ঢাকা, রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৭ বৈশাখ ১৪৩২

স্বপ্নের বেলুন ফেটে ধুলায় মিশে গেল, নিঃস্ব হলো বিনিয়োগকারীরা

শেয়ারবাজার ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০২৫ এপ্রিল ২০ ১৮:২০:১৭
স্বপ্নের বেলুন ফেটে ধুলায় মিশে গেল, নিঃস্ব হলো বিনিয়োগকারীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক: এক সময় শেয়ার বাজারের তারকা, এখন বিনিয়োগকারীদের কাছে এক ভয়াবহ দুঃস্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্স লিমিটেড (পূর্বের বিডি ফাইন্যান্স)। ২০২১ সালে Sovereign Infrastructure Group LLC (SIGG)-এর সাথে ২ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ চুক্তি স্বাক্ষর করার পর, এই প্রতিষ্ঠানটি হয়ে উঠেছিল দেশব্যাপী আলোচনার বিষয়। সবাই ভেবেছিল, বিদেশি বিনিয়োগ আসলে শেয়ার বাজারে সোনালী দিগন্ত উন্মোচিত হবে, কিন্তু পরিণতি কী হয়েছিল?

বিদেশি বিনিয়োগের আশায় উড়েছিল শেয়ার বাজার

কিছুদিন আগে, কোম্পানির চেয়ারম্যান মনোয়ার হোসেন এক উজ্জ্বল অনুষ্ঠানে ঘোষণা করেছিলেন, যে SIGG-এর মাধ্যমে ২ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হবে, যার মধ্যে ৪০ মিলিয়ন ডলার শেয়ারবাজারে ব্যবহৃত হবে। এই খবরটি বাজারে তোলপাড় সৃষ্টি করে এবং বাংলাদেশ ফাইন্যান্সের শেয়ার দাম বাড়তে থাকে। অনেক বিনিয়োগকারী তখন আশায় বুক বেঁধে শেয়ার কিনতে শুরু করে। শেয়ার দাম একসময় ৭০ টাকার ওপরে চলে যায়, আর সবাই ভাবছিল—এবার সত্যিই বড় কিছু হতে যাচ্ছে।

বাস্তবতা হলো ভিন্ন—শেয়ার দর ১০ টাকার নিচে

কিন্তু, সময়ের সাথে সাথে বাস্তবতা পরিবর্তিত হলো। বিদেশি বিনিয়োগ আসেনি, আর গুজবের বাজারে শেয়ার দর ধীরে ধীরে নামতে থাকে। এখন সেই শেয়ার মূল্য ফেসভ্যালু ১০ টাকারও নিচে। যাদের হাতে ছিল উচ্চমূল্যে কেনা শেয়ার, তারা আজ বিনিয়োগের কষ্ট পোহাচ্ছে।

ডিভিডেন্ডের স্বপ্ন ভেঙে গেল

একসময়, কোম্পানি প্রতি বছর বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ডিভিডেন্ড দেয়ার মাধ্যমে তাদের মুখে হাসি ফোটাত। কিন্তু ২০২৩ সাল থেকেই কোম্পানিটি লোকসান দেখিয়ে ডিভিডেন্ড বন্ধ করে দেয়। ২০২৪ সালে এই অবস্থার আরেকটি পুনরাবৃত্তি ঘটে, যখন নতুন ভবন উদ্বোধনের দিনে শূন্য ডিভিডেন্ড ঘোষণা করা হয়।

এসময়, পরিচালকরা ভবন উদ্বোধনে আনন্দ-উল্লাসে মেতে উঠলেও বিনিয়োগকারীরা হতাশ হয়ে পড়েন। একদিকে সোনালি ভবিষ্যতের স্বপ্ন, অন্যদিকে শূন্য ডিভিডেন্ড—এ যেন এক নির্মম বাস্তবতা।

‘জেড’ ক্যাটাগরিতে নামলো কোম্পানি

এবং সবশেষে, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কোম্পানিটিকে ‘জেড ক্যাটাগরিতে’ নামিয়ে দিয়েছে, যা নির্দেশ করে, কোম্পানির অবস্থা এখন খুবই বিপদজনক এবং এটি শেয়ার বাজারে একটি ঝুঁকি হিসেবে দেখা হচ্ছে।

বিনিয়োগকারীদের বিপদের গল্প

যারা এই কোম্পানির শেয়ার কিনে ছিলেন, তারা এখন নিজেদের ক্ষতির হিসাব করছেন। তাদের বিনিয়োগ আজ বড় এক প্রশ্নচিহ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। সোনালি দিনের স্বপ্ন দেখতে গিয়ে অনেকেই আজ নিঃস্ব।

কোথায় গেল সোনালী ভবিষ্যত?

বাংলাদেশ ফাইন্যান্সের এই গল্প যেন একটা শিখনীয় উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে—কেবল কথা নয়, কাজই আসল। বিনিয়োগকারীরা তাদের স্বপ্ন পূরণের আশায় উচ্চমূল্যে শেয়ার কিনেছিলেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা পেয়েছেন হতাশা আর লোকসান।

এটি আমাদের সকলকে এক গুরুত্বপূর্ণ পাঠ শিখিয়ে যায়—বিনিয়োগের আগে সতর্কতা, পর্যালোচনা এবং বাজারের মৌলিক অবস্থা বুঝে বিনিয়োগ করা উচিত। এখন প্রশ্ন উঠছে, সত্যিই কি বাংলাদেশ ফাইন্যান্স পুনরুদ্ধার করতে পারবে, নাকি এই ধসের সাথে তারা আরও নিচে নামবে?

মো: রাজিব আলী/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ