ঢাকা, রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ১৪ বৈশাখ ১৪৩২

বাংলাদেশের প্রথম নির্বাসিত কবি দাউদ হায়দার মারা গেছেন

জাতীয় ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০২৫ এপ্রিল ২৭ ০৯:৫৮:২৪
বাংলাদেশের প্রথম নির্বাসিত কবি দাউদ হায়দার মারা গেছেন

নিজস্ব প্রতিবেদক:

দীর্ঘ অসুস্থতার পর বার্লিনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন কবি দাউদ হায়দার।

বাংলাদেশের প্রথম নির্বাসিত কবি, আধুনিক বাংলা কবিতার অন্যতম পথপ্রদর্শক দাউদ হায়দার আজ পৃথিবী থেকে চিরতরে বিদায় নিলেন (ইন্না-লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। ৭৩ বছরের জীবনে তিনি বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন, আর তার লেখা হাজারো পাঠক হৃদয়ে অমলিন হয়ে থাকবে। শনিবার (২৬ এপ্রিল) রাতে জার্মানির বার্লিনে একটি রিহ্যাবিলিটেশন হোমে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই কিংবদন্তি কবি।

কবি দাউদ হায়দারের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন লন্ডন প্রবাসী নাট্যশিল্পী ও সংগঠক স্বাধীন খছরু। বার্লিনে তার অত্যন্ত স্নেহভাজন সংস্কৃতিকর্মী ও শিল্পী মাইন চৌধুরী পিটু জানান, কবি দীর্ঘদিন ধরে শারীরিক অসুস্থতার সঙ্গে যুদ্ধ করছিলেন। গত ডিসেম্বরে সিঁড়িতে পড়ে যাওয়ার পর তার শারীরিক অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যায়, এবং শনিবার সন্ধ্যায় তার অবস্থার গুরুতর অবনতি ঘটে। এরপর, তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

দাউদ হায়দারের মরদেহ বার্লিনে দাফন করা হবে, তবে তার শেষ বিদায় কোথায় এবং কখন হবে, সে সিদ্ধান্ত পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে নেয়া হবে।

বাংলা কবিতার ইতিহাসে দাউদ হায়দারের অবদান অসামান্য। সত্তর দশকের কবি হিসেবে তিনি ছিলেন এক বিপ্লবী কণ্ঠ। ১৯৭৩ সালে তার কবিতা ‘কালো সূর্যের কালো জ্যোত্স্নায় কালো বন্যায়’ প্রকাশিত হলে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়, যা ছিল বাংলা সাহিত্যের একটি উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক মুহূর্ত। ১৯৭৪ সালে তাকে মুক্তি দিয়ে কলকাতার উদ্দেশে বহিষ্কার করা হয়, এবং পরে গুন্টার গ্রাসের সাহায্যে তিনি ১৯৮৭ সালে জার্মানিতে আশ্রয় নেন।

দাউদ হায়দারের কবিতায় একদিকে ছিল সমাজের প্রতি গভীর সমালোচনা, অন্যদিকে মানবিক দুঃখ ও কষ্টের একটি ব্যতিক্রমী প্রতিফলন। “জন্মই আমার আজন্ম পাপ” তার অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবিতা, যা এখনো পাঠকদের হৃদয়ে জীবন্ত।

বিগত দশকগুলোতে দাউদ হায়দার বাংলা ট্রিবিউনে নিয়মিত কলাম লিখতেন, যেখানে তার চিন্তা ও দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরতেন। সত্তর দশকের সাহিত্যিক দৃষ্টিভঙ্গি ও রাজনৈতিক সক্রিয়তার প্রতি তার অবিচলিত মনোভাব তাকে এক বিশেষ স্থান দিয়েছে বাংলা সাহিত্যের পৃষ্ঠায়।

আজ, কবি দাউদ হায়দারের মৃত্যুর মাধ্যমে বাংলা সাহিত্য একটি অমূল্য রত্ন হারাল। তবে তার লেখা, তার চিন্তা ও অনুভূতি চিরকাল আমাদের মনে অমর হয়ে থাকবে, এবং তিনি যে পথটি তৈরি করে গেছেন, তা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আরও একবার সাহিত্যের গভীরে ভ্রমণ করতে অনুপ্রাণিত করবে।

বাংলা কবিতার এই মহান কণ্ঠস্বরকে আমরা চিরকাল স্মরণ রাখবো।

আব্দুল সাত্তার/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ