ঢাকা, মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ৯ বৈশাখ ১৪৩২

MD: Razib Ali

Senior Reporter

চীনের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন হাসিনা, কারণ ছিল মোদি?

রাজনীতি ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০২৫ এপ্রিল ১৬ ২২:১৯:১৪
চীনের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন হাসিনা, কারণ ছিল মোদি?

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের ইতিহাসে নতুন এক অধ্যায় রচিত হতে যাচ্ছে। মাত্র ৫৫ মিনিটে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পৌঁছানোর স্বপ্ন এখন বাস্তব হতে চলেছে। উচ্চগতির বুলেট ট্রেন চালু করে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিপ্লব আনতে যাচ্ছে ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন সরকার।

আটকে থাকা পরিকল্পনার পেছনের গল্প

২০১৭ সালে চীনের সহায়তায় ঢাকা-চট্টগ্রাম বুলেট ট্রেন প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই শেষ হয়েছিল। নকশা ও নথিপত্র সবই প্রস্তুত ছিল। কেবল প্রয়োজন ছিল প্রধানমন্ত্রীর একটি সই। কিন্তু সেই সই আর কখনো আসেনি। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নাকি ভারতের দিকে তাকিয়ে সিদ্ধান্ত নিতেন। প্রতি বার যখন প্রকল্পটি সামনে আসত, তখনই ফোনে বলা হতো: "ওটা একটু চেপে রাখো, চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হলে মোদির সমস্যা হবে।"

ভারতকেন্দ্রিক নীতির বলি হয়েছিল দেশের উন্নয়ন

সরকারের অভ্যন্তর থেকেই তখন কেউ কেউ বলেছিলেন, উন্নয়ন চাইলে চীনের সঙ্গে কাজ ছাড়া উপায় নেই। কিন্তু শেখ হাসিনা জানতেন, চীনকে কাছে টানলে ভারত অসন্তুষ্ট হবে। আর ভারত অসন্তুষ্ট হলে তার নিজের ক্ষমতা টিকবে না। সে কারণেই বারবার থেমে গিয়েছিল এই যুগান্তকারী প্রকল্পটি।

২০২৪: রাজপথে জনতার বিস্ফোরণ

২০২৪ সালে ঢাকার রাজপথে নেমে আসে ছাত্র-জনতা। তারা স্লোগানে স্লোগানে জানিয়ে দেয়—আর নয় স্বৈরাচার। এই জনতার দাবির মুখে ক্ষমতায় আসে ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে একটি নতুন সরকার। ইউনুস রাজনীতিক নন, তবে হয়ে ওঠেন পরিবর্তনের প্রতীক। দায়িত্ব নিয়েই তিনি খুঁজে বের করেন পুরনো সেই স্বপ্নগুলো, যেগুলো রাজনৈতিক স্বার্থে চাপা পড়ে ছিল।

আবার ফিরল চীনের কর্মকর্তারা, শুরু হলো কাজ

নতুন সরকার প্রকল্পটি বাস্তবায়নে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়। চীনের কর্মকর্তারা আবার ঢাকায় আসেন। এবার আর প্রকল্প আটকে থাকেনি। শুরু হয় ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত বুলেট ট্রেন রুটের নির্মাণকাজ।

ছয়টি স্টেশন, অভাবনীয় গতি

প্রথম ধাপে এই রুটে ছয়টি প্রধান স্টেশন নির্ধারণ করা হয়েছে: ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, ফেনী, পাহাড়তলী ও চট্টগ্রাম। প্রতিটি ট্রেন ঘণ্টায় ৩০০ কিলোমিটার বেগে চলবে এবং প্রতিদিন গড়ে ৫০০ জন যাত্রী পরিবহন করতে পারবে।

নতুন শিল্পাঞ্চল, বাড়ছে কর্মসংস্থান

বুলেট ট্রেন প্রকল্প ঘিরে স্টেশন-ভিত্তিক অঞ্চলগুলোতে গড়ে উঠবে নতুন শিল্প এলাকা। এতে করে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। রেললাইন নির্মাণ, স্টেশন সাপোর্ট, টেকনিক্যাল টিম, সিকিউরিটি ও কাস্টমার সার্ভিস—সব জায়গায় কর্মী নিয়োগ দেওয়া হবে।

ব্যবসা-বাণিজ্যে বাড়বে গতি

ঢাকার ব্যবসায়ীরা সকালবেলা চট্টগ্রাম গিয়ে সন্ধ্যায় ফিরে আসতে পারবেন। এতে পণ্য আমদানি-রপ্তানি আরও নির্ভরযোগ্য ও সময় সাশ্রয়ী হবে। ব্যবসার গতি বাড়বে বহুগুণে।

এক বৃদ্ধের কণ্ঠে জনগণের আক্ষেপ

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত একজন বৃদ্ধ বলেন, "ভুল মানুষের হাতে ছিলাম তো রে বাবা।" পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এক কিশোর বিস্ময়ে প্রশ্ন করে, "এটা আগে হয় নাই কেন?"

অন্যদিকে কলকাতায় এক নিঃসঙ্গ মুখ

এদিকে কলকাতার এক পুরনো বাড়িতে বসে আছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। হাতে চীন ও বাংলাদেশের পতাকার পুরনো একটি ছবি। আরেক ছবিতে দেখা যাচ্ছে—ড. ইউনুস হাসিমুখে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত। শেখ হাসিনা নিঃসাড়ে বলেন, "আমি থাকলে কিছুই করতে পারতো না।" কিন্তু তার কণ্ঠে নেই আগের দৃঢ়তা। আছে শুধুই পরাজয়ের হতাশা।

এই ট্রেন কেবল উন্নয়ন নয়, এক রাজনৈতিক অধ্যায়ের পতনের গল্প

এই বুলেট ট্রেন কেবল সময় বা যাত্রী পরিবহনের গতি বাড়ানোর প্রকল্প নয়। এটি হলো এক দেশের সাহসী সিদ্ধান্ত, এক ভ্রান্ত নেতৃত্বের পতন, এবং এক নতুন দিগন্তে এগিয়ে যাওয়ার গল্প।

আল-আমিন ইসলাম/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ