ঢাকা, শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ১২ বৈশাখ ১৪৩২

দাজ্জাল কোথায় আছেন? নবী মুহাম্মদ (সা.) আগেই জানিয়েছিলেন

২০২৫ এপ্রিল ২৫ ২২:৪৬:৪১
দাজ্জাল কোথায় আছেন? নবী মুহাম্মদ (সা.) আগেই জানিয়েছিলেন

নিজস্ব প্রতিবেদক:

নবী (সা.) এর পূর্বাভাস অনুযায়ী দাজ্জালের অবস্থান নিয়ে যা বলেছিলেন।

কেয়ামতের আগমনের আগে মানবজাতিকে যিনি সবচেয়ে ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে ফেলবেন, তিনি হলেন দাজ্জাল। হাদিসে তার সম্পর্কে এমন সব বর্ণনা পাওয়া যায়, যা সত্যিই শঙ্কাজনক। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রায় ১৪০০ বছর আগে উম্মতকে দাজ্জালের ফিতনা সম্পর্কে সতর্ক করে গেছেন। তিনি বলেন, দাজ্জাল এমন অলৌকিক শক্তির প্রদর্শন করবে যা দেখে মানুষ তাকে ‘আল্লাহ’ মনে করতে শুরু করবে।

হাদিসে দাজ্জালের আগমনের সময়কাল নিয়ে বলা হয়েছে, সে পৃথিবীতে মাত্র ৪০ দিন থাকবে। কিন্তু এই অল্প সময়েই সে পৃথিবীজুড়ে ভয়াবহ ফিতনা সৃষ্টি করবে। রাসূল (সা.) স্পষ্ট করে বলেছেন, দুনিয়ার ইতিহাসে দাজ্জালের মতো বড় ফিতনা আর কখনো আসেনি এবং কেয়ামতের আগ পর্যন্ত আর আসবেও না।

দাজ্জালের অনুসারীরা কারা হবে?

বিভিন্ন হাদিসের বর্ণনায় দাজ্জালের অনুসারীদের পরিচয় দেওয়া হয়েছে। অধিকাংশ অনুসারী হবে ইহুদি ও নারী। হাদিসে বলা হয়েছে, ইরানের ইস্পাহান অঞ্চল থেকে ৭০ হাজার ইহুদি দাজ্জালের অনুসারী হবে। তাদের পরণে থাকবে বিশেষ সেলাইবিহীন পোশাক।

তামিম আদ্দারীর অভিজ্ঞতা ও রহস্যময় দ্বীপ

তামিম আদ্দারী (রাযি.), যিনি পূর্বে একজন খ্রিস্টান ছিলেন, ইসলাম গ্রহণের পর রাসূল (সা.)-এর নিকট এক আশ্চর্য ঘটনা বর্ণনা করেন। তিনি জানান, একবার ৩০ জন নাবিকসহ একটি জাহাজে যাত্রাকালে তারা সমুদ্রে পথ হারিয়ে ফেলেন এবং এক মাস পর একটি অচেনা দ্বীপে পৌঁছান।

সেই দ্বীপে তারা এক অদ্ভুত পশমে ঢাকা প্রাণীর সাক্ষাৎ পান। প্রাণীটি নিজের পরিচয় দেয় "চাচাজ" বা সংবাদ সংগ্রাহক হিসেবে এবং তাদের একটি গুহার দিকে নিয়ে যায়। গুহার ভেতরে তারা দেখতে পান এক দৈত্যাকার মানুষ, যাকে লোহার শিকলে বাঁধা। তার সঙ্গে সংলাপে জানা যায়, সেই মানুষটি নিজেকে পরিচয় দেয় মাসীহ দাজ্জাল হিসেবে।

দাজ্জালের প্রশ্ন ও ভবিষ্যদ্বাণী

তামিম আদ্দারী (রাযি.) ও তার সঙ্গীরা যখন দাজ্জালের মুখোমুখি হন, তখন দাজ্জাল তাদের কাছে বেশ কিছু প্রশ্ন করেছিলেন। এই প্রশ্নগুলির মাধ্যমে সে পৃথিবীর ভবিষ্যত সম্পর্কে কিছু পূর্বাভাস দিয়েছিল। আসুন, দেখে নেওয়া যাক দাজ্জালের প্রশ্ন ও তার সঙ্গে সম্পর্কিত উত্তরগুলি:

১. বাইসানের খেজুর বাগান এখনো খেজুর দেয় কি না?

দাজ্জাল তাদের থেকে জানতে চেয়েছিলেন, বাইসানের খেজুর বাগানে এখনো খেজুর ফলছে কি না। এর উত্তর ছিল, "হ্যাঁ, সেখানে এখনও খেজুর ফলছে"।

ভবিষ্যদ্বাণী:

দাজ্জাল এরপর বলেছিলেন, "সেদিন বেশি দূরে নয় যেদিন এই বাগানে আর খেজুর ফলবে না"। অর্থাৎ, ভবিষ্যতে বাইসানের খেজুর বাগান তার ফলন হারাবে, যা দাজ্জালের আগমনের একটি সংকেত হতে পারে।

২. তাবারিয়া হ্রদে পানি আছে কি না?

দাজ্জাল আবার জানতে চেয়েছিলেন, তাবারিয়া হ্রদে এখনো পানি রয়েছে কি না। তার উত্তরে তারা বলেছিলেন, "হ্যাঁ, সেখানে প্রচুর পানি রয়েছে"।

ভবিষ্যদ্বাণী:

এবং দাজ্জাল বলেছিলেন, "সেদিন বেশি দূরে নয় যেদিন ওই সাগরে পানি থাকবে না"। এটি তার ভবিষ্যদ্বাণী ছিল যে তাবারিয়া হ্রদ বা অন্যান্য জলাশয় শুকিয়ে যাবে, যা পৃথিবীর প্রকৃতিক বিপর্যয়ের এক প্রমাণ হিসেবে দেখা হতে পারে।

৩. জোগাড় ঝর্ণার পানি দিয়ে কৃষিকাজ হয় কি না?

দাজ্জাল আরও জানতে চেয়েছিলেন, জোগাড় ঝর্ণার পানি দিয়ে কি কৃষিকাজ করা হচ্ছে। তারা উত্তর দিয়েছিলেন, "হ্যাঁ, সেখানে প্রচুর পানি রয়েছে এবং সেখানে চাষাবাদও হয়"।

ভবিষ্যদ্বাণী:

দাজ্জাল তখন বলেছিলেন, "সেদিন বেশি দূরে নয় যেদিন ওই ঝর্ণার পানি শুকিয়ে যাবে"। এটি এমন এক ভবিষ্যদ্বাণী ছিল, যেখানে বলা হয়েছিল যে পানি সংকট বৃদ্ধি পাবে, যার ফলে কৃষিকাজে ব্যাপক প্রভাব পড়বে।

দাজ্জালের এই প্রশ্নগুলো শুধু তার ভবিষ্যতবাণীই নয়, বরং পৃথিবীর প্রকৃতিক পরিবর্তন এবং মানব সমাজের জন্য আসন্ন বিপদেরও ইঙ্গিত ছিল। তার এসব প্রশ্নের মাধ্যমে আমাদের জন্য সতর্কবার্তা রয়েছে—বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় প্রকৃতির বিপর্যয় হতে পারে এবং এ সব কিছুরই একটি বড় কারণ হতে পারে দাজ্জালের ফিতনা।

নবী মুহাম্মদ (সা.) এখন কী করছেন

সে বলে, “আমি শিগগিরই মুক্তি পাব। তখন ৪০ দিনের মধ্যেই আমি পুরো পৃথিবী ঘুরে দেখব। এমন কোনো শহর থাকবে না যেখানে আমি প্রবেশ করব না, তবে মক্কা ও মদিনায় আমার প্রবেশ নিষিদ্ধ।”

দ্বীপটির অবস্থান সম্পর্কে রাসূল (সা.) কী বলেছিলেন?

তামিম আদ্দারীর বিবরণ শোনার পর রাসূল (সা.) সাহাবীদের বলেন, “এই হচ্ছে তাইবা” অর্থাৎ মদিনা। সাহাবীদের কেউ জানতে চাইলে তিনি বলেন, “দ্বীপটি সিরিয়া সাগরে অথবা ইয়েমেন সাগরের পার্শ্ববর্তী সাগরে অবস্থিত, যা পৃথিবীর পূর্ব দিকে।” তিনি একাধিকবার পূর্ব দিকের দিকে ইঙ্গিত করেন।

দাজ্জালের আগমনের সময় কবে হবে তা নিশ্চিতভাবে বলা যায় না, তবে হাদিসে তার আগমনের পূর্বলক্ষণ ও ভয়াবহ ফিতনা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে। প্রতিটি মুসলমানের উচিত দাজ্জালের ফিতনা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করা এবং নিয়মিত সূরা কাহফ পাঠ করা।

আব্দুর রহিম/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ