ঢাকা, শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ৫ বৈশাখ ১৪৩২

উত্ত্যক্তের প্রতিবাদে প্রাণ গেল বাবার, সাহস নিয়ে পরীক্ষা দিল মেয়ে

জাতীয় ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০২৫ এপ্রিল ১৭ ১৪:১৫:২৩
উত্ত্যক্তের প্রতিবাদে প্রাণ গেল বাবার, সাহস নিয়ে পরীক্ষা দিল মেয়ে

নিজস্ব প্রতিবেদক: সকালে ছিল এসএসসি পরীক্ষা, কিন্তু আগের রাতে রাকিয়ার জীবনে নেমে আসে গভীর এক শোক। নিজ মেয়েকে উত্ত্যক্ত করার প্রতিবাদ করেছিলেন বাবা। আর তাতেই খুন হতে হলো তাঁকে।

বাবার নিথর দেহ পড়ে ছিল ঘরে। আর সেই লাশ রেখে চোখের জল লুকিয়ে পরীক্ষার হলে যায় রাকিয়া। যে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিল মাসের পর মাস, সেই দিনেই সবচেয়ে বড় ধাক্কা নেমে আসে তার জীবনে।

কী ঘটেছিল সেই রাতে?

নিহত ব্যক্তি আকরাম আলী (৪৫), পেশায় বাসচালক এবং রাজশাহী মোটরশ্রমিক ইউনিয়নের সদস্য। বুধবার (১৬ এপ্রিল) রাতে রাজশাহীর তালাইমারী শহীদ মিনার এলাকায় তাঁর ওপর হামলা হয়।

স্থানীয় বখাটে নান্টু এবং তার সহযোগীরা মিলে আকরাম আলী ও তাঁর ছেলে হাসান ইমামের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। ইট দিয়ে আঘাত করলে গুরুতর জখম হন আকরাম।

তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে রাত ১১টার দিকে তিনি মারা যান।

প্রতিবাদ করাই ছিল ‘অপরাধ’!

স্থানীয় সূত্র ও মামলার এজাহার অনুযায়ী, অভিযুক্ত নান্টু তাঁর স্ত্রীকে নিয়মিত মারধর করতেন। সেই নির্যাতনের প্রতিবাদ করেছিলেন আকরাম আলী। কারণ সেই নারী ছিলেন তাঁর স্ত্রীর আত্মীয়া।

এতে ক্ষিপ্ত হয়ে নান্টু তার মেয়েকে উত্ত্যক্ত করতে শুরু করেন। ঘটনার দিন নান্টু নিজেই রাকিয়াকে গালাগাল করলে আকরাম তাঁর পরিবারকে বিষয়টি জানান। আর তাতেই ঘটে ভয়াবহ হামলা।

বাবার লাশ রেখে পরীক্ষায় মেয়ের লড়াই

এই ঘটনার ঠিক পরদিন ছিল এসএসসি’র ইংরেজি দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষা। রাকিয়া আলফি রাজশাহী অগ্রণী বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। পরীক্ষা দিতে হয় শিরোইল উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে।

মা মুক্তি বেগম বলেন,

“বাবার লাশ রেখে কেউ পরীক্ষা দিতে যেতে চায় না। কিন্তু মেয়েটা কাঁদতে কাঁদতে বলল, ‘বাবা বলতেন, পরীক্ষা মিস করা যাবে না’—এই কথাই মনে করে সে চলে গেল।”

বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ সাইফুল ইসলাম বলেন,

“রাকিয়া আমাদের গর্ব। এই মানসিক অবস্থাতেও সে পরীক্ষায় বসেছে। এটা কেবল এক শিক্ষার্থীর গল্প নয়, এক সাহসিকতার প্রতীক।”

৭ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা

বোয়ালিয়া মডেল থানায় আকরামের ছেলে হাসান ইমাম ৭ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেছেন। তারা হলেন—নান্টু (২৮), বিশাল (২৮), খোকন (২৮), তাসিন (২৫), অমি (২০), নাহিদ (২৫) ও শিশির (২০)।

রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার সাবিনা ইয়াসমিন জানান, “ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। দ্রুতই আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।”

রাজিব/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ