ঢাকা, শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ১২ বৈশাখ ১৪৩২

বিশ্ববাজারে রেকর্ড ছোঁয়া স্বর্ণের দাম: হঠাৎ কেন এত বাড়ছে দাম

অর্থনীতি ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০২৫ এপ্রিল ২৪ ১১:১৫:৫১
বিশ্ববাজারে রেকর্ড ছোঁয়া স্বর্ণের দাম: হঠাৎ কেন এত বাড়ছে দাম

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিশ্বজুড়ে চলছে অস্থিরতার এক অধ্যায়। অর্থনৈতিক টানাপোড়েন, রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং যুদ্ধ পরিস্থিতি—সব মিলিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা ও আতঙ্ক। আর ঠিক এই সময়েই, স্বর্ণ হয়ে উঠেছে নিরাপত্তা ও স্থিতির প্রতীক। বহুদিন পর আবারও বিনিয়োগকারীদের প্রথম পছন্দ হয়ে উঠেছে এই মূল্যবান ধাতু।

বিশ্ববাজারে স্বর্ণের রেকর্ড

রয়টার্সের তথ্য অনুযায়ী, সোমবার (২১ এপ্রিল) বিশ্ববাজারে স্পট মার্কেটে স্বর্ণের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩,৪১৫ দশমিক ২৪ ডলার প্রতি আউন্সে, যা দিনের শুরুতে পৌঁছেছিল ৩,৪২৪ দশমিক ২৫ ডলারে। ফিউচার মার্কেটেও স্বর্ণের দাম বেড়ে হয়েছে ৩,৪২৬ দশমিক ৩০ ডলার।

বিশ্লেষকদের মতে, ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য বিরোধ, ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাত, এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ—এসবই তৈরি করেছে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা। এতে করে মানুষ নিরাপদ বিনিয়োগের খোঁজে স্বর্ণের দিকে ঝুঁকছে।

নিরাপদ বিনিয়োগে স্বর্ণের রাজত্ব

বর্তমানে মার্কিন ডলারের মান তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে, যার প্রভাবও পড়ছে স্বর্ণের বাজারে। ডলারের বিপরীতে স্বর্ণের দাম সাধারণত উল্টোভাবে চলে—ডলার দুর্বল হলে স্বর্ণের দাম বাড়ে। তাছাড়া ফেডারেল রিজার্ভের নীতিগত অনিশ্চয়তা এবং সুদের হার কমার সম্ভাবনা ডলারের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে।

বিশ্বের বহু কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইতিমধ্যেই স্বর্ণে তাদের রিজার্ভ বাড়ানো শুরু করেছে। বিশেষ করে চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ধারাবাহিকভাবে স্বর্ণ কিনছে। অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, চীন চাইছে মার্কিন ডলারের উপর নির্ভরতা কমিয়ে বিকল্প রিজার্ভ হিসেবে স্বর্ণকে স্থাপন করতে।

সামনে কি আরও বাড়বে দাম?

বিশ্বখ্যাত বিশ্লেষকরা বলছেন, স্বর্ণের পরবর্তী লক্ষ্য হতে পারে ৩,৫০০ ডলার। গোল্ডম্যান স্যাকস-এর পূর্বাভাস অনুযায়ী, চলতি বছরের শেষ নাগাদ এটি ৩,৭০০ ডলার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। ইউবিএস-এর বিশ্লেষক জিওভান্নি স্টাউনোভো মনে করেন, মার্কিন ডলারের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা এবং শেয়ারবাজারের দুর্বলতা স্বর্ণের চাহিদাকে আরও বাড়িয়ে তুলবে।

বাংলাদেশের বাজারেও প্রভাব

আন্তর্জাতিক বাজারের এই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা ছুঁয়ে গেছে বাংলাদেশের বাজারকেও। বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) ২২ ক্যারেট স্বর্ণের দাম বাড়িয়ে প্রতি ভরি ১ লাখ ৭২ হাজার ৫৪৬ টাকা নির্ধারণ করেছে, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। ২১ ক্যারেটের দাম হয়েছে ১ লাখ ৬৪ হাজার ৬৯৬ টাকা, ১৮ ক্যারেট ১ লাখ ৪১ হাজার ১৬৯ টাকা, এবং সনাতন পদ্ধতির স্বর্ণ ১ লাখ ১৬ হাজার ৭৮০ টাকা।

বাজুস জানিয়েছে, চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ২৪ বার স্বর্ণের দাম সমন্বয় করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৮ বারই দাম বেড়েছে।

বিনিয়োগে সচেতনতার পরামর্শ

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বর্ণ তাৎক্ষণিক মুনাফার সুযোগ না দিলেও এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে কাজ করে। তবে তারা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, বাজার বুঝে ধাপে ধাপে বিনিয়োগ করাই হবে সবচেয়ে সঠিক কৌশল।

বাজুসের সহ-সভাপতি মাসুদুর রহমান বলেন, যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্যযুদ্ধ, সুদের হারের অনিশ্চয়তা এবং ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা—এই তিনটি বড় কারণ স্বর্ণের বাজারে প্রভাব ফেলছে। তিনি আরও জানান, ট্রাম্পের শুল্কনীতি আংশিকভাবে স্থগিত করায় নতুন করে দাম বেড়েছে এবং এই ধারা অব্যাহত থাকলে শিগগিরই স্বর্ণের দাম ৩,৫০০ ডলার অতিক্রম করতে পারে।

বিশ্ব অর্থনীতির অনিশ্চয়তা আর বিনিয়োগের সীমিত বিকল্পের সময়ে স্বর্ণ তার পুরনো ভূমিকায় ফিরে এসেছে—একটি নির্ভরযোগ্য, নিরাপদ সম্পদ হিসেবে। যদিও প্রতিটি বিনিয়োগের মতো স্বর্ণেও ঝুঁকি রয়েছে, তবুও পরিকল্পিতভাবে, সময় বুঝে বিনিয়োগ করলে এটি হতে পারে একজন বিনিয়োগকারীর সবচেয়ে স্থিতিশীল সঙ্গী।

জান্নাতুল ফেরদৌস শ্রাবণী/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ