ঢাকা, শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৫ বৈশাখ ১৪৩২

বজ্রপাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য যে দোয়া পড়বেন

২০২৫ এপ্রিল ১৭ ১৯:৪০:৪০
বজ্রপাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য যে দোয়া পড়বেন

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রকৃতির অন্যতম ভয়ঙ্কর এক অভিব্যক্তির নাম বজ্রপাত। এর প্রচণ্ড শব্দ ও তীব্র আলোকচ্ছটা যেন মহান আল্লাহর অসীম শক্তির প্রকাশভঙ্গি। তবে শুধুমাত্র প্রকৃতির খেলা নয়—ইসলামের আলোকে বজ্রপাত হলো মানুষের জন্য এক বিশেষ সতর্কবার্তা। আল্লাহতায়ালা এ ঘটনার মাধ্যমে বান্দাদের সাবধান করে দেন, প্রয়োজনে শাস্তিও দিতে পারেন সীমালঙ্ঘনকারীদের।

পবিত্র কুরআনে বজ্রপাত নিয়ে বিস্তর আলোচনা রয়েছে। সূরা রা’দ-এর ১৩ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে

"মেঘের গর্জন তার প্রশংসাসহ আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করে এবং ফেরেশতারা তাঁর ভয়ে তা-ই করে। তিনি বজ্র পাঠান ও যার প্রতি ইচ্ছা তা দিয়ে আঘাত করেন। আর মানুষ আল্লাহ সম্পর্কে বিতর্ক করে, অথচ তিনি প্রবল ক্ষমতাবান ও কঠোর শাস্তিদাতা।" (সূরা রা’দ: ১৩)

বজ্রপাত নিয়ে হাদিসেও রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন—

"যদি আমার বান্দারা আমার বিধান মেনে চলত, তাহলে আমি তাদের রাতভর বৃষ্টি দিতাম এবং সকালবেলা সূর্যের আলো দিতাম। তখন তারা বজ্রপাতের আওয়াজও শুনত না।" (মুসনাদে আহমদ)

বজ্রপাত কেন হয়? ইসলামিক ব্যাখ্যায় এটি শুধুমাত্র প্রাকৃতিক বিজ্ঞান নয়, বরং আধ্যাত্মিক ও সামাজিক কারণেও ঘটে থাকে। কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে দেখা যায়, অত্যাচার ও পাপাচার বেড়ে গেলে আল্লাহর গজব হিসেবে বজ্রপাত নেমে আসে। সূরা নিসা (১৫৩), সূরা আনকাবুত (৪০), সূরা যারিয়াত (৪৪), ও সূরা তুর (৪৫)-এ এর স্পষ্ট ইঙ্গিত রয়েছে।

বজ্রপাত থেকে আত্মরক্ষায় নবিজি (সা.)-এর শেখানো দোয়া

বজ্রপাতের মতো দুর্যোগপূর্ণ মুহূর্তে রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁর উম্মতদের কিছু দোয়া শিখিয়ে গেছেন, যা আজও বজ্রপাতসহ নানা প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে রক্ষার আশ্রয় হয়ে দাঁড়াতে পারে।

একটি দোয়া এসেছে তিরমিজি শরিফে, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমরের (রা.) সূত্রে:

اللَّهُمَّ لَا تَقْتُلْنَا بِغَضَبِكَ، وَلَا تُهْلِكْنَا بِعَذَابِكَ، وَعَافِنَا قَبْلَ ذَلِكَ

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা লা তাকতুলনা বিগজাবিকা, ওয়ালা তুহলিকনা বিআজাবিকা, ওয়া আফিনা ক্বাবলা জালিকা।

অর্থ: হে আল্লাহ! তুমি তোমার ক্রোধে আমাদের হত্যা করো না, তোমার শাস্তিতে ধ্বংস করো না এবং তা আসার আগেই আমাদের নিরাপদ রাখো।

আরেকটি দোয়া এসেছে মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা-য়। এতে বলা হয়—

"সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি"

অর্থাৎ: যিনি বজ্রের শব্দ শুনে এ তাসবিহ পড়বেন, তিনি বজ্রপাতের আঘাত থেকে রক্ষা পাবেন।

এছাড়া, রাসূলুল্লাহ (সা.) মেঘের গর্জন শুনলে একদম চুপ হয়ে যেতেন এবং কুরআনের একটি আয়াত পাঠ করতেন:

"سُبْحَانَ الَّذِي يُسَبِّحُ الرَّعْدُ بِحَمْدِهِ وَالْمَلَائِكَةُ مِنْ خِيفَتِهِ"

উচ্চারণ: সুবহানাল্লাজি ইউসাব্বিহুর রা‘দু বিহামদিহি ওয়াল মালা-ইকাতু মিন খিফাতিহি।

অর্থ: আমি পবিত্রতা ঘোষণা করছি সেই সত্তার, যাঁর প্রশংসাসহ গর্জন করে মেঘ, আর ফেরেশতাগণও তা-ই করে ভয়ে।

করণীয় কী?

বজ্রপাতের সময় কেবল নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেওয়াই যথেষ্ট নয়, বরং অন্তরকে পরিশুদ্ধ করে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করা জরুরি। ইসলামি দৃষ্টিকোণ অনুসারে, গুনাহ থেকে বাঁচা, জুলুম-অত্যাচার পরিহার, আল্লাহর হুকুম মেনে জীবনযাপন—এসবই বজ্রপাতসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষার প্রধান উপায়।

বজ্রপাত প্রকৃতির খেয়াল নয়, বরং তা আল্লাহর পক্ষ থেকে সতর্কবার্তা ও কোনো কোনো ক্ষেত্রে শাস্তির বহিঃপ্রকাশ। তাই মুসলমানদের উচিত কুরআন-সুন্নাহ অনুযায়ী জীবন গঠন করা এবং প্রিয়নবির (সা.) শেখানো দোয়াগুলো নিজেদের জীবনচর্চার অংশ করে নেওয়া। কেননা, প্রকৃত নিরাপত্তা কেবল আল্লাহর কাছেই।

সাবরিনা বিনতে সাবা/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ