ঢাকা, মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ৯ বৈশাখ ১৪৩২

ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের 'প্রথম পদক্ষেপে' কেঁপে উঠল দিল্লি

জাতীয় ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০২৫ এপ্রিল ১৬ ২৩:৪৪:০৯
ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের 'প্রথম পদক্ষেপে' কেঁপে উঠল দিল্লি

নিজস্ব প্রতিবেদক: “বাংলাদেশের ভালো ভারতের চেয়ে কেউ চায় না”—এই বক্তব্য দিয়েছিলেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর। কিন্তু একই দিনে ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে থাকা ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা একতরফাভাবে বাতিল করে দিল।

এই দ্বিচারিতা দেখে অনেকেই বলছেন, এমন 'ভালো' যদি প্রতিবেশী চায়, তাহলে শত্রুর আর দরকার নেই। কারণ ভারতের আচরণ প্রমাণ করছে, দিল্লি মুখে যা বলছে, বাস্তবে করছে তার উল্টোটা।

হঠাৎ সিদ্ধান্তের জবাবে বাংলাদেশের কৌশলী জবাব

ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করার মাধ্যমে ভারত চেয়েছিল কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করতে। কিন্তু বাংলাদেশ পাল্টা জবাব দিতে বেশি দেরি করেনি।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ভারতের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের আমদানি নিষিদ্ধ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে:

নিউজপ্রিন্ট, ডুপ্লেক্স বোর্ড, ক্রাফট পেপার

মাছ, সিগারেট পেপার, গুঁড়ো দুধ, আলু

সুতা, টোব্যাকো

রেডিও-টিভি পার্টস, সাইকেল ও মোটর পার্টস

ফরমিকা শিট, সিরামিক ও স্যানিটারি পণ্য

স্টেইনলেস স্টিলওয়ার, মার্বেল ও টাইলস

মিক্সড ফেব্রিক

বাংলাদেশ সরকারের এই সিদ্ধান্ত দেশীয় শিল্পকে সুরক্ষা দেবে এবং ভারতের ওপর নির্ভরতা কমাবে। একই সঙ্গে এটি ভারতের জন্য এক বড় বার্তা।

ভারতের শিল্পখাতে ধসের আশঙ্কা

বাংলাদেশ ভারতের জন্য একটি বড় ও নির্ভরযোগ্য রপ্তানিমুখী বাজার। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভারতের টেক্সটাইল, পেপার, সিরামিক এবং কৃষি খাতে বড় ধরনের ক্ষতির শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

ভারতের ব্যবসায়ী মহল এই ঘটনায় চরম অসন্তুষ্ট। তারা মনে করছেন, মোদি সরকারের একতরফা সিদ্ধান্তের ফল এখন ভারতের শিল্পকেই ভোগ করতে হবে।

অন্দরমহলেও তৈরি হচ্ছে চাপ। মোদি সরকারের এই আগ্রাসী নীতির বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাড়ছে রাজনৈতিক মহলেও।

ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম ‘ট্রেলার’

বাংলাদেশের এই পদক্ষেপ রাজনৈতিকভাবেও গুরুত্বপূর্ণ। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার শুধু প্রতিবাদ নয়, অর্থনৈতিকভাবে কৌশলী জবাব দিচ্ছে।

এই পদক্ষেপকে অনেকে বলছেন ‘ট্রেলার’—মূল সিনেমা এখনও বাকি। ভারতের উদ্দেশে স্পষ্ট বার্তা পৌঁছে গেছে, বাংলাদেশ আর আগের মতো নিরব থাকবে না।

ভারতের চাওয়া ছিল, ট্রান্সশিপমেন্ট বন্ধ করে বাংলাদেশকে চাপে ফেলা। কিন্তু উল্টোভাবে বাংলাদেশই কৌশলগতভাবে ভারতকে চাপে ফেলেছে।

বন্ধুত্ব না আধিপত্য?

ভারত বারবার বলে থাকে তারা বাংলাদেশের ভালো চায়। কিন্তু ভালো চাওয়ার নামে যদি একতরফা সিদ্ধান্ত, অবজ্ঞা ও কূটনৈতিক সৌজন্য লঙ্ঘনই ঘটে, তাহলে সেটি আর বন্ধুত্ব নয়।

বাংলাদেশ এবার বুঝিয়ে দিয়েছে, প্রয়োজন হলে কঠোর জবাব দিতে জানে। আর এই জবাব এসেছে কেবল মুখে নয়—নীতি ও কৌশলে।

ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের এই পদক্ষেপ স্পষ্টভাবে প্রমাণ করেছে, বাংলাদেশ এখন নিজের স্বার্থ রক্ষায় আরও সচেতন, আরও সক্রিয়।

ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল করে ভারত যে অট্টহাসি হাসতে চেয়েছিল, তা মুহূর্তেই থেমে গেছে। দিল্লি এখন বুঝতে পারছে, প্রতিবেশীকে ছোট করে নয়, সমানে সমানে সম্পর্ক গড়লেই বন্ধুত্ব টিকে থাকে।

এবার শুধু ভারত নয়, গোটা অঞ্চল দেখছে—বাংলাদেশ আর মুখ বুজে সহ্য করবে না।

আব্দুর রহিম/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ