আম পাড়ার ঘটনা থেকে বেরিয়ে এলো হৃদয় বিদারক কাহিনী

জানা গেছে, বুধবার সন্ধ্যায় কয়েকজন ছাত্র ক্যাম্পাসের গাছ থেকে কিছু আম পাড়লে সহকারী প্রক্টর এসে বাধা দেন। এ সময় অন্যরা চলে গেলেও অনু নামের এক ছাত্র থেকে যান। তিনি জানতে চান 'আমার ক্যাম্পাসের আম, আমি একজন শিক্ষার্থী হিসেবে খাওয়ার অধিকার রাখি না?' এসময় প্রক্টর রেগে গিয়ে তার আইডি কার্ড নিয়ে নেন। পরে প্রোভিসি পুলিশ ডেকে তাকে তাদের হাতে তুলে দেন। রাত ১০ পর্যন্ত অনুকে থানায় আটকে রাখার পর ক্যাম্পাসের বন্ধু আব্দুল মজিদ অন্তরসহ কয়েকজন সাংস্কৃতিকর্মী তাকে থানা থেকে ছাড়িয়ে আনতে যান।

তখন মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহাদাত হোসেন খান ও সাংস্কৃতি কর্মীরা আনোয়ারুল ইসলামের কাছ থেকে ঘটনাটি সম্পর্কে জানতে চান। তখন উপস্থিতিদের ভাষ্যমতে, থানায় এক হৃদয় বিদারক কাহিনীর অবতারণা হয়।

অনু জানান, অল্প বয়সে তাঁর বাবা মা'র মধ্যে পারিবারিক কলহের কারণে বিচ্ছেদ হয়ে যায়। অনুকে তার এক আত্মীয় অভাবের সংসারে কোনও রকম লালন পালন করে স্কুল পাশ করান। এরপর প্রাইভেট টিউশনি যোগাড় করে নিজের চেষ্টাতেই ইন্টার পাশ করেন তিনি। রেজাল্ট ভালো হওয়ায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পপুলেশন সায়েন্সে ভর্তি হন। এরমধ্যে পরিবারের সাথে তাঁর যোগাযোগ যতটুকু ছিল ততটুকুও ছিন্ন হয়ে যায়।

জানা গেছে, রমজান শুরুর কয়েক মাস আগে থেকে তার হাতে কোনো টিউশনি নেই। ক্যাম্পাস ও এর আশেপাশের বিভিন্ন দোকান থেকে বাকিতে খেয়ে দিন পার করছিলেন তিনি।

অনু আরো জানান, বুধবার সন্ধ্যায় তিনি কোনো খাবার না পেয়ে ক্যাম্পাসের গাছ থেকে বেশ কিছু আম পাড়েন এই উদ্দেশ্যে যে, এগুলো রুমে রেখে দিলে পেকে যাওয়ার পর খেতে পারবেন। ক্ষুধার্ত থাকায় খিটখিটে মেজাজ হওয়ায় তিনি মানুষের সঙ্গে স্বাভাবিক আচরণ করতে পারছেন না, অল্পতেই সে রেগে যান। অনুর এমন হৃদয় বিদারক কথা শুনে থানার উপস্থিত সবার চোখেই পানি চলে আসে।

মতিহার থানার ওসি বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, গত বুধবার রাতে এই ঘটনাটি ঘটেছে। ছেলেটির নাম আনোয়ারুল ইসলাম অনু। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ তাঁকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছিল। কিন্তু ঘটনাটি অত্যন্ত মর্মান্তিক ও হৃদয় বিদারক হওয়া আমরা ওই রাতেই তাঁকে ছেড়ে দিয়েছি।