ঢাকা, শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২

MD. Razib Ali

Senior Reporter

মশিউর সিকিউরিটিজ: এক ভয়ানক প্রতারণার শিকার শতাধিক বিনিয়োগকারী

শেয়ারবাজার ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০২৫ এপ্রিল ১০ ১৫:২০:৩৯
মশিউর সিকিউরিটিজ: এক ভয়ানক প্রতারণার শিকার শতাধিক বিনিয়োগকারী

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের স্টক মার্কেটে ঘটে যাওয়া এক ভয়ানক প্রতারণার ঘটনা কাঁপিয়ে দিয়েছে বিনিয়োগকারীদের। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ট্রেক হোল্ডার প্রতিষ্ঠান মশিউর সিকিউরিটিজ লিমিটেড-এর কর্মকাণ্ডের ফলে শতাধিক বিনিয়োগকারী আজ নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। তাদের হাতে ২৫ বছরের পরিশ্রমী সঞ্চয়, কোটি কোটি টাকা, এমনকি জীবনের স্বপ্নও হারিয়ে গেছে এক প্রলয়ংকরী ধাক্কায়।

অভিযোগের শিকার বিনিয়োগকারীরা: দুঃখের বর্ণনা

বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরামের (সিএমজেএফ) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতারিত বিনিয়োগকারীরা তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন। একে একে তারা তুলে ধরেছেন তাদের চোখের সামনে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ ক্ষতির গল্প।

ফারহানা জাফরিন বলেন, “আমি জীবনের সমস্ত সঞ্চিত এক কোটি টাকা মশিউর সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করেছিলাম। কিন্তু আজ আমি একেবারে নিঃস্ব। এক টাকাও ফিরে পাইনি।” একইভাবে আবু মাসুদ অভিযোগ করেন, “আমার ৩৬ লাখ টাকা বিনিয়োগ ছিল। কিন্তু তাদের সার্ভারে আমাদের পোর্টফোলিও ভুলভাবে দেখানো হতো, আমাদের তথ্য গোপন রাখা হত। আমার টাকা ফেরত পাইনি।”

প্রতারণার চিত্র: এক ভয়ানক স্ক্যাম

বিনিয়োগকারীরা জানান, মশিউর সিকিউরিটিজে তাদের শেয়ার বিক্রি করা হতো এবং সেগুলোর পরিবর্তে জাল সফটওয়্যার দ্বারা তৈরি করা একটি ভুল পোর্টফোলিও পাঠানো হতো। আর এই পোর্টফোলিও দেখে তারা বিশ্বাস করতেন, কিন্তু বাস্তবে তাদের শেয়ার ও অর্থ গায়েব হয়ে যেত।

এছাড়া, সিডিবিএল কনফার্মেশন মেসেজ যাতে না যায়, সেজন্য গ্রাহকদের মোবাইল নম্বর পরিবর্তন করে নিজেদের নম্বর বসিয়ে দেওয়া হত। আরও বলা হয়, রেকর্ড ডেটের আগে বেশি দামে শেয়ার বিক্রি করা হত, এরপর কম দামে সেগুলি কিনে রাখা হতো এবং বিনিয়োগকারীরা কোনো লভ্যাংশ পেতেন না।

বিশ্বস্ততার সাথে প্রতারণা

এই প্রতারণার সবচেয়ে ভয়ানক দিক হলো, প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের শেয়ার এবং ক্যাশ গায়েব করা হত। তাদের কোন খবরই আসত না, যেন তাদের আর্থিক সম্পদ একেবারে হাওয়া হয়ে গেছে।

“আমরা বহুবার ডিএসই, বিএসইসি এবং বাংলাদেশ ব্যাংকে অভিযোগ করেছি, কিন্তু কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি,”—বলেন ক্ষতিগ্রস্ত এক বিনিয়োগকারী। তাদের দাবি, “বিএসইসি আমাদের টাকা উদ্ধার করতে কোনো উদ্যোগ নেয়নি। তাদের বিমাতাসুলভ আচরণের কারণে আমরা আরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।”

অর্থ আত্মসাৎ এবং পাচারের অভিযোগ

বিনিয়োগকারীরা আরও দাবি করেন, মশিউর সিকিউরিটিজ প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ১৬১ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। এই অর্থ অবৈধভাবে বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ এবং পাচার করা হয়েছে। এসব খাতের মধ্যে রয়েছে Hotel Graver Inn, Kuakata, Mazim Agro Ltd, এবং Mazim Trading Corporation। এছাড়া, তারা অভিযোগ করেন যে প্রতিষ্ঠানটির মালিকরা বিলাসবহুল জীবনযাপন করছেন এবং অবৈধভাবে অর্থ পাচার করছেন।

বিনিয়োগকারীদের আহ্বান: শাস্তি দাবি

বিনিয়োগকারীরা সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও অর্থ উপদেষ্টার কাছে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে বলেন, “আমরা আজ নিঃস্ব। অনেকের জীবন ধ্বংস হয়ে গেছে। যদি দ্রুত কোনো পদক্ষেপ নেওয়া না হয়, তবে আরও বহু পরিবার পথে বসবে।”

তারা দাবি করেছেন, “প্রতারকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া উচিত এবং ডিএসই ও বিএসইসি কর্মকর্তাদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে তদন্ত করতে হবে।”

মূল অভিযুক্তরা

এখন পর্যন্ত, মশিউর সিকিউরিটিজ-এর বিরুদ্ধে যারা অভিযুক্ত, তারা হলেন:

শেখ মোগলজান রহমান (মিঠু) – ম্যানেজিং ডিরেক্টর

জিয়াউল হাসান চিসতি (মামুন) – ডিরেক্টর

বিপুল, টুটুল (আইটি জিএম) – পোর্টফোলিও জালিয়াতির মূল হোতা

এই সব অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অবৈধ বিনিয়োগ এবং অর্থ পাচারের গুরুতর অভিযোগ রয়েছে।

এখনই পদক্ষেপ প্রয়োজন

আজ, বিনিয়োগকারীরা চূড়ান্তভাবে দাবি করছেন—এই প্রতারণার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক। তারা বিশ্বাস করেন, দ্রুত পদক্ষেপ নিলে অন্তত তাদের আর্থিক ক্ষতির কিছুটা হলেও ক্ষতিপূরণ হতে পারে। শাস্তি প্রাপ্তির আশায় তারা এক প্রতিক্ষার মধ্যে রয়েছেন।

মো: রাজিব আলী/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ