ঢাকা, মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ৯ বৈশাখ ১৪৩২

MD: Razib Ali

Senior Reporter

পুঁজিবাজার সংকটে সরকারের সিদ্ধান্তে অসন্তুষ্ট, ক্ষোভে ফুঁসে উঠছে বিনিয়োগকারীরা

শেয়ারবাজার ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০২৫ এপ্রিল ১৬ ২২:৪৬:৩৭
পুঁজিবাজার সংকটে সরকারের সিদ্ধান্তে অসন্তুষ্ট, ক্ষোভে ফুঁসে উঠছে বিনিয়োগকারীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের পুঁজিবাজার দীর্ঘদিন ধরেই অস্থিরতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। লেনদেনের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাওয়ায় মারাত্মক বিপাকে পড়েছে সিকিউরিটিজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো। একইসাথে প্রতিনিয়ত ক্ষতির মুখে পড়ছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। এই সংকট নিরসনে ১৬ এপ্রিল বুধবার বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) মাল্টিপারপাস হলে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বৈঠকে পুঁজিবাজারের চারটি প্রধান সংকট চিহ্নিত করা হয়:

নেগেটিভ ইক্যুইটি: শেয়ারমূল্য পতনের কারণে বহু বিনিয়োগকারী তাদের পোর্টফোলিওতে নেগেটিভ ইক্যুইটিতে চলে গেছেন, অর্থাৎ তাদের বিনিয়োগ এখন ক্ষতিতে।

বিএসইসির জনবল সংকট: নিয়ন্ত্রক সংস্থায় পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় তদারকি ও কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটছে।

আইপিওর অভাব: দীর্ঘদিন নতুন কোনো কোম্পানি শেয়ারবাজারে আসছে না, ফলে বিনিয়োগের নতুন সুযোগ সংকুচিত।

বন্ড মার্কেটের দুরবস্থা: সঞ্চয়পত্রে উচ্চ সুদের হার করপোরেট বন্ডে বিনিয়োগকে অপ্রতিযোগিতামূলক করে তুলেছে।

বৈঠকে এসব সংকটের দ্রুত সমাধানে পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়। একইসাথে বিএসইসির জনবল বাড়ানো, আইপিও প্রক্রিয়া সহজ করা এবং নেগেটিভ ইক্যুইটি মোকাবেলায় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের ঘোষণা দেওয়া হয়।

ফেসবুকে বিনিয়োগকারীদের ক্ষোভ ঝরে পড়ছে

তবে সরকারের এসব আশ্বাস বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে পারেনি। ফেসবুকজুড়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মন্তব্যে উঠে এসেছে গভীর হতাশা, ক্ষোভ ও অনাস্থা।

Share Profile নামে একজন মন্তব্য করেন, “বন্ড মার্কেট উন্নয়ন হয়েছে ঠিকই, কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা বন্ডে টাকা ঢালায় শেয়ারে আগ্রহ হারিয়েছে, এ জন্যই বাজারের এই করুণ দশা।”

হাসান লোলা নামে একজন বলেন, “ব্রোকারদের দাবি মেনে সাময়িক বাজার ভালো হতে পারে, কিন্তু বড় বড় কোড লক করা ও জরিমানার নাটক না বন্ধ হলে লাভ হবে না।”

একজন ব্যবহারকারী চাণক্য দ্যা গ্রেট শেয়ারবাজার পরিস্থিতিকে তুলনা করেছেন গাজার ধ্বংসযজ্ঞের সঙ্গে। তার মতে, “মাকসুদ শেয়ারবাজারের নিয়ন্ত্রক না হয়ে যেন ইসরায়েলের ভূমিকায়, আর বিনিয়োগকারীরা যেন গাজার নিরীহ মানুষ।”

MD Murad Sheikh বলেন, “সেবা করতে নয়, ধনদা করতে যারা আসে তারা একেকজন লাউ কদু।”

সবচেয়ে কঠিন ভাষায় সমালোচনা করেন Rafiqul Islam। তার মন্তব্য: “মূল সংকট মাকসুদ ও আবু কাকা। ওদের সরিয়ে স্বচ্ছ ও যোগ্য দু’জনকে আনলেই বাজার ঘুরে দাঁড়াবে।”

Aminur Rashid Amin আরও বলেন, “IPO এনে মানুষকে ফকির বানানো বন্ধ হোক। আগের কোম্পানিগুলোই এখন গলার কাঁটা।”

H M Moniruzzaman স্পষ্ট করে বলেন, “মাকসুদ এবং আবু পদত্যাগ না করলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরবে না। যত মিটিং করেন, তাতে কিছু হবে না।”

Alamgir Lablu প্রশ্ন তোলেন, “আজকের মিটিংয়ের খরচ কত? এই শিশুসুলভ কথার জন্য কি এত আয়োজন দরকার?”

Nazmul Haque এবং Mohammad Rasel সরাসরি কটাক্ষ করেন, বলেন “সব বাটপাড়” আর “বালের সংকট চিহ্নিত।”

সংকট নিরসনে নতুন কমিটি

এদিকে, ১৭ মার্চ অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ৪ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে, যার সভাপতি অর্থ উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী। এই কমিটির লক্ষ্য বিএসইসিকে শক্তিশালী করা এবং কার্যকর সংস্কার নিশ্চিত করা।

আশার আলো না হতাশার ছায়া?

সরকার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা যেখানে পুঁজিবাজারকে ঘুরে দাঁড় করাতে পদক্ষেপ নিচ্ছে, সেখানে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের প্রতিক্রিয়ায় উঠে এসেছে তীব্র অনাস্থা ও হতাশা। বাস্তবায়নের গতি ও স্বচ্ছতা ছাড়া এই সংকট কাটানো যাবে না বলেই মনে করছেন তারা।

এখন দেখার বিষয়, পুঁজিবাজার নিয়ে সরকারের নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবভাবে কতটা কার্যকর হয় এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে পারে কিনা। তবে স্পষ্টতই, সাধারণ বিনিয়োগকারীরা শুধুমাত্র বৈঠক ও প্রতিশ্রুতি নয়— চাচ্ছেন বাস্তব পদক্ষেপ, স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা।

মো: রাজিব আলী/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ