ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২

রাখাইন করিডোর: বাংলাদেশে নতুন নিরাপত্তা ঝুঁকি

জাতীয় ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০২৫ এপ্রিল ২৯ ১১:৪৮:৫৯
রাখাইন করিডোর: বাংলাদেশে নতুন নিরাপত্তা ঝুঁকি

নিজস্ব প্রতিবেদক: জাতিসংঘের অনুরোধে সীমান্ত খুলতে নীতিগত সম্মতি, তবে অজানা থেকে যাচ্ছে করিডোরের নিরাপত্তা, নজরদারি আর বাস্তব চিত্র। বিশেষজ্ঞরা বলছেন—মানবিক করিডোর নয়, যেন বিপদের ফাঁদ!

বাংলাদেশ সরকার মানবিক সহায়তা পৌঁছাতে মিয়ানমারের সংঘাতময় রাখাইন রাজ্যে একটি নতুন করিডোর খুলতে নীতিগত সম্মতি দিয়েছে। জাতিসংঘের অনুরোধে এ সিদ্ধান্তটি নেওয়া হলেও করিডোরের নিরাপত্তা, কার্যকারিতা ও সংশ্লিষ্ট তদারকি বিষয়ে এখনও অনেক প্রশ্ন উন্মুক্ত রয়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এটি যে শুধু মানবিক সহায়তা নয়, বরং জাতীয় নিরাপত্তার জন্যও একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

করিডোরের মাধ্যমে মানবিক সহায়তা, কিন্তু নিরাপত্তার প্রশ্নে অন্ধকারে

জাতিসংঘের নেতৃত্বে বাংলাদেশের মাধ্যমে করিডোর খোলার বিষয়টি ইতিমধ্যেই আলোচিত হয়েছে, তবে এটি বাস্তবায়নের পদ্ধতি এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে এখনও বিস্তারিত আলোচনা চলছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, জাতিসংঘের সঙ্গে শর্তসাপেক্ষে প্রাথমিক সম্মতি দেওয়া হলেও এই করিডোরের মাধ্যমে সহায়তা কীভাবে যথাযথ প্রাপকের কাছে পৌঁছানো যাবে, তা স্পষ্ট নয়।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, “নীতিগতভাবে আমরা সম্মতি দিয়েছি, তবে কিছু শর্ত রয়েছে, যেগুলো এখন প্রকাশ করা হচ্ছে না।” তিনি আরও জানান, করিডোর ব্যবস্থাপনা এবং নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়গুলি জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে চলবে।

বিশেষজ্ঞদের শঙ্কা: নিরাপত্তা ঝুঁকি হতে পারে মারাত্মক

বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, রাখাইন অঞ্চলে একটি মানবিক করিডোর খুললে তা আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়াতে পারে। মেজর জেনারেল (অব.) এম মুনিরুজ্জামান বলেন, “এ ধরনের একটি সিদ্ধান্ত খুবই স্পর্শকাতর। করিডোরের রুট, নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং কার্যকারিতা নিয়ে এখনও কোনও পরিষ্কার দিকনির্দেশনা পাওয়া যায়নি। রাজনৈতিক ঐকমত্য এবং জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে ব্যাপক আলোচনা প্রয়োজন।”

মিয়ানমার জান্তার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ হবে না

বাংলাদেশ সরকার স্পষ্ট করে জানিয়েছে, মিয়ানমারের জান্তা বা আরাকান আর্মির সঙ্গে সরাসরি কোনোরকম যোগাযোগ থাকবে না। মানবিক সহায়তার বিষয়টি শুধুমাত্র জাতিসংঘের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে পরিচালিত হবে। তবে, জাতিসংঘ জানিয়েছে যে রাখাইনের অর্থনীতি কার্যত ভেঙে পড়েছে এবং সেখানে খাদ্য সংকট ও মূল্যস্ফীতি ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়েছে, ফলে সহায়তার প্রয়োজনীয়তা আরও তীব্র হয়ে উঠেছে।

মানবিক করিডোর বা নিরাপত্তা বিপদ?

বিশ্লেষকরা একাধিক দিক থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, মিয়ানমারের রাখাইন অঞ্চলটি দীর্ঘদিন ধরে মাদক, অবৈধ অস্ত্র পাচারের রুট হিসেবে পরিচিত। এ অঞ্চলে কোনও স্বীকৃত প্রশাসন না থাকায় নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠছে। বিশেষজ্ঞরা জানান, যদি করিডোর চালু হয়, তবে বাংলাদেশে এই অবৈধ কার্যক্রমের বিস্তার ঘটতে পারে।

মেজর জেনারেল (অব.) এম মুনিরুজ্জামান আরও বলেন, “যেমন গাজায় হামাস এবং ইসরায়েল একটি সমঝোতার ভিত্তিতে মানবিক সহায়তা পাঠিয়েছে, তেমনি রাখাইনেও কার্যকর করিডোর চালু করতে হলে জান্তা সরকার ও আরাকান আর্মির সম্মতি প্রয়োজন। এটি একটি অত্যন্ত জটিল ও স্পর্শকাতর পরিস্থিতি।”

রাখাইনে দানা বাঁধছে দুর্ভিক্ষের ভয়, সীমান্তে চাপ বাড়ছে

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, রাখাইন রাজ্যে খাদ্য ও প্রয়োজনীয় পণ্য প্রবেশে বাধা সৃষ্টি হওয়ার কারণে ভয়াবহ মূল্যস্ফীতি এবং দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এর ফলে রোহিঙ্গা ছাড়াও অন্যান্য জনগণ বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টা করতে পারে, যার ফলে সীমান্তে চাপ আরও বাড়তে পারে।

এছাড়াও, ২০২৩ ও ২০২৪ সালে বাংলাদেশ হয়ে ইউনিসেফ এবং ইউএনডিপি মিয়ানমারে সহায়তা পাঠালেও, মিয়ানমার জান্তা সরকার ২০২৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে তা আটকে দেয়, ফলে সহায়তার প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়।

একটি ঝুঁকিপূর্ণ পদক্ষেপ

এখন প্রশ্ন উঠছে, মানবিক সহায়তা পাঠানোর জন্য খুলে দেওয়া এই করিডোর কতটা নিরাপদ? বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যদি সিদ্ধান্তটি গৃহীত হয়, তবে তা বাংলাদেশের জন্য একটি বড় নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে, এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন ও সহযোগিতার উপর নির্ভরশীল থাকবে।

এখন কী হবে?

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, জাতিসংঘের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে, বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, একটি পরিষ্কার নিরাপত্তা কাঠামো ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার স্বার্থে আরও গভীর ও বৈচিত্র্যময় আলোচনা প্রয়োজন।

আব্দুর রহিম/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

বিনিয়োগকারীদের জন্য ৫% নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা

বিনিয়োগকারীদের জন্য ৫% নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা

নিজস্ব প্রতিবেদক: কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্সের ৫% ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য ৫ শতাংশ... বিস্তারিত