ঢাকা, সোমবার, ১৪ এপ্রিল ২০২৫, ১ বৈশাখ ১৪৩২

ঘন ঘন ভূমিকম্প: কোরআন ও হাদিসে এর গোপন বার্তা কী

২০২৫ এপ্রিল ১৩ ১২:৪৫:৩৮
ঘন ঘন ভূমিকম্প: কোরআন ও হাদিসে এর গোপন বার্তা কী

নিজস্ব প্রতিবেদক: হঠাৎই কেঁপে ওঠে মাটি। সুউচ্চ দালানগুলো একে একে ভেঙে পড়ে। মানুষ ছুটে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে। যেন মুহূর্তেই থমকে যায় পুরো শহরের স্বাভাবিক জীবন।

ভূমিকম্প—শব্দটি শুনলেই গা শিউরে ওঠে। এটি এমন এক অদৃশ্য শক্তির বিস্ফোরণ, যার আগমন কখন, কোথায়, কীভাবে হবে—তা আজও নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব নয়।

প্রতিদিনই পৃথিবীর কোথাও না কোথাও ছোট-বড় ভূমিকম্প ঘটে চলেছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এই ভূমিকম্পের উৎপত্তি কী? কেবল কি এটি একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া, নাকি এতে রয়েছে কোনো মহান সত্তার পক্ষ থেকে পাঠানো বার্তা?

আধুনিক ভূবিজ্ঞান মতে, পৃথিবীর অভ্যন্তরে রয়েছে কয়েকটি বিশাল টেকটোনিক প্লেট। এই প্লেটগুলো একে অপরের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হলে নিচের দিকে প্রচণ্ড তাপ উৎপন্ন হয়। এই তাপে গলে যাওয়া ম্যাগমা উপরের দিকে উঠে এসে সৃষ্টি করে আগ্নেয়গিরি ও ভূমিকম্প।

তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো, এই বিজ্ঞানভিত্তিক ব্যাখ্যার সঙ্গে মিলে যায় কোরআনের ভাষ্যও। সূরা জিলজাল-এ বলা হয়েছে:

“যখন পৃথিবী প্রবলভাবে কেঁপে উঠবে, এবং তার ভেতরের সমস্ত কিছু বাইরে ছুঁড়ে ফেলবে…”(সূরা জিলজাল: আয়াত ১-২)

এখানে “বোঝা” বা “অভ্যন্তরের জিনিস বের করে দেওয়া”—এই ব্যাখ্যা আধুনিক ভূবিজ্ঞানের সাথে আশ্চর্যজনকভাবে সাদৃশ্যপূর্ণ।

ইসলামের দৃষ্টিতে, ভূমিকম্প কেবল একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়—এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি সতর্কবার্তা।

“হে মানুষ! তোমাদের প্রভুকে ভয় করো। নিশ্চয় কেয়ামতের কম্পন এক ভয়ঙ্কর ব্যাপার।”(সূরা হজ: আয়াত ১)

এই আয়াত আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়—ভূমিকম্প কোনো নিছক ঘটনা নয়; বরং এটি এক নীরব ঘুষি, যা মানুষকে সচেতন করে তোলে।

ইসলামি স্কলাররা বলেন, কেয়ামতের সূচনা হবে একটি মহা ভূমিকম্পের মাধ্যমে। সেই সময় মাটি নিজের অন্তরে লুকিয়ে রাখা সব কিছু উগরে দেবে—মানুষের লাশ, আমল, কথাবার্তা, এমনকি সাক্ষ্যপ্রমাণ।

প্রতিটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ মানুষকে থমকে দাঁড়াতে শেখায়। কোরআনে আল্লাহ বলেন:

“তোমাদের যেসব বিপদ আসে, তা তোমাদের নিজেদের কর্মের ফল। আর তিনি তোমাদের বহু পাপ ক্ষমা করে দেন।”(সূরা শূরা: আয়াত ৩০)

এই আয়াত থেকে বোঝা যায়—ভূমিকম্প বা অন্যান্য দুর্যোগ কেবল শাস্তি নয়, বরং তা অনুপ্রেরণা ও সতর্কবার্তা। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, বহু জাতি তাদের সীমালঙ্ঘনের কারণে ভূমিকম্পে ধ্বংস হয়েছে। সূরা আরাফ-এ ছয়টি জাতির পতনের কাহিনি বর্ণনা করা হয়েছে, যাদের কেউ আল্লাহর বার্তাবাহকদের অস্বীকার করেছিল, কেউ সীমাহীন পাপে জড়িয়ে পড়েছিল।

আমরা যখন আধুনিক প্রযুক্তির চূড়ায় অবস্থান করেও ভূমিকম্প ঠেকাতে পারি না, তখনই বুঝতে পারি—আসল শক্তি কার হাতে। তখনই ধরিত্রী যেন একবার কেঁপে বলে ওঠে—

"থেমে যাও। ভাবো। ফিরে এসো…"

ভূমিকম্প তাই শুধুই একটি বৈজ্ঞানিক ঘটনা নয়। এটি একটি বার্তা—আমাদের প্রভুর পক্ষ থেকে। আমাদের মনে করিয়ে দেয়, এই দুনিয়া চিরস্থায়ী নয়। এখনো সময় আছে—ফিরে আসার, সংশোধনের, আল্লাহর পথে চলার।

আব্দুর রহিম/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ