাগবে সবার।

ধন্যবাদ আপনাকে। আপনার সংগীত জীবন সুন্দর হোক…ধন্যবাদ আপনাকে ও চ্যানেল আই অনলাইনকে। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।

সূত্র : চ্যানেল আই।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



রে