ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ২ বৈশাখ ১৪৩২

ভিটামিন ই খাওয়ার গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য উপকারিতা

স্বাস্থ্য ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০২৫ এপ্রিল ১৩ ১৯:৪০:০৩
ভিটামিন ই খাওয়ার গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য উপকারিতা

নিজস্ব প্রতিবেদক: ভিটামিন ই—এই নামটির সঙ্গে আমরা কম-বেশি পরিচিত হলেও এর গঠন, কার্যকারিতা ও উপকারিতা সম্পর্কে অনেকেই জানি না। এটি একটি ফ্যাট-দ্রবণীয় পুষ্টি উপাদান, যা একাধিক রূপে বিদ্যমান থাকে। মূলত দুটি ভাগে ভাগ করা যায়—টোকোফেরল ও টোকোট্রিয়েনল। প্রতিটি ভাগে আবার আলফা, বিটা, গামা ও ডেল্টা উপপ্রকার রয়েছে। এর মধ্যে আলফা-টোকোফেরল মানবদেহে সবচেয়ে সক্রিয় এবং উপকারী বলে বিবেচিত।

ভিটামিন ই এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো—এর শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য। তবে শুধু এখানেই সীমাবদ্ধ নয়। চলুন জেনে নেওয়া যাক, কেন প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় ভিটামিন ই যুক্ত খাবার রাখা প্রয়োজন—

১. শরীরকে রক্ষা করে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মতো

ভিটামিন ই শরীরের কোষগুলোকে রক্ষা করতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। এটি ফ্রি র‍্যাডিকেল নামক ক্ষতিকর অণু দূর করে, যা কোষে জারণ প্রক্রিয়া সৃষ্টি করে। এই জারণ প্রক্রিয়াই অনেক সময় ক্যান্সার, হৃদরোগ ও স্নায়ু বিকলজনিত রোগের জন্য দায়ী। নিয়মিত ভিটামিন ই গ্রহণের ফলে কোষের এই ক্ষয় রোধ হয়, ফলে দীর্ঘ মেয়াদে স্বাস্থ্য থাকে সুরক্ষিত।

২. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়

শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ঠিকভাবে কাজ না করলে সহজেই বিভিন্ন সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়া যায়। ভিটামিন ই এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে সক্রিয় করে তোলে। গবেষণা বলছে, এটি লোহিত রক্তকণিকা ও শ্বেত রক্তকণিকার কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে, ফলে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করার শক্তি পায় শরীর। নিয়মিত এই ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার খেলে ছোটখাটো অসুস্থতা থেকে বড় ধরনের রোগ প্রতিরোধও সহজ হয়ে ওঠে।

৩. ত্বক রাখে সুন্দর ও সজীব

ভিটামিন ই ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য কার্যকরী একটি উপাদান। এটি ত্বককে ভেতর থেকে হাইড্রেট রাখে, দাগছোপ কমাতে সহায়তা করে এবং সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে সুরক্ষা দেয়। বার্ধক্যজনিত বলিরেখা বা ত্বকের ঝুলে যাওয়ার মতো সমস্যা কমাতেও এটি ভূমিকা রাখে। তাই যারা প্রাকৃতিকভাবে উজ্জ্বল, কোমল ও তারুণ্যদীপ্ত ত্বক চান, তাদের জন্য ভিটামিন ই অপরিহার্য।

৪. হৃদযন্ত্র রাখে সুস্থ

ভিটামিন ই রক্তে থাকা ক্ষতিকর এলডিএল কোলেস্টেরলের জারণ প্রতিরোধ করে, যা ধমনীতে চর্বি জমে প্লাক তৈরির ঝুঁকি কমায়। ফলে রক্তপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা কমে এবং হার্ট অ্যাটাক কিংবা স্ট্রোকের আশঙ্কাও হ্রাস পায়। তাই হৃদযন্ত্রের কার্যকারিতা ঠিক রাখতে নিয়মিত ভিটামিন ই যুক্ত খাবার গ্রহণ করাই বুদ্ধিমানের কাজ।

৫. চোখের দৃষ্টিশক্তি রক্ষা করে

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চোখের দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হওয়া, ছানি পড়া বা ম্যাকুলার ডিজেনারেশনের মতো সমস্যা দেখা দেয়। এসবের পেছনে মূল কারণ হলো কোষের অক্সিডেটিভ ক্ষতি। ভিটামিন ই এই ক্ষতি রোধে ভূমিকা রাখে এবং চোখের কোষকে রক্ষা করে। ফলে চোখ দীর্ঘদিন ভালো থাকে এবং বয়সজনিত দৃষ্টিহীনতার ঝুঁকিও কমে।

ভিটামিন ই পাওয়া যায় যেসব খাবারে

ভিটামিন ই এর প্রাকৃতিক উৎসের মধ্যে রয়েছে—বাদাম (বিশেষ করে আমন্ড ও হ্যাজেলনাট), সূর্যমুখীর বীজ, কাঁচা সবজি, পালং শাক, অ্যাভোকাডো, অলিভ অয়েল, ভুট্টার তেল এবং ডিমের কুসুম। এসব খাবার নিয়মিত খেলে শরীর প্রয়োজনীয় পরিমাণ ভিটামিন ই পেয়ে যাবে।

ভিটামিন ই আমাদের দেহের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থাকে সক্রিয় ও সুরক্ষিত রাখে। এটি শুধুই একটি পুষ্টি উপাদান নয়, বরং একটি স্বাস্থ্যের রক্ষাকবচ। তাই শরীরকে সুস্থ, ত্বককে উজ্জ্বল ও মনকে প্রাণবন্ত রাখতে প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় ভিটামিন ই সমৃদ্ধ খাবার রাখুন।

মোঃ গোলাম রাব্বানী/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ