ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

স্বামী জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীতে জেলে খালেদা জিয়া, পরিবারের কে কোথায়

রাজনীতি ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০১৮ মে ৩০ ১৭:১৩:২৩
স্বামী জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীতে জেলে খালেদা জিয়া, পরিবারের কে কোথায়

জিয়াউর রহমান ছিলেন বাংলাদেশের সবচেয়ে কম বয়সী রাষ্ট্রপতি, ১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল তিনি যখন রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নেন বয়স ছিল মাত্র ৪১ বছর একমাস।১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল প্রতিষ্ঠা করেন। একটি উদার ও মধ্যপন্থী দল হিসেবে বিএনপিকে গড়ে তোলেন জিয়া। ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতিতে কর্মকাণ্ড নিয়ে বিতর্ক থাকলেও জিয়াউর রহমান তার ব্যক্তিজীবনের সততা ও দেশপ্রেমের মাধ্যমে নিজের আলাদা ইমেজ তৈরি করতে পেরেছিলেন, পেয়েছিলেন জনপ্রিয়তা।

বিএনপির কর্মসূচিদলের প্রতিষ্ঠাতা সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানরে মৃত্যূ দিবসকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠনগুলো। এর মধ্যে বুধবার সকাল ১০টায় দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে দলের নেতাকর্মীরা শেরেবাংলানগরে জিয়ার মাজারে পুষ্পমাল্য অর্পণ করবেন। এদিন বিএনপি কার্যালয়ে মিলাদ মাহফিল, রক্তদান, আলোকচিত্র প্রদর্শনী ও বই মেলার আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়াও রাজধানীর শেরেবাংলা নগর টিএনটি খেলার মাঠ, মোহাম্মদ পুর টাউন হল, ধানমন্ডি , সুনামগঞ্জ কমিউনিটি সেন্টার ও কলাবাগান বাস স্টেশন । ইফতার ও বস্ত্রবিতরণ করবে দলের নেতা কর্মীরা। তবে দলের চেয়ারপারসন কারাগারে এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন লন্ডন অবস্থান করায় বিএনপির নেতাকর্মীদের এবারই প্রথম জিয়া পরিবারের কারও অংশগ্রহণ ছাড়াই দলীয় প্রতিষ্ঠাতার মৃত্যুবার্ষিকী পালন করতে হচ্ছে।

মৃত্যুবার্ষিকীর কর্মসূচিতে নেই জিয়া পরিবারের কেউচলতি বছরই বিএনপির প্রতিষ্ঠাতার সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী পালনে ঘটছে ব্যতিক্রম। র্দীঘ ৩৬ বছর ধরে দলীয় প্রতিষ্ঠাতার মৃত্যুবার্ষিকীর কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে জিয়া পরিবারের পক্ষ থেকে বেগম খালেদা জিয়া বা তারেক রহমান। এবারই প্রথম জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীর দোয়া ও মাহফিলসহ দলীয় কর্মসূচিতে তার পরিবারের কেউই থাকছেন না। জিয়া অরফানেজ ট্রাষ্ট দুর্নীতি মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে পুরান ঢাকার কারাগারে রয়েছেন দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তার অবর্তমানে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্বপ্রাপ্ত জিয়ার জ্যৈষ্ঠপুত্র তারেক রহমান একাধিক মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে অবস্থান করছেন লন্ডনে। ফলে জিয়া পরিবারের কাউকে ছাড়াই এই প্রথম দলীয় প্রতিষ্ঠাতার মৃত্যুবার্ষিকী পালন করছে বিএনপি।

বিএনপি মহসচিবের বাণীদলের প্রতিষ্ঠাতার শাহাদাতবার্ষিকী দেওয়া বাণীতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, মহান স্বাধীনতার ঘোষক, বহুদলীয় গণতন্ত্রের পূণ:প্রবর্তনকারী, ‘বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ’ কালজয়ী দর্শনের প্রবর্তক, আধুনিক বাংলাদেশের রুপকার, সফল রাষ্ট্রনায়ক, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৩৭তম শাহাদৎবার্ষিকীতে আমি তাঁর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি ও বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। শহীদ জিয়ার অম্লান আদর্শ, দর্শন ও কর্মসূচি আমাদের স্বাধীনতা রক্ষা, বহুদলীয় গণতন্ত্র এবং দেশীয় উন্নয়ন ও অগ্রগতির রক্ষাকবচ।

তিনি বলেন, এই মহান জাতীয়তাবাদী নেতার জনপ্রিয়তা দেশী-বিদেশী চক্রান্তকারী শক্তি কখনোই মেনে নিতে পারেনি। ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই অশুভ চক্র তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে থাকে। এই চক্রান্তকারীরা ১৯৮১ সালের ৩০ মে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে হত্যা করে। এই মর্মান্তিক হত্যাকান্ডের মধ্য দিয়ে একজন মহান দেশপ্রেমিককে দেশবাসী হারায়।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, বর্তমান অনৈতিক সরকার একদলীয় সরকারের আদলে দেশ পরিচালনা করছে। কেন্দ্রীভূত স্বৈরতন্ত্রের প্রতিভূ বর্তমান সরকার। এরা নতূন কায়দায় পুরানো বাকশালকে পুনরুজ্জীবিত করেছে। বিরোধী দলের অধিকার, চিন্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা ভূলুন্ঠিত করে গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছে। জাতীয় জীবনের চলমান সংকটে শহীদ জিয়ার প্রদর্শিত পথ ও আদর্শ বুকে ধারণ করেই আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে এবং জাতীয় স্বার্থ, বহুমাত্রিক গণতন্ত্র এবং জনগণের অধিকার সুরক্ষায় ইস্পাতকঠিন গণঐক্য গড়ে তুলতে হবে।

জিয়াউর রহমানের জীবন ও কর্মসাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ১৯৩৬ সালের ১৯ জানুয়ারি বগুড়া জেলার গাবতলী উপজেলার বাগবাড়ি গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তার ডাক নাম ছিলো কমল। বাবার নাম মনসুর রহমান এবং মায়ের নাম ছিল জাহানারা খাতুন। পাঁচ ভাইদের মধ্যে জিয়াউর রহমান ছিলেন দ্বিতীয়। তার শৈশবের কিছুদিন কাটে বগুড়া ও কলকাতায়। ভারত বিভাগের পর রসায়নবিদ পিতার বদলির সুবাদে তিনি করাচি যান। করাচির একাডেমি স্কুল থেকে ১৯৫২ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করেন।

১৯৫৩ সালে অফিসার ক্যাডেট হিসেবে যোগ দেন কাকুল মিলিটারি একাডেমিতে। ১৯৫৫ সালে তিনি সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট পদ লাভ করেন। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে লাহোর সীমান্তের খেমকারান সেক্টরে ক্যাপ্টেন জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে প্রথম ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্ট ভারতের আক্রমণ ঠেকিয়ে দেয়। বীরত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে দেয়া হয় পাকিস্তানের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সামরিক উপাধি। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ চট্টগ্রাম কলুঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে তিনি বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পত্র পাঠ করেন। এরপর তার নেতৃত্বে অষ্টম ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্ট মুক্তিযুদ্ধ শুরু করে। যুদ্ধকালে প্রথমে তিনি সেক্টর কমান্ডার ও পরে তার নামের আদ্যাক্ষর দিয়ে গঠিত জেড ফোর্সের নেতৃত্ব দেন। মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে বীরউত্তম উপাধিতে ভূষিত করা হয়।

১৯৭৫ সালের ২৫ আগস্ট নিযুক্ত হন চিফ অব আর্মি স্টাফ পদে। ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সংগঠিত সেনা অভ্যুত্থা জিয়াউর রহমান ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন। ১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বিচারপতি সায়েম পদত্যাগ করলে তিনি প্রেসিডেন্ট পদে অধিষ্ঠিত হন। এরপর ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর গঠন করেন বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি-বিএনপি। জিয়া চট্টগ্রামের স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে কলহ থামানোর জন্য ১৯৮১ সালের ২৯ মে চট্রগ্রামে যান এবং চট্টগ্রামের সার্কিট হাউসে রাত্রিযাপন করেন। ৩০ মে গভীর রাতে একদল বিপথগামী সেনা সদস্য হাতে চট্টগ্রামের সার্কিট হাউজে নিহত হন। জিয়াউর রহমানকে ঢাকার শেরে বাংলা নগরে দাফন করা হয়।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



রে