ঢাকা, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

ভোটারের মন জয়ে বাড়ছে না বিড়ি-সিগারেটের শুল্ক

অর্থনীতি ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০১৮ মে ২৯ ২০:৫৬:২২
ভোটারের মন জয়ে বাড়ছে না বিড়ি-সিগারেটের শুল্ক

কিন্তু ইতোমধ্যে ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের জন্য যে বাজেট প্রস্তুত হয়েছে, তাতে স্থান পাচ্ছে না সিগারেটের উপর শুল্ক বৃদ্ধি। ফলে এ পর্যন্ত যত পেশাজীবী সংগঠন প্রাক-বাজেট আলোচনায় অর্থমন্ত্রীকে এ শুল্ক আরোপের পরামর্শ দিয়েছেন, তাদের মধ্যে দেখা গেছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ও ক্ষোভ।

তারা মনে করেন- সরকার বর্তমানে মাদকের বিরুদ্ধে যে অবস্থান নিয়েছেন তা এ সিদ্ধান্তের পরিপন্থী। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, একজন মাদকসেবী প্রথমে বিড়ি-সিগারেট খেয়ে ধূমপানের মধ্য দিয়ে মাদকের দুয়ারে প্রবেশ করে। তাই অঙ্কুরেই যদি কোনোভাবে সিগারেটে অনুৎসাহিত করা যায়, তাহলে এটা মাদক বন্ধে ভালো ফল বয়ে আনবে।

এ বিষয়ে কথা হয় বাজেট প্রস্তুতের কাজে জড়িত অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তার সাথে।

তিনি নাম প্রকাশ না করার শর্তে পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, যতগুলো প্রাক-বাজেট আলোচনা হয়েছে, সব মিটিংয়ে মানুষের দাবি ছিল তামাকের উপর বিশেষ করে নিচের ব্রান্ডের সিগারেটগুলোর উপর শুল্ক আরোপ করা। সংসদ সদস্যসহ বিভিন্ন পেশাজীবী যারাই আলোচনায় অংশ নিয়েছেন, তারা এ কথা বলেছেন যাতে তামাকের উপর শুল্ক বাড়ানো হয়। তবে সেটা মনে হয় হচ্ছে না। কারণ এবছর তো ভোটের বছর। গরিব শ্রেণির মানুষ বিড়ি ও নিচের ব্রান্ডের সিগারেট বেশি কিনেন। ফলে তাদের বেশি টাকা খরচ হবে। এজন্য এবছর আর তামাকের উপর শুল্ক বাড়ছে না।

সরকারের এই কর্মকর্তা বলেন, ধূমপান খারাপ জিনিস। কিন্তু গরিব মানুষ যখন বিড়ি বা সিগারেট কিনেন, তখন তো আল্টিমেটলি তাদের পকেটের টাকা দিয়েই তো কিনেন। ফলে ভোটে এর প্রভাব পড়তে পারে। তাই আপনি নিশ্চিত থাকেন এবছর অন্তত তামাকের উপর শুল্ক বৃদ্ধি করা হবে না।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের বাজেট শাখা সূত্রে জানা গেছে, আগামী নির্বাচনে ভোটারদের মন জয় করতে কিছু উদ্যোগ এ বাজেটে থাকবে। এর মধ্যে আছে বেশকিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তীকরণ এবং চলমান প্রকল্পগুলো সম্পন্ন করা। জনসাধারণ সম্পৃক্ত যত প্রকল্প আছে তা তুলে ধরতে সব ধরনের উদ্যোগ থাকবে বাজেটে।

সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বিশেষ করে বয়স্ক, বিধবা, মুক্তিযোদ্ধা, প্রতিবন্ধী, হিজড়াসহ প্রভৃতি ভাতায় নজর দেয়া হবে এবারের বাজেটে। এছাড়া আপনারা জেনেছেন অর্থমন্ত্রী নিজেও বলেছেন এ বাজেট হবে গতানুগতিক বাজেট।

বিড়ি-সিগারেটের উপর শুল্ক বাড়াতে অর্থমন্ত্রীকে বাজেটপূর্ব আলোচনায় মতামত দেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের স্বত্বাধিকারী ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

তিনি পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, নির্বাচনী বছর বলে সস্তা সুনামের জন্য মাদক ব্যবসায়ী হত্যা যেমন একটি ভুল সিদ্ধান্ত, তেমনি তামাকের উপর সরকারের ট্যাক্স না বাড়ানো সেই একই ভুল সিদ্ধান্ত। ভোটাররা জানে না? বিড়ি খেলে তার বাচ্চাদের সর্দি-কাশি বাড়ে? এসব সিদ্ধান্ত নিয়ে আমলা ও ব্যবসায়ীরা সরকারকে ভুল পথে নিয়ে যাচ্ছে। বিড়ি-সিগারেটের উপর ট্যাক্স এতো বেশি হতে হবে যাতে একটি কলা ও রুটির দামের চেয়ে একটি সিগারেটের দাম বেশি হয়। তখন গরিবরা সিদ্ধান্ত নেবে সে বিড়ি খাবে নাকি একটি কলা ও রুটি খাবে।

জনস্বাস্থ্যমূলক কাজে জড়িত এই প্রবীণ চিকিৎসক বলেন, আমরা জানি গরিব মানুষ ধূমপান বেশি করে। কিডনি বিকল হওয়ার অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে ধূমপান। অনেক গরিব পরিবার কিডনির চিকিৎসায় সর্বশান্ত হয়ে যায়। ইলেকশনের বছর বলেই তারা ভালো কাজ হিসেবে এ সিদ্ধান্ত নিতে পারতো। বরং তামাকের উপর ট্যাক্স না বাড়ানোই সরকারের একটি ভুল সিদ্ধান্ত।

তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের দেয়া তথ্য থেকে জানা যায়, প্রকাশ্যে ও পরিবহনে ধূমপানের ফলে দেশে প্রতি বছর ১৫ বছরের বেশি বয়সী ৪ কোটি ২০ লাখ অধূমপায়ী পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছেন।

এছাড়া ধূমপানের কারণে প্রতি বছর বাংলাদেশে ৫৭ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়।

এদিকে, ধূমপান না করেও কেউ যেন পরোক্ষভাবে এর কুফলের শিকার না হন, এ লক্ষ্যে প্রকাশ্যে ধূমপান নিষিদ্ধ করে আইন করেছে সরকার। আইনের (১) ধারা ৭-এর বিধান সাপেক্ষে, কোনো ব্যক্তি কোনো পাবলিক প্লেসে এবং পাবলিক পরিবহনে ধূমপান করিতে পারিবেন না৷

ধারা ৬ (২)-এ বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১)-এর বিধান লঙ্ঘন করিলে তিনি অনধিক তিনশত টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন এবং উক্ত ব্যক্তি দ্বিতীয়বার বা পুনঃ পুনঃ একই ধরনের অপরাধ সংঘটন করিলে তিনি পর্যায়ক্রমিকভাবে উক্ত দণ্ডের দ্বিগুণ হারে দণ্ডনীয় হইবেন।

কিন্তু এ আইন এখন কাগজের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে আছে। মাঠ পর্যায়ে নেই এর কোনো প্রয়োগ। এখন প্রকাশ্যে ধূমপান করতে দেখা যায় অনেককে। এমনকি আইন বাস্তবায়নে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সচেতনতামূলক বিজ্ঞাপন প্রচারের কথা থাকলেও তা করা হচ্ছে না। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ভোট নষ্ট হবে এ বিবেচনায় সরকার তামাক নিধনে কার্যকরী পদক্ষেপ নেবে না এটা অনৈতিক ও ভুল সিদ্ধান্ত।

গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোবাকো সার্ভের সমীক্ষা প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে কমপক্ষে ৪৩ ভাগ মানুষ ধূমপান অথবা অন্য কোনো উপায়ে নিয়মিত তামাক সেবন করে।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য সেবনের জন্য বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ৫৭ হাজার মানুষ মৃত্যু এবং প্রায় ৩ লাখ ৮২ হাজার মানুষ পঙ্গুত্ববরণ করে।

এছাড়াও একথা সবার কাছেই পরিচিত যে, ধূমপানের কারণে মানুষ মাদকের দিকে ঝুঁকছে। সে অর্থেই ধূমপানকে মাদকের প্রবেশদ্বার বলা হয়। অনেক গবেষণায় ধূমপানের সাথে অপরাধপ্রবণতার সংযোগ পাওয়া গেছে।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



রে