ঢাকা, শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ১৩ বৈশাখ ১৪৩২

শ্রীলঙ্কার ‘না’ বলে দেওয়া, ভারতের সেতু স্বপ্ন স্থগিত

বিশ্ব ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০২৫ এপ্রিল ২৪ ১১:৩০:৫০
শ্রীলঙ্কার ‘না’ বলে দেওয়া, ভারতের সেতু স্বপ্ন স্থগিত

নিজস্ব প্রতিবেদক: ভারত ও শ্রীলঙ্কার সম্পর্কের এক নতুন অধ্যায়ে রূপরেখা ছিল একটি স্থলপথ সংযোগ—যার মাধ্যমে পক প্রণালী পেরিয়ে একটি সেতু বা করিডোর নির্মাণের ধারণা। এই প্রকল্পটি যদি বাস্তবায়িত হত, তা দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক সংযোগকে এক নতুন দিগন্তে পৌঁছে দিত। কিন্তু শ্রীলঙ্কা সরকারের সম্প্রতি ঘোষিত সিদ্ধান্তে এই স্বপ্ন আপাতত স্থগিত হয়ে গেল।

২০০২ থেকে ২০২৪: এক দীর্ঘ পথচলা

প্রস্তাবিত এই স্থলপথ সংযোগের ধারণা প্রথম ওঠে ২০০২–২০০৪ সালে, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহের সময়। পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি হওয়ার পরও এই বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে। ২০২৩ সালে নয়াদিল্লি সফরের সময় যৌথ বিবৃতির মধ্যে এটি উল্লেখিত হলেও, ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে রাষ্ট্রপতি অনুরা কুমারা ডিসানায়েকের দিল্লি সফরের এজেন্ডা থেকে এটিকে বাদ দেওয়া হয়।

শ্রীলঙ্কার সতর্কতা: পরিবেশ, অর্থনীতি, স্বায়ত্তশাসন

ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কলম্বো সফরে এই প্রকল্পকে অগ্রাধিকার দেন, কিন্তু শ্রীলঙ্কার নীতিনির্ধারকেরা তা বাস্তবায়নে অত্যন্ত সতর্ক। তাদের মতে, এই সেতুর পথ দিয়ে গড়িয়ে যাবে মান্নার উপসাগরের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণাগার, প্রবাল প্রাচীর, মাছের প্রজনন কেন্দ্র এবং পরিযায়ী পাখিদের আবাসস্থল—যেগুলোর পরিবেশগত ঝুঁকি খুবই গুরুতর। এর পাশাপাশি, দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও স্বায়ত্তশাসন বজায় রাখা শ্রীলঙ্কার প্রধান লক্ষ্য।

ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি: আঞ্চলিক যোগাযোগের অঙ্গীকার

ভারতের পক্ষ থেকে এই স্থলপথের মাধ্যমে বিমান এবং নৌপথের পরিবেশবান্ধব বিকল্প তৈরির সম্ভাবনা দেখা গিয়েছিল। মোদি সরকারের আশাবাদ ছিল যে, এই সেতু শুধু দুটি দেশের মধ্যেই নয়, দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে একটি নতুন শক্তিশালী সংযোগ সৃষ্টি করবে। সেই সঙ্গে, পরিবেশ সচেতনতা ও নেট-জিরো কার্বন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনেও এটি সহায়ক হতে পারত।

চীন এবং শ্রীলঙ্কার কৌশলগত হিসাব

এমনকি শ্রীলঙ্কার এই সিদ্ধান্তের পেছনে আরও একটি গুরত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে: চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব। চীন শ্রীলঙ্কার বন্দর ও সামুদ্রিক অবকাঠামোতে ব্যাপক বিনিয়োগ করছে, এবং শ্রীলঙ্কা তার কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন বজায় রাখতে চাইছে। তাই, এমন একটি প্রকল্প, যা চীনের প্রভাবের সাথে একত্রিত হতে পারে, তা শ্রীলঙ্কার জন্য চ্যালেঞ্জের সৃষ্টি করতে পারে।

নতুন দিগন্তের দিকে

তবে, প্রকল্পটি স্থগিত হলেও ভারতের পক্ষ থেকে এখনও আশা রয়েছে—ভবিষ্যতে পরিবেশবান্ধব এবং অর্থনৈতিকভাবে টেকসই মডেল নিয়ে সহযোগিতা গড়ে তোলা সম্ভব। ফেরি সার্ভিস, সবুজ শিপিং করিডোর বা কম ক্ষতিকর বিমান সংযোগের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে নতুন একটি সংযোগ স্থাপন করা যেতে পারে।

এই ঘটনাটি স্পষ্টভাবে দেখিয়ে দিয়েছে—সংযোগ শুধু সেতু বা রাস্তা নয়; এটি আস্থা, পরিবেশ সচেতনতা, অর্থনৈতিক ভারসাম্য এবং ভূ-রাজনৈতিক পরিপক্বতার ভিত্তিতে নির্মিত হয়।

পক প্রণালীজুড়ে সেতুর স্বপ্ন আপাতত স্থগিত হলেও, ভবিষ্যতের সম্ভাবনা এখনও উন্মুক্ত রয়েছে।

রাজিব/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ