ঢাকা, মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ৯ বৈশাখ ১৪৩২

মোদির ইটের জবাবে ইউনুসের কূটনৈতিক পাথর, বাংলাদেশ নিল নতুন কৌশল

জাতীয় ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০২৫ এপ্রিল ২০ ১৭:৫৩:২৬
মোদির ইটের জবাবে ইউনুসের কূটনৈতিক পাথর, বাংলাদেশ নিল নতুন কৌশল

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকার আকাশে এপ্রিলের মিষ্টি রোদে আমের মুকুলের ঘ্রাণ, অথচ সেই রোমান্টিক প্রকৃতির মাঝেও বইছে অদৃশ্য কূটনৈতিক উত্তেজনার হাওয়া। এই উত্তাপ ছড়িয়েছে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের নতুন বাস্তবতায়, যার কেন্দ্রবিন্দুতে নোবেলজয়ী ড. মোহাম্মদ ইউনুস।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে দক্ষিণ এশিয়ার কৌশলপত্রে এসেছে বড়সড় পরিবর্তন—যার মূল টার্গেট বাংলাদেশ। মোদি সরকার একতরফাভাবে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করেছে, যে সুবিধার উপর দাঁড়িয়ে ছিল বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যের একটি বড় অংশ।

ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বন্ধ: বাংলাদেশের বুকে অর্থনৈতিক আঘাত

ভারতীয় বন্দর ব্যবহার করে এতদিন বাংলাদেশ গার্মেন্টস, আইটি পণ্য, ঔষধ ও কৃষিপণ্য পাঠাত যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, নেপাল ও ভুটানে। ২০২০ সাল থেকে চলা এই ব্যবস্থার হঠাৎ বাতিলে রপ্তানিকারকদের ওপর এসেছে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার অতিরিক্ত খরচের বোঝা।

ভারতের অজুহাত—দিল্লির কার্গো টার্মিনালে জায়গা সংকট। কিন্তু সত্যি কি তাই? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি আসলে একটি ‘অঘোষিত বাণিজ্য যুদ্ধ’, যার লক্ষ্য বাংলাদেশকে কৌশলগতভাবে দুর্বল করা।

কিন্তু ড. ইউনুস চুপ নন: কূটনৈতিক পাথরে মোদির ইটের জবাব

অর্থনৈতিক চাপে রাখার এই নীতির জবাব দিয়েছেন ড. ইউনুস বুদ্ধিমত্তায়। তাঁর প্রত্যক্ষ প্রভাবেই জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ভারতের সস্তার সুতা প্রবেশে পাঁচটি স্থলবন্দর বন্ধ করে দিয়েছে। এতে দেশের টেক্সটাইল মিলগুলো ঘুরে দাঁড়াচ্ছে।

এর পাশাপাশি, ভারত থেকে আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে বাংলাদেশ এখন চীন, তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া ও পাকিস্তান থেকে সুতা ও কাঁচামাল আনছে। মোদি সরকারের একচেটিয়া বাজার দখলের পরিকল্পনায় এবার চিড় ধরেছে।

তিস্তা চুক্তি ভেঙে প্রতারণা: বাংলাদেশের কৃষির হৃদয়বিদারক ক্ষতি

২০১১ সালে ওয়াদা হয়েছিল তিস্তা পানি বণ্টন নিয়ে। ১৪ বছরেও সেই চুক্তির বাস্তবায়ন হয়নি। বরং তিস্তার পানি এখন কমে নেমেছে মাত্র ২০০ কিউসিকে। উত্তরবঙ্গের কৃষকরা ধান চাষ বন্ধ করে দিচ্ছে, পানির হাহাকার চারপাশে।

আর মোদি সরকার ব্যস্ত ‘চিকেন-নেক’ নিরাপত্তা ঘিরে—যেখানে এখন বাংলাদেশের প্রজেক্টে চীনা প্রকৌশলীরা কাজ শুরু করেছে।

চীনের সঙ্গে ২.১ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি: মোদির দুঃস্বপ্ন শুরু

ড. ইউনুসের নেতৃত্বে বাংলাদেশ লালমনিরহাটে তিস্তা প্রকল্পে চীনের সঙ্গে ২.১ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি করেছে। নদী খনন, সেচ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ—সব মিলিয়ে এটি একটি আঞ্চলিক গেমচেঞ্জার। মোদি যেখানে দেয়াল তুলছেন, সেখানে বাংলাদেশ সেতু গড়ছে।

বাজার দখলের বিরুদ্ধে লড়াই: কোকার মতো ব্র্যান্ডের ছলে ভারতীয় আগ্রাসন

ভারতীয় কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে কম দামে পণ্য ঢুকিয়ে বাজার দখল করছে, পরে দাম বাড়াচ্ছে। কাস্টমসে দেরি করে পচনশীল পণ্য আটকে দেওয়া, চাল-পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ—সবকিছুই মিলিয়ে এটি একটি "ইকোনমিক ট্রায়াঙ্গুলেশন উইথ ডিপ্লোমেটিক স্মাইল"।

চুপ নেই বাংলাদেশ: বিকল্প করিডরে নজর

ভারতের ওপর নির্ভরতা কমাতে বাংলাদেশ এখন চীন-মিয়ানমার-থাইল্যান্ড করিডর উন্নয়নের দিকে ঝুঁকেছে। পাশাপাশি কক্সবাজার, পায়রা, মংলা বন্দরের আধুনিকীকরণও জোরকদমে চলছে।

বাংলাদেশের বার্তা স্পষ্ট: মাথা নত নয়, কূটনীতির লড়াই চলবে

ড. ইউনুস জানেন, এই লড়াই কেবল অর্থনৈতিক নয়, এটি একটি জাতির অস্তিত্বের প্রশ্ন। তাঁর পেছনে রয়েছে বাংলাদেশের জনগণের শক্তি। ঢাকা, চট্টগ্রাম, বগুড়া—সর্বত্রই ছড়িয়ে পড়েছে একটিই বার্তা:

“মোদি যতই কৌশল চালান, বাংলাদেশ মাথা নত করবে না।”

এই এপ্রিলেই শুরু হলো দক্ষিণ এশিয়ার নতুন কূটনৈতিক যুগ, যেখানে মোদির ইটের জবাবে ড. ইউনুস ছুঁড়ছেন পাথর—আর সেই পাথর বদলে দিচ্ছে আঞ্চলিক রাজনীতির মানচিত্র।

মো: রাজিব আলী/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ