ঢাকা, শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ১২ বৈশাখ ১৪৩২

MD. Razib Ali

Senior Reporter

২০৩৫ সালে বাংলাদেশ: আঞ্চলিক উৎপাদন কেন্দ্র হয়ে উঠবে বাংলাদেশ

জাতীয় ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০২৫ এপ্রিল ০৯ ২২:৩৫:৩২
২০৩৫ সালে বাংলাদেশ: আঞ্চলিক উৎপাদন কেন্দ্র হয়ে উঠবে বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক: ২০২৫ সালের বাংলাদেশ—এটা যেন এক নতুন দিগন্তের সূচনা। আগামী ২০৩৫ সালে বাংলাদেশ কেমন হবে? এই প্রশ্নের উত্তরে এক সাহসী ভিশন উপস্থাপন করা হয় দেশের নবম বিনিয়োগ সম্মেলনে, যেখানে ভবিষ্যতের বাংলাদেশকে একটি শক্তিশালী আঞ্চলিক উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে কল্পনা করা হয়।

এই সম্মেলনে এমন একটি দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরা হয়, যেখানে বাংলাদেশ শুধু উদীয়মান অর্থনীতি নয়, বরং পূর্ব থেকে পশ্চিমকে সংযুক্ত করে একটি সেতু হয়ে দাঁড়াবে। এমন একটি সেতু, যা হিমালয়কে বঙ্গোপসাগরের সাথে যুক্ত করবে, এবং এটি হবে একটি বিশ্বমানের উৎপাদন কেন্দ্র, যেখানে স্থানীয় এবং বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীরা আছন্ন, এবং পণ্য রপ্তানি করবে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে।

এই ভিশন শুধু কল্পনা নয়; এটি বাস্তবে রূপ নেওয়ার পথে এগিয়ে চলেছে। সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, আগামী ৫-১০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ এমন এক দেশের রূপ নিবে, যেটি সিঙ্গাপুর এবং ব্যাংককের মতো উন্নত শহরের কাতারে দাঁড়াবে। এখানকার তরুণ জনগোষ্ঠী, যাদের অধিকাংশই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অভ্যস্ত, তাদের চাহিদা তাই আলাদা। তারা চাইছে, বাংলাদেশ যেন দ্রুত বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির একটি অংশ হয়ে ওঠে।

বাংলাদেশের সম্ভাবনা: বিশাল বাজার ও শক্তিশালী জনগণ

বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বাজারের শক্তি অপরিসীম। আমাদের জনসংখ্যা ১৮০ মিলিয়ন, যার প্রায় অর্ধেকই ২৫ বছরের কম বয়সী। মধ্যবিত্ত শ্রেণী ৩.৫ কোটির কাছাকাছি, যা মালয়েশিয়ার পুরো জনসংখ্যার সমান। এই বিশাল জনগণের মধ্যে একদিকে যেমন রয়েছে শ্রমশক্তি, অন্যদিকে রয়েছে অমূল্য মানবসম্পদ, যা বিশ্ব বাজারে প্রতিযোগিতার এক বড় মাধ্যম হিসেবে কাজ করবে।

এছাড়া, বাংলাদেশ এখন নতুন এক বাস্তবতায় প্রবেশ করছে। চট্টগ্রামের চিরং এলাকায় বন্দর সক্ষমতা তিনগুণ বৃদ্ধি করা হচ্ছে, যার ফলে বাংলাদেশের অবস্থান দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম লজিস্টিক হাব হিসেবে গড়ে উঠবে। এভাবে, বাংলাদেশের রপ্তানি বাজার শুধু দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, এটি একটি বৃহত্তর আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক বাজারের অংশ হয়ে উঠবে।

বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ: সরকার কী করছে?

বাংলাদেশ সরকার ইতিমধ্যেই ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। এবার সরকারের উদ্দেশ্য হচ্ছে ব্যবসার ক্ষেত্রে একটি ‘ওয়ান-স্টপ সার্ভিস’ তৈরি করা, যেখানে বিনিয়োগকারীরা এক জায়গায় এসে সমস্ত প্রক্রিয়া সহজে সম্পন্ন করতে পারবেন।

এছাড়া, বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নতুন একটি ‘গ্রিন চ্যানেল’ ব্যবস্থা চালু করেছে, যা সুবিধাপ্রাপ্ত ব্যবসায়ীদের কাস্টমস চেকিংয়ের মাধ্যমে দ্রুত পণ্য পরিবহন করতে সহায়তা করবে।

এটি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ, যা বাংলাদেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। এছাড়া, সরকারের পক্ষ থেকে একটি বেসরকারি খাতের উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করা হচ্ছে, যা নিয়মিতভাবে রাষ্ট্রপ্রধানকে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্পর্কে পরামর্শ প্রদান করবে।

২০৩৫ সালের দৃষ্টিভঙ্গি: ভবিষ্যত বাংলাদেশের পথচলা

বাংলাদেশের এই পরিবর্তন শুধু সরকারের উদ্যোগ নয়, এটি একটি জাতিগত স্বপ্ন। সরকার ও জনগণের যৌথ প্রয়াসে, আগামী ২০৩৫ সালে বাংলাদেশ হয়ে উঠবে একটি শক্তিশালী আঞ্চলিক উৎপাদন কেন্দ্র, যা শুধুমাত্র ১৮০ মিলিয়ন মানুষের নয়, বরং সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতির কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠবে।

এটি একটি এমন সময়ের প্রস্তুতি, যেখানে আমাদের জনগণের মানসিকতা ও দৃঢ় প্রত্যয় নতুন সম্ভাবনার দিকে এগিয়ে যাবে। এই যুগান্তকারী পরিবর্তন আনতে অনেক বাধা আসবে, তবে সরকারের দৃঢ় পদক্ষেপ ও জনগণের সমর্থন বাংলাদেশের রূপান্তরমূলক যাত্রাকে আরও শক্তিশালী করবে।

বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ এখন এক উত্তেজনাপূর্ণ গন্তব্য, এবং এর অর্থনীতি যে আগামীর জন্য তৈরি, তা আজ পরিষ্কার। আগামী ২০৩৫ সাল একটি নতুন বাংলাদেশের জন্ম দিবে—এটা শুধু একটি স্বপ্ন নয়, বরং একটি বাস্তব সম্ভাবনা।

মো: রাজিব আলী/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ