ঢাকা, রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ১৩ বৈশাখ ১৪৩২

ভুল তথ্যের ছড়াছড়ি: জামায়াত ও শেখ হাসিনাকে ঘিরে সবচেয়ে বেশি গুজব

রাজনীতি ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০২৫ এপ্রিল ২৬ ২০:৫৩:৩৯
ভুল তথ্যের ছড়াছড়ি: জামায়াত ও শেখ হাসিনাকে ঘিরে সবচেয়ে বেশি গুজব

নিজস্ব প্রতিবেদক: চলতি বছরের শুরুতেই ভুল তথ্য ছড়ানোর হিড়িক পড়েছে বাংলাদেশে। ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানারের এক চমকপ্রদ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ২০২৫ সালের প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) ভুল তথ্য ছড়ানোর হার আগের প্রান্তিকের তুলনায় ২১ শতাংশ এবং গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৮ শতাংশ বেড়েছে।

তিন মাসে মোট ৮৩৭টি ভুল তথ্য শনাক্ত করে রিউমর স্ক্যানার বলছে, ব্যক্তি হিসেবে শেখ হাসিনা এবং রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীকে ঘিরে ছড়ানো হয়েছে সবচেয়ে বেশি ভুয়া তথ্য।

শেখ হাসিনাকে ঘিরে ইতিবাচক ‘গুজবের বন্যা’

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে নিয়ে যেসব ভুল তথ্য ছড়িয়েছে, তার ৮০ শতাংশই ছিল ইতিবাচক। বিভিন্ন ভুয়া খবর ও পোস্টে তাঁকে প্রশংসার সুরে উপস্থাপন করা হয়েছে, যদিও সেগুলোর অনেকগুলোরই বাস্তবতার সঙ্গে মিল নেই।

জামায়াতের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি অপপ্রচার

রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভুল তথ্য ছড়ানো হয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে। দলটির পাশাপাশি তাদের সহযোগী সংগঠন ও নেতাকর্মীদের নিয়েও ছড়ানো হয়েছে অন্তত ৮১টি বিভ্রান্তিকর ও মিথ্যা তথ্য। তালিকায় এরপর রয়েছে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ ও বিএনপি।

ফেসবুকেই সবচেয়ে বেশি গুজব

ভুল তথ্য ছড়ানোর সবচেয়ে বড় প্ল্যাটফর্ম হিসেবে উঠে এসেছে ফেসবুকের নাম। এই প্ল্যাটফর্মে একাই ৭৪৮টি ভুয়া তথ্য শনাক্ত হয়েছে। গড়ে প্রতিদিন আটটিরও বেশি ভুল তথ্য ছড়িয়েছে শুধু ফেসবুকে!

এরপরে এক্স (১৬২টি), ইউটিউব (১২৪টি) এবং টিকটক ও ইনস্টাগ্রামে (৬৭টি করে) ভুল তথ্য ছড়ানোর ঘটনা মিলেছে।

রাজনীতি-জাতীয় ইস্যুতে ভরা বিভ্রান্তি

রিউমর স্ক্যানারের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, প্রথম প্রান্তিকে ছড়ানো ভুল তথ্যের ৪১ শতাংশই ছিল সরাসরি রাজনৈতিক ইস্যু ঘিরে। জাতীয় নানা ইস্যুতে ২৯ শতাংশ এবং ধর্মীয় ইস্যুতে ৯ শতাংশ ভুল তথ্য ছড়ানো হয়েছে।

সরকারের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারণা

চলতি বছরের শুরুতে অন্তর্বর্তী সরকারকে ঘিরে ৪৪টি ভুল তথ্য ছড়ানো হয়েছে, যার ৯৩ শতাংশই ছিল স্পষ্টভাবে নেতিবাচক। একই সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিশেষ করে সেনাবাহিনীকে কেন্দ্র করেও প্রচারিত হয়েছে একের পর এক মিথ্যা তথ্য — সর্বমোট ৬০টি ভুল তথ্য শনাক্ত হয়েছে, যার মধ্যে ৪২টি সেনাবাহিনী নিয়ে।

গণমাধ্যমেরও গুজবের দায়

ভুল তথ্য ছড়ানোর দায় থেকে রেহাই পায়নি গণমাধ্যমও। দেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে গত তিন মাসে ৪২টি ভুল তথ্য, ছবি ও ভিডিও ছড়ানোর ঘটনা চিহ্নিত হয়েছে।এ ছাড়া ভারতের ২৩টি গণমাধ্যমও বাংলাদেশকে ঘিরে অন্তত ৩৮টি অপতথ্য ছড়িয়েছে। এর মধ্যে ‘আজতক বাংলা’ একাই ছড়িয়েছে ৮টি বিভ্রান্তিকর খবর।

ভুয়া ফটোকার্ড দিয়ে গণমাধ্যমের নাম ব্যবহার

প্রথম প্রান্তিকে গণমাধ্যমের নাম, লোগো এবং শিরোনাম নকল করে ভুয়া ফটোকার্ড ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ১১৮টি ঘটনার মধ্যে। এতে দেশি ও বিদেশি মিলিয়ে ৩৯টি সংবাদমাধ্যমের নাম জড়িয়ে ১৩৫টি ভুল তথ্য ছড়ানো হয়েছে।

রিউমর স্ক্যানারের এই প্রতিবেদন বাংলাদেশে তথ্যযুদ্ধের বাস্তব চিত্র স্পষ্ট করে তুলে ধরছে। এখন সময় — তথ্য যাচাই করে কথা বলার, বিভ্রান্তি এড়িয়ে সচেতনতার পথে এগিয়ে চলার।

মোঃ গোলাম রাব্বানী/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ