ঢাকা, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

ফোনের এক প্রান্তে স্ত্রী-মেয়ে, অন্য প্রান্তে ‘একরামকে গুলি’ (অডিও সহ)

২০১৮ জুন ০১ ১৭:০৬:৫৭
ফোনের এক প্রান্তে স্ত্রী-মেয়ে, অন্য প্রান্তে ‘একরামকে গুলি’ (অডিও সহ)

একরামের সঙ্গে তার স্ত্রী ও মেয়েদের চারবার ফোনে কথা হয়। শেষবার কথা হয়নি, তবে অপর প্রান্তে গুলির শব্দ শুনতে পেয়ে চিৎকার করে উঠেন একরামের স্ত্রী।

ফোনকলের চারটি ক্লিপ একত্রিত করেছে ডেইলি স্টার। প্রথম কলে একরামুল তার মেয়েকে জানান, মেজরের কাছে গিয়েছিলেন, এখন ইউএনও অফিসে যাচ্ছেন।

দ্বিতীয়বার মেয়ে কল দিয়ে বাবার অবস্থান জানতে চায়। ফোনের অপর প্রান্ত থেকে একরামুল জানান, ইউএনও অফিসে যাচ্ছেন। কতক্ষণ লাগবে জানতে চাইলে মেয়েকে তিনি বলেন, ‘বেশিক্ষণ লাগবে না। আমি চলে আসব ইনশাল্লাহ।’

তৃতীয়বার কল দিয়ে মেয়ে অবস্থান জানতে চাইলে একরাম বলেন, ‘জরুরি কাজে হ্নীলা যাচ্ছি।’ কেন হ্নীলা যাচ্ছেন জানতে চাইলে আবারও বলেন জরুরি কাজে। কথা বলার সময় একরামের কণ্ঠ কান্নাজড়িত ছিল, বুঝতে পারে মেয়ে। ওই সময় মেয়ে তাকে প্রশ্ন করে, ‘আব্বু তুমি কাঁদছ কেন?’ এরপরই লাইনটা কেটে যায়।

চতুর্থবার কল দেন একরামের স্ত্রী। ফোন রিসিভ হলেও অপর প্রান্ত থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছিল না। এ সময় কয়েকবার ‘হ্যালো হ্যালো’ বলার পর একরামের স্ত্রী বলেন, ‘আমি কমিশনারের সাথে কথা বলতে চাচ্ছি। হ্যালো, ফোন রিসিভ করছে কে? আমি উনার মিসেস বলছি...।’ কিন্তু অপর প্রান্ত থেকে কোনো সাড়া নেই। এ সময় হালকা স্বরে কিছু কথা বলতে শোনা যায়। বন্দুকের ট্রিগার টানার শব্দ শোনা যায়। তারপরই পরপর দুবার গুলির শব্দ।

গুলির পর এই প্রান্তে একরামুল হকের স্ত্রীর চিৎকার করে বলেন, ‘আমার জামাই কিচ্ছু করে নাই।’ অপর প্রান্তে বাঁশির শব্দ ও অশ্লীল গালিগালাজ করতে শোনা যায়। একপর্যায়ে বাঁশির শব্দ বাড়তে থাকে এবং হইচই ও ‘ধর ধর’ শব্দও শোনা যায়।

১৪ মিনিট ২২ সেকেন্ডের ওই অডিও রেকর্ডে অপর প্রান্তের অনুচ্চ কথোকথন হালকা হালকা শোনা যায়। কী করতে হবে, কীভাবে কী করতে হবে বলতে শোনা যায়। গুলির খোসা, গুলি, বন্দুক, পিস্তল কীভাবে রাখতে হবে, কোথায় রাখতে হবে, স্পষ্ট না হলেও অনুচ্চ স্বরে শোনা যায়।

ডেইলি স্টারের প্রকাশ করা অডিওটি শুনুন।

এই অভিযানটি চালিয়েছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। বাহিনীটির দাবি, ইয়াবা চালানের লেনেদেনের খবর পেয়ে অভিযানে যায় একটি দল। এ সময় র‌্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি চালালে আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি চালায় র‌্যাব। মাদক চক্রের অন্যরা পিছু হটলে একরামুল হকের গুলিবিদ্ধ মরদেহ পাওয়া যায়। ঘটনাস্থল থেকে ১০ হাজার ইয়াবা, একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ওয়ান শ্যুটার গান, ছয়টি গুলি ও পাঁচটি খালি খোসা উদ্ধার করা হয়েছে বলেও দাবি করা হয়েছে।

তবে যে অডিও রেকর্ড প্রকাশিত হয়েছে, তাতে শুরুতেই এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ হয়নি বলেই স্পষ্ট। কোনো সাড়া-শব্দ ছাড়াই ট্রিগার টানা ও গুলির শব্দ শোনা যায়। গুলিবিদ্ধ ব্যক্তির চিৎকারও ভেসে আসে।

অডিওর বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে র‌্যাব-৭-এর কক্সবাজার ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার মেজর মো. রুহুল আমিন প্রিয়.কমকে জানান, অডিওটি তিনি শুনেননি। না শুনে ওই বিষয়ে কোনো কথা বলতে পারবেন না।

ঘটনার পরদিনই স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসী দাবি করছেন, তিনবারের নির্বাচিত কাউন্সিল একরামুল হক মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। তিনি যুবলীগের একজন ত্যাগী নেতা ছিলেন এবং কখনো টাকা-পয়সার প্রতি লোভ ছিল না তার।

‘চলো যাই যুদ্ধে, মাদকের বিরুদ্ধে’ স্লোগানে গত ১৪ মে থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে মাদকবিরোধী অভিযান শুরু করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এরপর প্রতি রাতেই দেশের বিভিন্ন জায়গায় বন্দুকের গুলিতে নিহতের ঘটনা ঘটছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দাবি, নিহতরা মাদক ব্যবসায়ী এবং তাদের নিয়ে অভিযানে গেলে র‌্যাবের ওপর গুলি চালালে আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলিতে নিহত হন তারা। আবার কোথাও কোথাও ব্যবসা নিয়ে নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বে কয়েকজন নিহত হয়েছে বলেও দাবি করেছে পুলিশ।

এগুলোকে ‘বিচারবহির্ভূত হত্যা’ উল্লেখ করে মানবাধিকার সংস্থাগুলো এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

সুত্র; প্রিয়ডটকম

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ



রে