ঢাকা, শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২

আসিফ নজরুল: বিএনপির সাথে বৈঠকে একমত, নির্বাচন নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা

রাজনীতি ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০২৫ এপ্রিল ১৪ ১৫:৫৫:৩০
আসিফ নজরুল: বিএনপির সাথে বৈঠকে একমত, নির্বাচন নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজনৈতিক অঙ্গনে গতকাল, ১৬ এপ্রিল, একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায়, যেখানে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির নেতারা এবং অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে আসিফ নজরুল বিএনপির অসন্তোষের বিষয়ে বক্তব্য রাখেন এবং নির্বাচন ও সংস্কার নিয়ে সরকারের অবস্থান পরিষ্কার করেন।

বিএনপির সন্তুষ্টি, তবে কিছু প্রশ্ন রয়ে গেছে

আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বৈঠক নিয়ে বলেন, "বিএনপির প্রতিনিধিরা বৈঠকে সন্তুষ্ট ছিলেন এবং অনেক বিষয়ে আমাদের সঙ্গে একমত হয়েছেন।" তবে, এই বৈঠকের পর বিএনপির নেতারা তাদের কিছু উদ্বেগ ও প্রশ্ন সরকারের কাছে তুলে ধরেন, বিশেষত নির্বাচনের সময়সীমা এবং সংস্কার প্রক্রিয়া নিয়ে।

আসিফ নজরুল স্পষ্টভাবে জানান, "বিএনপি তাদের অসন্তোষ প্রকাশ করেছে, তবে তারা খোলামেলা আলোচনা এবং মতবিনিময়ে সন্তুষ্ট ছিল।" সরকার এবং বিএনপি দুই পক্ষের মধ্যে কিছু দ্বন্দ্ব থাকলেও, তারা একই লক্ষ্যকে সামনে রেখে আলোচনায় বসে, যা দেশের গণতন্ত্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে তিনি মনে করেন।

নির্বাচনের সময়সীমা: ডিসেম্বর থেকে জুন

একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল নির্বাচন প্রসঙ্গে আসিফ নজরুলের বক্তব্য। তিনি বলেন, "প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।" তিনি আরও নিশ্চিত করেন, "যে যাই বলুক, জুনের পরে নির্বাচন হবে না।"

বিএনপি যে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চেয়েছিল, তা সম্পর্কিত তার মন্তব্য ছিল, "এটা নিশ্চিত যে, আমাদের সময়সীমা ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে থাকবে, তবে তা দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন হবে।" এর মাধ্যমে তিনি নির্বাচন সঠিক সময়ে করার বিষয়ে সরকারের দৃঢ় সংকল্প ব্যক্ত করেন।

সংস্কারের প্রক্রিয়া: কিছুটা সময় প্রয়োজন

বৈঠকে বিএনপি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলে ধরেছিল: যদি সংস্কারের বাস্তবায়ন হয়, তবে কেন দেরি হচ্ছে? এই প্রশ্নের উত্তরে আসিফ নজরুল বলেন, "যদিও জুলাই সনদ চূড়ান্ত হবে, তবে প্রয়োজনীয় আইন এবং নীতিগত পদক্ষেপ বাস্তবায়নে কিছুটা সময় লাগবে।" এটি বোঝায় যে সরকারের কাছে দ্রুত কাজ করার ইচ্ছা থাকলেও, কিছু আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সময় দরকার।

বিচারপ্রক্রিয়া ও সরকারের দায়বদ্ধতা

আইন উপদেষ্টা আরও বলেন, "এত প্রাণ ঝরেছে, ৫০ থেকে ৬০ হাজার মানুষ আহত হয়েছেন। তাদের জন্য সুবিচার নিশ্চিত করা, এই আন্দোলনের প্রধান দাবিগুলোর একটি।" তিনি আরও মন্তব্য করেন, "যদি কেবল নির্বাচন দিয়েই বিদায় নিই, তবে জনগণের কাছে কী জবাব দেব? বিচার ও সংস্কার প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে সরকারের কাছে দায়বদ্ধতা রয়েছে।"

গুগলীয় দৃষ্টিকোণ: সময়মতো নির্বাচন নিশ্চিত

তবে, আসিফ নজরুল জোর দিয়ে বলেন, "সরকারের কোনো কালবিলম্বের ইচ্ছা নেই। নির্বাচনের সময়সীমা ডিসেম্বর থেকে জুন পর্যন্ত হবে, তবে আমরা বলেছি, এই সময়ের মধ্যে যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন করব।" সরকারের কোনো ইচ্ছা নেই যাতে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি বা অনিশ্চয়তা তৈরি হয়।

বিএনপির প্রতিনিধি দল: বৈঠকে অংশগ্রহণ

বিএনপির প্রতিনিধিদল, যার নেতৃত্বে ছিলেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বৈঠক শেষে সরকারের পদক্ষেপ এবং সিদ্ধান্তগুলো পর্যালোচনা করে। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্যরা, যেমন জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।

এখন পর্যন্ত, সরকার এবং বিএনপির মধ্যে আলোচনার পর, একাধিক বিষয় নিয়ে একমত হওয়া সত্ত্বেও, কিছু পেনডিং বিষয় রয়েছে যা ভবিষ্যতে আরও আলোচনার মাধ্যমে নিষ্পত্তি হবে। তবে, সরকারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং এর আগে দেশের জনগণের প্রত্যাশা পূরণের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

এই বৈঠক এবং পরবর্তী পদক্ষেপগুলোর দিকে দেশের রাজনীতি গভীর নজর রাখছে, এবং জনগণ আশা করে যে, সরকার এবং বিএনপি উভয়ই শান্তিপূর্ণ এবং গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি সমাধান করবে।

আব্দুর রহিম/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ