ঢাকা, সোমবার, ১৪ এপ্রিল ২০২৫, ১ বৈশাখ ১৪৩২

MD. Razib Ali

Senior Reporter

বল এখন বাংলাদেশের কোর্টে, মোদির ভুল চালে বিপদে ভারত

জাতীয় ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০২৫ এপ্রিল ১১ ২৩:৩৭:১০
বল এখন বাংলাদেশের কোর্টে, মোদির ভুল চালে বিপদে ভারত

নিজস্ব প্রতিবেদক: সদ্য বিমস্টেক সম্মেলন শেষে নয়াদিল্লিতে ফিরেই সাউথ ব্লকের সিচুয়েশন রুমে জরুরি বৈঠকে বসেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকের মূল আলোচ্য বিষয় ছিল দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক প্রভাব এবং বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যিক সম্পর্ক।

এই বৈঠক থেকেই আসে একটি তাৎপর্যপূর্ণ সিদ্ধান্ত— বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল।

এখন থেকে ভারতের ভূমি ব্যবহার করে বাংলাদেশ কোনো তৃতীয় দেশে পণ্য রপ্তানি করতে পারবে না

২০২০ সালের জুনে ভারত বাংলাদেশকে সীমিত পরিসরে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা দিয়েছিল। এর আওতায় বাংলাদেশের গার্মেন্টস পণ্যসহ কিছু রপ্তানি সামগ্রী ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় দেশে পাঠানো হতো। এতে ভারতও লাভবান হচ্ছিল মোটা অঙ্কের রাজস্ব থেকে।

কিন্তু ভারতের নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এখন থেকে এই সুবিধা পুরোপুরি বন্ধ।

বিশ্লেষকরা বলছেন— ‘মোদি বোধহয় ভুল চাল খেলেন’

বিশ্লেষকদের মতে, ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে মোদি সরকার হয়তো নিজের কূটনৈতিক দিক থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

প্রথমত, এটি WTO নিয়ম লঙ্ঘন করে।

দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশও চাইলে ভারতের দেওয়া ট্রানজিট সুবিধা বাতিল করতে পারে।

তৃতীয়ত, এটি উত্তর-পূর্ব ভারতের ‘সেভেন সিস্টারস’ রাজ্যগুলোর পণ্য সরবরাহে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।

বাংলাদেশের জন্য কী কী প্রভাব পড়বে?

১. নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে বাণিজ্যে সমস্যা:

ভারতের মাটি ব্যবহার করতে না পারলে সাময়িকভাবে বাংলাদেশের সঙ্গে নেপাল ও ভুটানের বাণিজ্য ব্যাহত হতে পারে। তবে এটি বড় ক্ষতির চেয়ে সাময়িক জটিলতা বলেই মনে করছেন অনেকে।

২. গার্মেন্টস রপ্তানিতে বাধা:

গার্মেন্টস পণ্যের একটি অংশ এতদিন ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে রপ্তানি হতো। এই পথ বন্ধ হওয়ায় অন্য বিকল্প খুঁজতে হবে।

কিন্তু বাংলাদেশও প্রস্তুত: বিকল্প রপ্তানি পথ খোলা

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বাংলাদেশ এই পরিস্থিতি থেকে দ্রুত উত্তরণ ঘটাতে সক্ষম। যেমন:

সিলেট ও ঢাকা বিমানবন্দরকে রপ্তানিমুখী পণ্যের জন্য ব্যবহার বৃদ্ধি করা

কার্গো হ্যান্ডেলিং সুবিধা বাড়ানো

মালদ্বীপের বন্দর ইতোমধ্যেই ব্যবহার শুরু করেছে বাংলাদেশ

শ্রীলঙ্কার বন্দরও হতে পারে নতুন রপ্তানির গেটওয়ে

বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নও এই সুযোগে আরও বেগ পাবে বলে মনে করা হচ্ছে।

ভারতের ‘পাওয়া’ সুবিধা কত বড়?

ভারত বহু বছর ধরে বাংলাদেশের ভূমি, বন্দর, রেলপথ ও জলপথ ব্যবহার করে তার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে পণ্য পরিবহন করে। এর কিছু উদাহরণ:

কলকাতা → আশুগঞ্জ (নৌপথ), তারপর আশুগঞ্জ → আগরতলা (সড়কপথ)

চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহার করে উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোতে পণ্য পরিবহন

২০১৮ সালের এক চুক্তির আওতায় ভারত ২০২০ সাল থেকে এই সুবিধা পাচ্ছে

এই সুযোগগুলো বাংলাদেশ চাইলে যে কোনো সময় স্থগিত করতে পারে— আর এটাই এখন ভারতের কৌশলগত দুশ্চিন্তার বড় কারণ।

‘বল এখন বাংলাদেশের কোর্টে’

বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারতের এই সিদ্ধান্ত একতরফাভাবে সম্পর্কের ভারসাম্য নষ্ট করেছে। বাংলাদেশ এখন চাইলে:

পাল্টা চাপে ফেলতে পারে ভারতকে,

অথবা ভারতকে আবারও আলোচনায় ফিরিয়ে এনে দর কষাকষির সুযোগ তৈরি করতে পারে।

সব মিলিয়ে এটিই এখন প্রশ্ন— ভারতের এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের জন্য সংকট, না নতুন কৌশলগত সম্ভাবনার দ্বার?

মো: রাজিব আলী/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ