ঢাকা, শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২

এসি ব্যবহারে যে বিষয়ে সচেতনতা জরুরি

লাইফস্টাইল ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০২৫ এপ্রিল ১৯ ১৯:৩০:৫০
এসি ব্যবহারে যে বিষয়ে সচেতনতা জরুরি

নিজস্ব প্রতিবেদক: এপ্রিলের সূচনাতেই দেশে শুরু হয়েছে প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ। কোথাও মৃদু, কোথাও মাঝারি আর কোথাও তীব্র এই গরমে হাঁসফাঁস করছে সাধারণ মানুষ। মাঝে মধ্যে হালকা বৃষ্টিতে কিছুটা স্বস্তি মিললেও, গরমের প্রবণতা থেমে নেই। এই রকম পরিস্থিতিতে ফ্যানের পাশাপাশি দেশের ঘরে ঘরে এসির ব্যবহারও বাড়ছে চোখে পড়ার মতো। শহরের বিলাসবহুল বাসা থেকে শুরু করে গ্রামাঞ্চলের আধুনিক ঘরগুলোতেও এসি এখন আর নতুন কিছু নয়।

তবে এসি ব্যবহারে আমরা অনেকেই সঠিক নিয়ম জানি না। বিশেষ করে, এসির তাপমাত্রা কোন বয়সী মানুষের জন্য কত রাখা উচিত—এই গুরুত্বপূর্ণ দিকটি আমরা প্রায়ই অবহেলা করি। অথচ সামান্য সচেতন হলেই এড়ানো যেতে পারে নানা স্বাস্থ্যঝুঁকি।

এসির তাপমাত্রা ঠিক রাখা কেন জরুরি?

অনেকেই মনে করেন, এসির তাপমাত্রা যত কমানো যায়, ঘর তত ঠাণ্ডা হবে আর আরামও বেশি হবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, অতিরিক্ত ঠাণ্ডা শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, শরীরের আরামের পাশাপাশি সুস্থ থাকার জন্য তাপমাত্রা নির্ধারণে বয়স, সময় ও পরিবেশ অনুযায়ী কিছু বিষয় মাথায় রাখা জরুরি।

শিশুদের জন্য আদর্শ তাপমাত্রা – ২১ ডিগ্রি সেলসিয়াস

১৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের শরীর ঠাণ্ডা-গরমের প্রতি বেশ সংবেদনশীল। খুব গরম যেমন তাদের বিরক্ত করে, তেমনই অতিরিক্ত ঠাণ্ডাও ক্ষতি করতে পারে। তাই শিশুর ঘরে এসির তাপমাত্রা ২১ ডিগ্রি রাখা হলে, তারা শান্তিতে ঘুমাতে পারে এবং অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকিও কমে যায়।

প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য – ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস

বড়দের ক্ষেত্রে ঘুমের সময় আদর্শ তাপমাত্রা ধরা হয় ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই তাপমাত্রা শরীরের জন্য আরামদায়ক এবং ঘুমের গভীরতাও বাড়ায়। তবে কেউ যদি খুব ঠাণ্ডা অনুভব করেন, তাহলে এক-দুই ডিগ্রি বাড়ানো যেতে পারে।

বয়স্কদের জন্য – ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস

বয়স্কদের ত্বক ও রক্ত সঞ্চালনের ধরণ তুলনামূলক ভিন্ন। তারা ঠাণ্ডা দ্রুত অনুভব করেন এবং সহজেই অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। তাই ৬০ বছর বা তার বেশি বয়সী ব্যক্তিদের জন্য এসির তাপমাত্রা ২৪ ডিগ্রি রাখা সবচেয়ে নিরাপদ।

টাইমার ব্যবহার না করলেই বিপদ

রাতের বেলায় ঘুমানোর সময় এসি চালিয়ে রাখলে, ভোরের দিকে ঘর অনেক ঠাণ্ডা হয়ে যায়। এই অতিরিক্ত ঠাণ্ডা অনেক সময় শ্বাসকষ্ট, গলা ব্যথা বা হাড়ের যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই এসির সঙ্গে অবশ্যই টাইমার ব্যবহার করা উচিত, যাতে নির্দিষ্ট সময় পর এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যায়। এতে একদিকে যেমন বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়, অন্যদিকে স্বাস্থ্যও সুরক্ষিত থাকে।

গরম থেকে এসি রুমে ঢোকার সময় যা মনে রাখা জরুরি

অনেকেই বাইরে তীব্র রোদে হাঁটার পর সরাসরি এসি রুমে ঢুকে পড়েন। এই আচরণ শরীরের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক। হঠাৎ ঠাণ্ডা পরিবেশে প্রবেশ করলে রক্তনালীর সংকোচন হয় এবং এতে হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে। তাই চেষ্টা করুন, এসি রুমে ঢোকার আগে কয়েক মিনিট ছায়ায় দাঁড়িয়ে শরীরকে ঠাণ্ডার সঙ্গে মানিয়ে নিতে। একইভাবে, এসি রুম থেকে বেরিয়ে সরাসরি রোদে না গিয়ে আগে কিছুক্ষণ ছায়ায় থাকুন।

এসি আমাদের জীবনে যেমন স্বস্তি এনে দেয়, তেমনই ভুল ব্যবহার করলে তা হতে পারে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ। তাই বয়সভেদে তাপমাত্রা ঠিক রাখা, টাইমার ব্যবহার করা এবং হঠাৎ ঠাণ্ডা-গরমে না যাওয়া—এই কিছু সাধারণ নিয়ম মেনে চললেই এই গরমেও থাকবে আরাম, আর শরীর থাকবে সুস্থ।

মোঃ গোলাম রাব্বানী/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ