ঢাকা, রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ১৪ বৈশাখ ১৪৩২

বিএসইসি চেয়ারম্যানের মার্কিন সফর, শেয়ারবাজারে বিতর্ক

শেয়ারবাজার ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০২৫ এপ্রিল ২৭ ১৫:৩২:৫৪
বিএসইসি চেয়ারম্যানের মার্কিন সফর, শেয়ারবাজারে বিতর্ক

নিজস্ব প্রতিবেদক:

সংকটকালে বিদেশ সফর নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ বিনিয়োগকারীদের।

বাংলাদেশের শেয়ারবাজার যখন গভীর সংকটে, ঠিক তখন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সরকারি খরচে বিদেশ সফর এবং প্রশিক্ষণ অংশগ্রহণ নিয়ে উঠেছে তীব্র সমালোচনা। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ ঘটনা শেয়ারবাজারের ইতিহাসে নজিরবিহীন এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থার ওপর বড় আঘাত।

সাধারণত কর্মকর্তারা যান প্রশিক্ষণে, এবার যাচ্ছেন চেয়ারম্যান!

সাধারণত, বিএসইসির সহকারী পরিচালক থেকে পরিচালক পর্যায়ের কর্মকর্তারাই আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করে থাকেন। নির্বাহী পরিচালকদের অংশগ্রহণও যেখানে অত্যন্ত বিরল, সেখানে নিয়ন্ত্রক সংস্থার সর্বোচ্চ পদে থাকা চেয়ারম্যানের সরাসরি অংশগ্রহণে শেয়ারবাজারে তৈরি হয়েছে হাস্যরসের আবহ।

এ বিষয়ে এক শীর্ষ মার্চেন্ট ব্যাংকের সিইও অর্থ বাণিজ্যকে বলেন,

"চেয়ারম্যানদের জন্য প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ অস্বাভাবিক। যদি চেয়ারম্যানকেই শিখতে হয়, তাহলে তার পূর্ববর্তী অভিজ্ঞতা নিয়েই প্রশ্ন ওঠে।"তিনি আরও বলেন, "পৃথিবীর কোনো দেশের এসইসিতে এমন নজির পাওয়া যায় না, এমনকি বাংলাদেশের ইতিহাসেও নয়।"

'রাশেদ মাকসুদের প্রশিক্ষণের প্রয়োজন আছে' — বলছেন ব্রোকারেজ সিইও

এদিকে এক শীর্ষ ব্রোকারেজ হাউজের সিইও মন্তব্য করেছেন,

"রাশেদ মাকসুদের শেয়ারবাজার বিষয়ে জ্ঞানের ঘাটতি রয়েছে। তাই তার প্রশিক্ষণে যাওয়া প্রয়োজন হতে পারে।"

এই মন্তব্য আরও জোরালো করেছে বাজারে তাঁর নেতৃত্ব নিয়ে চলমান প্রশ্নের।

যুক্তরাষ্ট্র ও কাতারে দুই দফা সফর

জানা গেছে, আগামী ৫ মে থেকে ৯ মে পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ‘৩১তম ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর সিকিউরিটিজ মার্কেট গ্রোথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’ প্রোগ্রাম। ইউএস সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের আয়োজনে এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের জন্য বিএসইসির অফিসারদের আমন্ত্রণ জানানো হলেও, এবার সরাসরি অংশ নেবেন চেয়ারম্যান নিজেই।

এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষে ১২ থেকে ১৫ মে কাতারের দোহায় অনুষ্ঠিতব্য আইওএসসিও (IOSCO) ৫০তম বার্ষিক সম্মেলনেও অংশ নেবেন তিনি। এর ফলে পুরো সফর মিলিয়ে চেয়ারম্যানের জন্য ১১ দিনের ছুটি অনুমোদন দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।

২০ এপ্রিল জারি করা চিঠিতে বলা হয়েছে, সফরের সময় চেয়ারম্যান কর্মরত হিসেবে বিবেচিত হবেন, পাবেন সম্পূর্ণ বেতন-ভাতা এবং তার সফরের যাবতীয় ব্যয় বহন করবে বিএসইসি।

বাজারে ধস, বিনিয়োগকারীদের হতাশা, চেয়ারম্যানের বিদেশ সফর!

শেয়ারবাজারের বর্তমান নাজুক অবস্থায় যখন বিনিয়োগকারীরা ক্ষতির ভারে জর্জরিত, তখন নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রধানের সরকারি খরচে টানা বিদেশ সফর বাজারের স্থিতিশীলতার আশায় জল ঢেলে দিয়েছে।

অনেক বিনিয়োগকারী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেছেন:

"বাজার পড়ে, চেয়ারম্যান উড়ে!"

বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এমন সময় সংকট নিরসনে কার্যকর উদ্যোগের বদলে বিদেশ সফর জনসচেতনতা এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা দুই-ই ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

শেয়ারবাজারের কঠিন সময়ে যখন নেতৃত্ব প্রয়োজন ছিল, তখন সরকারি টাকায় বিদেশ ভ্রমণের এমন ঘটনা নিয়ন্ত্রক সংস্থার ওপর জনগণের আস্থা আরও কমিয়ে দিল। এখন দেখার বিষয়, এই সফর শেষ করে দেশে ফিরে চেয়ারম্যান বাজারে কী পরিবর্তন আনতে পারেন, নাকি সমালোচনার মাত্রা আরও বাড়ে।

রাজিব/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ