ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ৪ বৈশাখ ১৪৩২

ইউনূস-মোদী বৈঠকে শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ নিয়ে ‘চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি

জাতীয় ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০২৫ এপ্রিল ০৯ ১০:৫৯:২৪
ইউনূস-মোদী বৈঠকে শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ নিয়ে ‘চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি

নিজস্ব প্রতিবেদক: ব্যাংককে বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের বৈঠকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের বিষয়টি তুলে ধরলেও এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

মঙ্গলবার ঢাকায় আলাদা দুটি সংবাদ ব্রিফিংয়ে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন ও প্রধান উপদেষ্টার হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ খলিলুর রহমান।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তৌহিদ হোসেন বলেন, “বিষয়টি উত্থাপিত হয়েছে, তবে এখনো চূড়ান্ত কিছু হয়নি। আমরা ভারতের কাছে তাকে ফেরত দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছি, যাতে তাকে বিচারের মুখোমুখি করা যায়।”

অন্যদিকে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে খলিলুর রহমান বলেন, “শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের অনুরোধ আমরা করেছি। এ বিষয়ে দুপক্ষ একসঙ্গে কাজ করবে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক কোনো ব্যক্তি বা দলের সঙ্গে নয়, বরং রাষ্ট্রীয় সম্পর্ক। আমরাও বিষয়টিকে সেভাবেই দেখি।”

এর আগে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমের বরাতে বাসস জানিয়েছিল, ইউনূস-মোদী বৈঠকে শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়েছে বাংলাদেশ। উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণআন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা ভারতে চলে যান এবং এখনো সেখানে অবস্থান করছেন।

সরকার জানিয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সংঘটিত দমন-পীড়নকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে বিবেচনা করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনাসহ তার ঘনিষ্ঠদের বিচারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া ‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের’ নামে গোপন বন্দিশিবির পরিচালনা, গুম ও হত্যার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। বর্তমানে তিনটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে ট্রাইব্যুনাল। প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় ভারতকে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দিলেও এখন পর্যন্ত দিল্লি তার কোনো জবাব দেয়নি।

ভিসা ও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে অস্বস্তি

দুই দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হলেও এখন পর্যন্ত ভারত ভিসা ইস্যু চালু না করায় সাধারণ মানুষের যাতায়াতে অস্বস্তি বিরাজ করছে। এ বিষয়ে তৌহিদ হোসেন বলেন, “ভিসা হচ্ছে একটি দেশের সার্বভৌম অধিকার। তবে আমরা চাই ভিসা প্রক্রিয়া সহজ হোক। না হলে মানুষ বিকল্প খুঁজে নেবে, ইতোমধ্যেই নিচ্ছে।”

তিনি আরও বলেন, “কলকাতার অর্থনীতি, বিশেষ করে হাসপাতালগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ভিসা না দেওয়ার কারণে। তাই এটা ভারতকেই ভাবতে হবে।”

তবে সম্পর্ক উন্নয়নের বিষয়ে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, “দুই পক্ষ মিলেই সম্পর্ক এগোবে। আমরা তা চালু রেখেছি এবং আশা করছি আগামীতে সম্পর্ক আরও ভালো হবে।”

তিস্তা ও গঙ্গা নিয়ে আলোচনা

প্রধান উপদেষ্টার সাম্প্রতিক বেইজিং সফরে তিস্তা প্রকল্পে চীনা কোম্পানিগুলোর অংশগ্রহণে আগ্রহ দেখানো হয়েছে। অন্যদিকে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠকেও তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছে সরকার।

তিস্তার ক্ষেত্রে ভারতের সঙ্গে অগ্রগতির বিষয়ে তৌহিদ হোসেন বলেন, “নদীর পানি নিয়ে আলোচনা সময়সাপেক্ষ। আমরা কোনো পক্ষকে বাদ না দিয়ে উন্মুক্তভাবে আলোচনা চালাতে চাই। ভারতের সঙ্গেও আলোচনা সম্ভব, চীনের সঙ্গেও।”

গঙ্গা চুক্তি নবায়ন নিয়ে হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ খলিলুর রহমান বলেন, “গঙ্গা চুক্তি আগামী বছর শেষ হচ্ছে। আমরা যোগাযোগ রাখছি যাতে আলোচনা সুন্দরভাবে শুরু হয়। আমাদের বিশ্বাস, ভারত সহযোগিতা করবে।”

তিনি আরও বলেন, “তিস্তা অববাহিকায় দেশের ১৪% মানুষ বসবাস করে। তাদের ন্যূনতম পানির অধিকার নিশ্চিত করা সরকারের অগ্রাধিকার। এজন্য ভারতের সঙ্গে চুক্তির পাশাপাশি বিকল্প পথও খোলা রাখতে হবে।”

মোঃ আরিফ খান/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ