ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

‘অমরত্বের হ্যাটট্রিক’ করেই ফেলল রিয়াল

খেলা ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০১৮ মে ২৭ ১১:৩৯:৪১
‘অমরত্বের হ্যাটট্রিক’ করেই ফেলল রিয়াল

১৯৫৬ সালে ক্লাব ফুটবলের সবচেয়ে মর্যাদার এই টুর্নামেন্ট শুরু হওয়ার পর (তখন অবশ্য টুর্নামেন্টের নাম ছিল ইউরোপিয়ান কাপ) প্রথম ৫ বছরই শিরোপা জিতেছিল আলফ্রেডো ডি স্টেফানোর রিয়াল। ১৯৫৬ থেকে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত টানা ৫ শিরোপা জিতে অমরত্বের আসন পেয়ে যায় স্টেফানোদের রিয়াল। টানা তৃতীয় শিরোপা জিতে জিদানের এই দলও পেয়ে গেল অমরত্ব!

চরম পেশাদারিত্ব আর আধুনিক ফুটবলের জমজমাট প্রতিদ্বন্দ্বিতার এই যুগে টানা তিন বার ক্লাব শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট পরা অমরত্বই তো। তাছাড়া এই রিয়াল তো শুধু টানা তৃতীয় শিরোপা নয়, সর্বশেষ ৫ মৌসুমের মধ্যে ৪ বারই চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা ঘরে তুলল রিয়াল। এমন অবিশ্বাস্য কীর্তি অমরত্ব না তো কি!

তা ফুটবলপ্রেমীদের মনে এই প্রশ্নটা জাগতেই পারে, রিয়াল এই অমরত্বের জন্য কাকে বেশি কৃতিত্ব দেবে? জোড়া গোল করা গ্যারেথ বেলকে? নাকি লিভারপুল গোলরক্ষক লরিস কারিয়াসকে? কার্পণ্য না করে রিয়াল অবশ্য বেল-লরিস দুজনকেই সমভাবেই বিশেষ ধন্যবাদ জানাতে পারেন। রিয়ালের হ্যাটট্রিক শিরোপা জয়ে এই দুজনের অবদানই সমান। বেদলি হিসেবে নেমে বেল করেছেন জোড়া গোল। লরিসও করেছেন জোড়া গোল! লিভারপুলের জার্মান গোলরক্ষক ‘শিশুতোষ ভুলে’ রিয়ালকে দুটি গোল ‘উপহার’ দিয়েছেন আর কি!

ও হ্যাঁ, কৃপণতা না করে রিয়াল কৃতজ্তা জানাতে পারে ভাগ্য দেবতাকেও। ভাগ্যদেবীর কারসাজিই যদি না থাকবে, তাহলে লরিস এমন শিশুতোষ ভুল করবেন কেন? কেন বিশ্বমানের গোলরক্ষক লরিস হঠাৎ করেই পাড়ার গোলরক্ষক বনে যাবেন? কিয়েভে তিনি যে গোল দুটি লিভারপুলকে খাওয়ালেন, এমন হাস্যকর ভুল আসলে এখন পাড়ার ফুটবলের আনাড়ি গোলরক্ষকদেরও হয় না।

আসলে ভাগ্য দেবতা আগে থেকেই রিয়ালের জয় লিখে রেখেছিলেন। রিয়ালের খেলোয়াড়েরা সেই রাস্তা খুলতে না পারায় অদৃশ্যের পাখা মেলে তিনি তাই সওয়ার হন লরিসের কাঁধে। তাকে দিয়ে জোর করে করান ওই হাস্যকর দুটি ভুল!

ভাগ্য দেবতা যে অদৃশ্যে বসে রিয়ালের জন্যই মালা জপছিলেন, তার প্রমাণ মেলে আসলে ম্যাচের ২৫ মিনিটেই। ২৫ মিনিটের সময় রিয়ালের অধিনায়ক সার্জিও রামোসের সঙ্গে বল দখলের লড়াইয়ে পড়ে গিয়ে বাঁ-কাঁধে চোট পান লিভারপুলের সেরা খেলোয়াড় মোহাম্মেদ সালাহ।

যে চোট নিয়ে ম্যাচের ২৮ মিনিটে তাকে ছাড়তে হয়েছে মাঠই। মিশরীয় এই ফরোয়ার্ডের অবিশ্বাস্য জাদুতেই দীর্ঘ ১১ বছর পর চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে উঠে লিভারপুল। অথচ স্বপ্নের সেই ফাইনালেই কিনা চোট পেয়ে মাঠ ছাড়তে হলো লিভারপুলের স্বপ্নের কারিগরকে। সালাহ মাঠ ছাড়লেন কাঁদতে কাঁদতে।

সালাহকে হারানোর দুঃখ সামলে প্রথমার্ধটা সমানভাবেই শেষ করে লিভারপুল। তবে দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই লিভারপুলকে চেপে ধরে রিয়াল। সেই চাপের মধ্যেই ৫১ মিনিটে গোলরক্ষক লরিস কারিয়াস করে বসেন প্রথম মহা ভুল! লরিসের যে ভুলের ফসল হিসেবে রিয়ালকে ১-০ গোলে এগিয়ে দেন করিম বেনজেমা।

বল ধরে লরিস সতীর্থ খেলোয়াড়কে থ্রু করতে যান। তার কাছেই বেড়া বেড়া করছিলেন করিম বেনজোম। তারপরও ভুল করে বল থ্রু করে বসেন লরিস। ব্যস, বল বেনজেমার পায়ে লেগে ঢুকে যায় লিভারপুলের জালে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনাল স্বাক্ষী হলো গোলরক্ষকের শিশুতোষ এক ভুলের।

লরিসের এই দুঃখ-কষ্ট অবশ্য ৫৫ মিনিটেই মুছে দিয়েছিলেন সাদিও মানে। দারুণ এক গোল করে লিভারপুলকে সমতায় ফেরান সেনেগালিজ ফরোয়ার্ড। এর ৮ মিনিট পরই আবার রিয়ালের উৎসব। এবারের উৎসবের মধ্যমণি গ্যারেথ বেল। দুই মিনিট আগেই মাঠে নামা বেল রিয়ালকে আবার এগিয়ে দেন অবিশ্বাস্য এক ওভার-হেড কিক গোলে!

জুভেন্টাসের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম লেগে ওভার-হেড কিকে অবিশ্বাস্য এক গোল করে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো। কিয়েভের ফাইনালে বেলের গোলটিও ঠিক সেরকমই, অবিশ্বাস্য। এরপর ৮৩ মিনিটে আবার গোলরক্ষক লরিসের দ্বিতীয় মহাভুল! এবার তার ভুলে কৃতিত্ব কামিয়েছেন বেল।

ডি বক্সের অনেক বাইরে থেকে দূরপাল্লার শট নিয়েছিলেন বেল। বলটি লরিসের দিকে সোজাই গিয়েছিল। এর চেয়েও দ্রুত গতির শট অনায়াসেই গ্লাভস বন্দি করে ফেলেন লরিস। কিন্তু শনিবার কিয়েভে বল গ্লাভস বন্দী করা দূরের কথা, লরিস ঠেকাতেও পারেননি। বল তার হাতে লেগেও ঢূকে যায় জালে! রিয়াল এগিয়ে যায় ৩-১ গোলে। রিয়ালের হ্যাটট্রিক শিরোপা জয়ের রাস্তাটাও তৈরি হয়ে যায় তাতেই। ম্যাচ শেষে হতাশায়, লজ্জায় লরিস মাথা ঠুকলেন মাটিতে। তার হতাশাকে আরও গাঢ় করে ততক্ষণে রিয়ালের খেলোয়াড়েরা দল বেঁধে ‘হ্যাটট্রিক’ কীর্তির বাধভাঙা উল্লাসে মাতোয়ারা।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



রে