ঢাকা, রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ১৪ বৈশাখ ১৪৩২

টানা দরপতনে বিপর্যস্ত শেয়ারবাজার, তিন সপ্তাহে উধাও ১০ হাজার কোটি!

শেয়ারবাজার ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০২৫ এপ্রিল ২৭ ১০:২৪:১১
টানা দরপতনে বিপর্যস্ত শেয়ারবাজার, তিন সপ্তাহে উধাও ১০ হাজার কোটি!

নিজস্ব প্রতিবেদক:

ডিএসইতে ৮১% কোম্পানির শেয়ারদর কমেছে, বিনিয়োগকারীদের হতাশা চরমে।

ঈদের ছুটি শেষে বিনিয়োগকারীরা যখন বাজারে ফিরলেন, তখন যেন নেমে এলো এক দীর্ঘ অন্ধকার। দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) টানা দরপতনের ধাক্কায় বিনিয়োগকারীদের মনোবল ভেঙে পড়েছে।

গত তিন সপ্তাহে বাজারের অবস্থা এতটাই করুণ যে, ৮১ শতাংশ কোম্পানির শেয়ারদর কমেছে। বিনিয়োগকারীদের ভাষায়, বাজারে এখন 'ভালো-মন্দ' বলে কিছু নেই — সবই নিম্নমুখী।

তিন সপ্তাহেই ১০ হাজার কোটি টাকার বাজারমূলধন উধাও

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, গত সপ্তাহে ৩৯৬টি কোম্পানির মধ্যে ৩২৪টির শেয়ারদর কমেছে, বেড়েছে

মাত্র ৫৭টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৫টি।

ফলে বাজার মূলধন কমে দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৬৩ হাজার ৪৫০ কোটি টাকায়, যা আগের সপ্তাহের তুলনায় ৭ হাজার ৮৬ কোটি টাকা কম।

ঈদের পর মাত্র তিন সপ্তাহেই বাজার থেকে মুছে গেছে প্রায় ১০ হাজার ৪১৬ কোটি টাকা!

সপ্তাহ বাজার মূলধন কমেছে

সূচকের পতনে বিনিয়োগকারীদের শ্বাসরোধ

শুধু বাজার মূলধন নয়, সূচকেও ধস নেমেছে।

গত তিন সপ্তাহে প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স কমেছে ২৩৫ পয়েন্ট।

গত সপ্তাহেই কমেছে ১২৪.৭৩ পয়েন্ট।

আগের সপ্তাহে ১০৭.৯০ পয়েন্ট।

তারও আগের সপ্তাহে কমে ১৩.৯৩ পয়েন্ট।

শরিয়াহ ভিত্তিক ডিএসই শরিয়াহ সূচক কমেছে ৩৯.০১ পয়েন্ট, আর বড় কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক কমেছে ৩০.৩৮ পয়েন্ট।

লেনদেনেও স্থবিরতা, কমেছে ১৩.৮৮ শতাংশ

লেনদেনের গতি কমেছে উদ্বেগজনকভাবে।

গত সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ৩৪৩ কোটি ৬৩ লাখ টাকা, যা আগের সপ্তাহের তুলনায় ৫৫ কোটি ৪১ লাখ টাকা কম।

শতাংশের হিসাবে কমেছে ১৩.৮৮ শতাংশ।

লেনদেনের শীর্ষে থাকা ১০ কোম্পানি:

বিচ হ্যাচারি

মিডল্যান্ড ব্যাংক

বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন

শাহজীবাজার পাওয়ার

শাইন পুকুর সিরামিকস

ফাইন ফুড

এসিআই

বেক্সিমকো ফার্মা

ব্র্যাক ব্যাংক

লাভেলো আইসক্রিম

নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রতিক্রিয়া: বাজারের নিয়মেই চলুক বাজার

এ অবস্থায় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) পরিচালক ও মুখপাত্র মো. আবুল কালাম ইত্তেফাককে বলেন,

"বর্তমান কমিশন বাজারে সরাসরি হস্তক্ষেপ করবে না। বাজার চলবে বাজারের নিজস্ব নিয়মে।"

তিনি জানান, বাজারের উন্নয়নে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে, যারা ইতিমধ্যে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। পুরো প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে আশ্বস্ত করেছেন তিনি।

বিনিয়োগকারীদের প্রশ্ন: কোথায় বাজারের আশা?

পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা বলছেন,

দেশের অর্থনৈতিক চাপ

তারল্য সংকট

বিনিয়োগকারীদের আস্থার ঘাটতি

এবং বৈশ্বিক অনিশ্চয়তা

সব মিলিয়ে বাজারে তৈরি হয়েছে দীর্ঘমেয়াদি চাপ।

বিশ্লেষকদের মতে, এখন প্রয়োজন:

তারল্য সরবরাহ বাড়ানো

বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরানো

এবং পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা।

বিনিয়োগকারীরা এখন অধীর অপেক্ষায় — বাজার কি আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবে?নাকি এ দরপতনের অন্ধকার আরও দীর্ঘায়িত হবে?

মো: রাজিব আলী/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ