ঢাকা, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

বিশ্বকাপ ও ফুটবলার খুন, স্মৃতিতে এস্কোবার…

খেলা ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০১৮ মে ৩০ ১৭:০১:৪৫
বিশ্বকাপ ও ফুটবলার খুন, স্মৃতিতে এস্কোবার…

বরাবরই বিশ্ব ফুটবলের রোমাঞ্চকর মুহূর্তগুলির জন্য অপেক্ষা করছেন দর্শকরা। রাশিয়ার মাটিতে মরণ কামড় দিতে তৈরি হচ্ছে অবশ্যই সেই কলম্বিয়াও। এ এমন এক দেশ যেখানে মাদক চালান ও খুন নিত্য নৈমত্তিক ব্যাপার। কিন্তু কলম্বিয়াকে ফুটবল প্রেমীরা চেনেন ‘সাদা গুলিট’ এর দেশ হিসেবে। ফুটবল ভক্তদের হৃদয়ে স্থান পেয়েছেন দুরন্ত বিচ্ছু গোলকিপার হিগুইতা। এদের সঙ্গেই উচ্চারিত হয় আন্দ্রে এস্কোবারের নাম। তার সঙ্গে জড়িয়ে আছে রক্তাক্ত যন্ত্রণা। তেমনই স্মৃতি নিয়ে ফের হাজির হচ্ছে কলম্বিয়া।

দুই যুগ আগেকার কথা। ১৯৯৪ সালের ২রা জুলাই। কলম্বিয়ার মেডেলিন শহরে প্রকাশ্যেই ৬টি গুলি করা হয়েছিল ডিফেন্ডার আন্দ্রে এস্কোবারকে। লুটিয়ে পড়েছিলেন বিশ্বকাপার।কী ছিল তার অপরাধ ?

ফিরতে হবে ১৯৯৪ সালের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বকাপের আসরে। গ্রুপ লিগ থেকে উঠে পরবর্তী পর্বের জন্য লড়াই করতে তৈরি কলম্বিয়া। তাদের মুখোমুখি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ঘরের মাটিতে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ। ফলে দেখা দিয়েছে টানটান উত্তেজনা। ২২ জুন ছিল খেলার দিন। দুই দেশের সমর্থকদের ভিড় উপচে পড়েছিল। সবকিছু ঠিকঠাক চলছে। খেলা শুরু হতেই কলম্বিয়ার আক্রমণ শুরু হয়। প্রতি আক্রমণ করে যুক্তরাস্ট্রও। ম্যাচের বল দখলের লড়াই তারিয়ে উপভোগ করছিলেন দর্শকরা। এমন সময় ছন্দপতন। খেলার তখন ৩৩ মিনিট পার হয়েছে। মার্কিন ফুটবলারদের আক্রমণ রুখতে গিয়েই আত্মঘাতী গোলটি করে ফেললেন এস্কোবার।

সেই মুহূর্তে গ্যালারির জুড়ে উল্লাস আমেরিকানদের। ক্ষোভে ফেটে পড়ছেন কলম্বিয়ান সমর্থকরা। শেষে কিনা ক্যাপ্টেনই ধসিয়ে দিল সব। হতাশা কাটিয়ে মাটি থেকে উঠে দাঁড়ালে এস্কোবার। হলুদ জার্সির উজ্জ্বল কলম্বিয়ান তখন যেন লজ্জায় কুঁকড়ে যাচ্ছেন। সতীর্থরা ছুটে এলেন। তাকে সান্ত্বনা জানালেন। শুরু হল পিছিয়ে থেকে কলম্বিয়ার নতুন লড়াই। তীব্র আক্রমণ আছড়ে পড়ছিল ইউএসএ গোলবক্সে। কিন্তু গোল হচ্ছিল না। সেদিন ফুটবল ভাগ্য ভর করেছিল মার্কিনীদের উপরেই। ম্যাচটি ২-১ গোলে জিতে নেয় ইউএসএ। ব্যাস ছিটকে যেতে হল কলম্বিয়াকে।

বিশ্বকাপ মিশন শেষ করে দেশে ফেরার পর এস্কোবার ১০ দিনের ছুটি নিয়ে তার নিজ বাড়ি মেডেলিনে যান। ফুটবল ক্লাব এসি মিলানের সাথে তার চুক্তি বিষয়ক আলোচনার জন্য তার ক্লাব সতীর্থদের সাথে মিলিত হতে চেয়েছিলেন। জুলাইয়ের ২ তারিখ মধ্যরাতে একটি পানশালা থেকে বের হবার পর, গাড়ি পার্কিং লটে তার সাথে দুই জন অচেনা লোকের সাথে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। তারা আন্দ্রে এস্কোবারকে বিশ্বকাপে আত্মঘাতী গোলের জন্য দোষারোপ করতে থাকে।

আন্দ্রে এস্কোবার কোনোরূপ গোলযোগ না করে তাদেরকে বুঝাতে চেয়েছিলেন যে, আত্মঘাতী গোলটি তিনি ইচ্ছে করে করেননি। বিপক্ষ দলের ক্রস বল ক্লিয়ার করার সময় পায়ে লেগে ভুলবশত নিজেদের গোলপোস্টের ভেতর বল জড়িয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তারা তাদের দোষারোপ অব্যাহত রাখে এবং একপর্যায়ে আন্দ্রে এস্কোবারের মাথায় একটানা ছয় রাউন্ড গুলি করে। মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, এস্কোবারকে প্রতিবার গুলি করার সময় সেই লোকটা ‘গোল’ বলে চেঁচিয়ে উঠেছিল। নিশ্চিন্তে খুন করে আততায়ী একটি গাড়িতে করে পালায়। তার সঙ্গে আরো কয়েকজন ছিল।

আন্দ্রে এস্কোবার নিহত হলেন। এই খবর ছড়িয়ে পড়ে মেডেলিন শহর থেকে কলম্বিয়ার সীমান্ত পেরিয়ে বিশ্বজুড়ে। ততক্ষণে রক্তাক্ত ফুটবলারের দেহের ছবি আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে। এস্কোবারকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল হাসপাতালে। সেখানেই তার মৃত্যু হয়।

মনে করা হয়, এস্কোবারের আত্মঘাতী গোলের কারণে কলম্বিয়ার জুয়াড়িরা ওই ম্যাচে প্রচুর টাকার বাজি হেরে যায়। দেশে ফিরতেই তারাই খুন করেছিলো এই ছিমছাম খেলোয়াড়কে। অনেকের মতে এস্কোবারের মৃত্যুর কারণ ছিলো তারই দেশের তীব্র জাতীয়তাবাদী সমর্থকদের ভাবাবেগ। যে কারণেই হোক, সেই প্রথম কোনও বিশ্বকাপার ফুটবলার খুন হলেন।

আন্দ্রে এস্কোবারকে সমাধিস্থ করার অনুষ্ঠানে প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজার কলম্বিয়ান জনগণ তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে কলম্বিয়ার রাজপথে জড়ো হয়েছিল। এখনো বিশ্বকাপের আসর বসলে কলম্বিয়ার সমর্থকরা স্টেডিয়ামে আন্দ্রে এস্কোবারের ছবি সম্বলিত ব্যানার নিয়ে যায় এবং তার প্রতি শোক প্রকাশ করে থাকে।

এস্কোবারের স্মৃতি ফিকে হয়নি। তার স্মরণে বিশেষ প্রকল্প চালানো হয় কলম্বিয়ায়। রক্তাক্ত গৃহযুদ্ধ ও দারিদ্রে জর্জরিত শিশুরা সেখানে ফুটবল প্রশিক্ষণ নেয়। তৈরি হয় ভবিষ্যতের ফুটবলার। সেই কলম্বিয়াআবারো বিশ্ব ফুটবলের আসর মাতাতে হাজির হয়েছে রাশিয়ায়।

উল্লেখ্য, কলম্বিয়ার একটি শক্তিশালী মাদক সংগঠনের দেহরক্ষী, হেমবারতো ক্যাস্ট্রো মুনিজ আন্দ্রে এস্কোবারকে হত্যার দায় স্বীকার করেন। আদালত তাকে ৪৩ বছরের কারাদণ্ড প্রদান করে। তবে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, কারাগারে সদাচার এবং ভালো ব্যবহারের জন্য তার সাজা কমিয়ে ১১ বছর করা হয়।

প্রিয় পাঠক বুঝতেই পারছেন দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে নয়, জুয়ার কারণেই জীবন কেড়ে নেয়া হয়েছিল কলম্বিয়ার এই ফুটবলারের। আজ খেলার আসরের চেয়ে জুয়ার আসর হাজারো গুণে বেশি, যা একটি দেশ, একটি জাতিকে ধ্বংস করে দেয়ার জন্য যতেষ্ট। হুম জুয়াড়িরা শুধু এই যুগেই নয় তারা আগেও ছিলেন এখনো আছেন হয়তো সবসময় থাকবেন। তবে আমাদের একটু চিন্তা করতে হবে।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



রে