ঢাকা, সোমবার, ১৪ এপ্রিল ২০২৫, ১ বৈশাখ ১৪৩২

ইসলাম যে ১৫ শ্রেণির নারীকে বিয়ে করতে নিষেধ করেছে

২০২৫ এপ্রিল ১১ ১৮:৫৩:৩০
ইসলাম যে ১৫ শ্রেণির নারীকে বিয়ে করতে নিষেধ করেছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: ইসলাম মানুষকে শৃঙ্খল ও পবিত্র জীবনযাপন শেখাতে যে অন্যতম পথ দেখিয়েছে, তা হলো বিবাহ। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন, “তাঁর নিদর্শনাবলির অন্যতম হলো, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকেই স্ত্রী সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তি পাও। এবং তিনি তোমাদের মাঝে ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন” (সূরা রূম, আয়াত ২১)।

ইসলামে শুধু বিবাহ করার নির্দেশ নয়, বরং কার সঙ্গে বিবাহ বৈধ এবং কার সঙ্গে নয়—সেই সীমারেখাও সুস্পষ্টভাবে নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এই নির্ধারণের মূল উদ্দেশ্য হলো পারিবারিক বন্ধনের পবিত্রতা রক্ষা ও সমাজে নৈতিকতা বজায় রাখা।

পবিত্র কোরআন ও হাদিসের আলোকে যেসব নারীর সঙ্গে পুরুষের বিবাহ সম্পূর্ণরূপে হারাম, এমন ১৫ শ্রেণির নারীর তালিকা নিচে দেওয়া হলো:

বিয়ে করা সম্পূর্ণ হারাম—এই ১৫ শ্রেণির নারী:

১. পিতার স্ত্রী:

সৎমাকে (বাবার স্ত্রী) বিয়ে করা সম্পূর্ণ হারাম। জাহেলি যুগে এমন রীতি ছিল, কিন্তু ইসলাম তা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করেছে।

২. জন্মদাত্রী মা ও ঊর্ধ্বতন নারীরা:

মা, দাদি, নানি বা তার ঊর্ধ্বতন কোনো নারী আত্মীয়ের সঙ্গে বিয়ে করা হারাম।

৩. নিজের কন্যাসন্তান ও তাদের সন্তানরা:

নিজের মেয়ে, ছেলের মেয়ে, মেয়ের মেয়ে এবং তাদের গর্ভজাত কন্যাসন্তানকে বিয়ে করা হারাম।

৪. সবধরনের বোন:

সহোদর, সৎমায়ের মেয়ে এবং সৎবাবার মেয়ে—সব ধরনের বোনের সঙ্গে বিবাহ হারাম।

৫. ফুফু:

বাবার সব বোন—সহোদর হোক বা সৎ—বিয়ের জন্য নিষিদ্ধ।

৬. সঙ্গীনির মেয়ে ও মা:

যে স্ত্রীকে শারীরিকভাবে স্পর্শ করা হয়েছে, তার আগে বা পরে জন্মানো মেয়েকে বিয়ে করা হারাম। তেমনই স্ত্রীর মা, নানি বা দাদি শাশুড়িকে বিয়ে করা নিষিদ্ধ।

৭. খালা:

মায়ের সব বোন—সহোদর, সৎমায়ের বোন—বিয়ে করা হারাম।

৮. ভাতিজি:

ভাইয়ের মেয়ে, সে সহোদর হোক বা সৎভাইয়ের মেয়ে—তাদের এবং তাদের সন্তানদের বিয়ে বৈধ নয়।

৯. ভাগ্নি:

বোনের মেয়ে, হোক সহোদর বা সৎবোনের—এদের এবং তাদের সন্তানদের বিয়ে নিষিদ্ধ।

১০. দুধ সম্পর্কের কন্যা:

স্ত্রীর দুধ পান করা মেয়ে, তার কন্যা, দুধ ছেলের মেয়ে ও দুধ ছেলের স্ত্রী—তাদের সঙ্গে বিবাহ সম্পূর্ণ হারাম।

১১. দুধ মা ও তার আত্মীয়রা:

দুধ মা, তার খালা, ফুফু, দাদি ও নানি—তাদের সঙ্গেও বিবাহ নিষিদ্ধ।

১২. দুধ বোন ও তার সন্তানরা:

দুধ বোন, তার কন্যা ও দুধ ভাইয়ের কন্যাদের সঙ্গে বিবাহও হারাম, রক্তসম্পর্কের মতোই।

১৩. ছেলের স্ত্রী:

নিজের ছেলের স্ত্রীকে বিয়ে করা কখনোই বৈধ নয়।

১৪. একসঙ্গে এমন দুই নারীকে বিয়ে:

যাদের একজন পুরুষ হলে পরস্পরের সঙ্গে বিবাহ বৈধ হতো না—যেমন, স্ত্রী ও তার বোন, খালা বা ফুফুকে একসঙ্গে স্ত্রী করা যাবে না।

১৫. বিবাহিত নারী:

অন্যের বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ নারীর সঙ্গে বিয়ে করা সম্পূর্ণ হারাম। বৈধ হতে হলে দুইটি শর্ত পূরণ করতে হবে—এক, আগের স্বামীর মৃত্যু বা তালাকপ্রাপ্তি; দুই, ইদ্দতকাল সম্পন্ন হওয়া।

কোরআনের ব্যাখ্যা

আল্লাহতায়ালা সূরা আন-নিসা’র ২৩ নম্বর আয়াতে বলেন:

“তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে তোমাদের মায়েরা, কন্যারা, বোনেরা, পিতার বোনেরা, মাতার বোনেরা, ভাইয়ের কন্যারা, বোনের কন্যারা, যেসব মায়েরা তোমাদের দুধ পান করিয়েছেন, দুধ বোনেরা, তোমাদের স্ত্রীদের মায়েরা, তোমাদের ঔরসজাত স্ত্রীর কন্যারা... এবং দুই বোনকে একসঙ্গে বিবাহ করা।”

এই বিধানগুলো ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে বিশৃঙ্খলা এড়াতে, পারিবারিক সম্পর্ককে সংরক্ষণ করতে এবং মানুষের নৈতিকতা ও চারিত্রিক দৃঢ়তা বজায় রাখতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইসলাম শুধু কীভাবে বিয়ে করতে হবে তা-ই বলেনি, বরং কাকে বিয়ে না করাই উচিত—সেই শিক্ষাও দিয়েছে সুস্পষ্টভাবে।

সাবরিনা সাবা/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ