বাংলাদেশকে ভারত কীভাবে ফাঁদে ফেলে রেখেছে?

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক: ভারতের প্রভাব ও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক মুক্তির পথ

বাংলাদেশের অর্থনীতি বর্তমানে একটি কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি। দেশের উন্নয়ন ও স্বাধীনতার জন্য অনেকটা কঠিন সংগ্রাম করতে হচ্ছে। এই সংগ্রামের মধ্যে অন্যতম একটি চ্যালেঞ্জ হচ্ছে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত। বাংলাদেশের অর্থনীতি, বিদ্যুৎ, পানি বণ্টন, বন্দরের ব্যবহার এবং বাণিজ্যিক সিদ্ধান্তগুলোর পেছনে ভারতের প্রভাব প্রায়ই অদৃশ্য থাকে, কিন্তু এর ফলাফল গভীরভাবে অনুভূত হয় প্রতিদিনের জীবনে।

বাংলাদেশের জন্য ভারতীয় প্রভাব: এক বন্ধুত্ব নাকি একতরফা নিয়ন্ত্রণ?

ঢাকার উঁচু ভবনগুলোর জানালায় রাতের আলো জ্বললেও, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক হৃদপিণ্ডে এক অদৃশ্য শত্রু তার প্রভাব বিস্তার করে চলছে। এই শত্রু ব্যক্তিগত কোনো নেতা বা প্রতিষ্ঠান নয়, বরং প্রতিবেশী দেশ ভারত। ভারতের প্রভাব বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে—চুক্তি, পানি বণ্টন, বন্দরের ব্যবহার, বিদ্যুৎ আমদানি—সবকিছুতেই এক গভীর প্রভাব রেখে যাচ্ছে।

চট্টগ্রাম বন্দর এবং রেলপথের সুবিধা—বাংলাদেশ এগুলো ভারতকে দেয়, কিন্তু পাল্টা কী পায়? শুধুই প্রতিশ্রুতি আর একতরফা বাধা। যখনই বাংলাদেশ তার পায়ে দাঁড়াতে চেয়েছে, ভারত সেই সুযোগকে আটকে দিয়েছে। যেমন, চট্টগ্রাম বন্দর ভারত ব্যবহার করছে, কিন্তু যখন দেখেছে বাংলাদেশ নিজেদের শক্তিতে এগিয়ে যাচ্ছে, তখনই একতরফা ভাবে সেই সুবিধা আটকে দিয়েছে।

তিস্তা পানি: একটি চিরন্তন প্রতারণা

তিস্তা নদীর পানি নিয়ে ভারতের খেলা যেন এক প্রতারণার গল্প। প্রতি বছর চুক্তি, আলোচনা, হাসিমুখে ছবি তোলা—সব কিছুই ঘটছে, কিন্তু মাঠে ফলাফল নেই। ভারত পানি আটকে রেখে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের কৃষকদের হতাশার মধ্যে ফেলছে। পানি না থাকলে ধান বা পাট হয় না, এবং মানুষের ঘরে খাবারের সংকট দেখা দেয়।

বিদ্যুৎ খাতে ভারতীয় নিয়ন্ত্রণ: বাংলাদেশের জন্য এক বিপদজনক চুক্তি

বিদ্যুৎ খাতে ভারতীয় আদানি গ্রুপের সঙ্গে করা চুক্তি বাংলাদেশের জন্য একটি বড় সংকট হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই চুক্তিতে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ ব্যবহারের জন্য অর্থ পরিশোধ না করলেও, সে পরিমাণ টাকা দিতে বাধ্য। একদিকে, ইউনিট প্রতি দাম অনেক বেশি, অন্যদিকে সরবরাহের নিশ্চয়তা নেই। এটি বাংলাদেশের জন্য শুধু ব্যয়বহুল নয়, একতরফা বোঝাও বটে।

ভারতীয় পণ্যের আধিপত্য: বাংলাদেশের বাজারে কী চলছে?

বাংলাদেশের বাজারে ভারতীয় পণ্যের ব্যাপক প্রবাহ দেখা যাচ্ছে। মানহীন সাবান, নকল কসমেটিক্স, রাসায়নিক মেশানো খাবার—এসবের ঢল নেমেছে। প্রতিবছর ভারত থেকে কয়েক বিলিয়ন ডলারের পণ্য ঢুকছে, কিন্তু বাংলাদেশ যখন নিজেদের পণ্য রপ্তানি করতে চায়, তখনই শুরু হয় শুল্ক ট্যাক্স এবং লাইসেন্সের বাধা। ভারত তার পণ্য সস্তায় বাংলাদেশে বিক্রি করে, আবার প্রয়োজন হলে রপ্তানি বন্ধ করে দেয়, যা বাংলাদেশের কৃষক ও ব্যবসায়ীদের জন্য ক্ষতির কারণ।

রাজনৈতিক প্রভাব: বাংলাদেশে ভারতীয় হস্তক্ষেপ

ভারত শুধু অর্থনীতিতেই নয়, বাংলাদেশের রাজনীতিতেও হস্তক্ষেপ করেছে। ভারত নিশ্চিত করতে চায় যে কোন দল বা সরকার থাকলে তাদের স্বার্থ রক্ষা হবে। এটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে চাপ সৃষ্টি করছে, যা স্বাধীনতার জন্য এক বড় বিপদ।

এক নতুন সকাল: প্রফেসর ইউনুসের নেতৃত্বে মুক্তির পথ

কিন্তু এই অন্ধকারের শেষে একটি আলোর রেখা দেখা দিয়েছে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট, অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে ক্ষমতা আসার পর প্রফেসর মোহাম্মদ ইউনুস বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ভারতের প্রভাব থেকে মুক্ত করার স্বপ্ন দেখেন। তার নেতৃত্বে, বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন ধীরে ধীরে শক্তিশালী হচ্ছে। রেমিটেন্স, রপ্তানি, এবং দেশীয় শিল্প এখন এক নতুন ধারা অনুসরণ করছে।

উনুসের নীতি স্বচ্ছ, দৃঢ় এবং সম্পর্কের সমতার ভিত্তিতে ভারতীয় সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার পক্ষে। তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে, বাংলাদেশের ভবিষ্যত থাকবে দেশের নিজস্ব শক্তিতে।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা: ফিরে আসছে আত্মমর্যাদা

এখন আর ভারতের ছায়ায় ঢাকা পড়ে থাকতে হবে না। প্রফেসর ইউনুসের নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্থনীতি শক্তিশালী হচ্ছে। তিস্তা পানি আর বিদ্যুৎ খাতের নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্তি পাওয়ার পথে বাংলাদেশ এখন দৃঢ় পদক্ষেপ নিচ্ছে। বাংলাদেশ তার জনগণের কণ্ঠস্বরকে তুলে ধরেছে, যারা চায় স্বাধীনতা, মর্যাদা আর সমতা।

বাংলাদেশ বর্তমানে ভারতের প্রভাব থেকে মুক্তি পাওয়ার পথে এক নতুন যাত্রা শুরু করেছে। প্রফেসর ইউনুস এর নেতৃত্বে, দেশ তার অর্থনৈতিক শক্তি অর্জনের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। ভারতীয় প্রভাবের বিপরীতে, বাংলাদেশ নিজস্ব শক্তিতে দাঁড়ানোর জন্য প্রস্তুত।

আল-আমিন ইসলাম/