ঢাকা, মঙ্গলবার, ৮ এপ্রিল ২০২৫, ২৪ চৈত্র ১৪৩১

মাইগ্রেনের ব্যথা হলেই প্যারাসিটামল, হতে পারে যেসব বিপদ

স্বাস্থ্য ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০২৫ এপ্রিল ০৭ ২০:৪৩:০৮
মাইগ্রেনের ব্যথা হলেই প্যারাসিটামল, হতে পারে যেসব বিপদ

নিজস্ব প্রতিবেদক: মাইগ্রেনের ব্যথা এতটাই তীব্র হতে পারে যে, অনেক সময় রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হতে পারে। মাইগ্রেনের যন্ত্রণায় কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে জ্ঞান হারানও। এ কারণে, মাইগ্রেনের ব্যথা উপেক্ষা না করে সঠিক চিকিৎসা নেয়া গুরুত্বপূর্ণ। অনেকেই মাইগ্রেনের সময় প্যারাসিটামল খেয়ে সান্ত্বনা পাওয়ার চেষ্টা করেন, তবে এটি হতে পারে ক্ষতিকর, কারণ মাইগ্রেনের প্রকৃত কারণ শনাক্ত না করে অন্য কোন গুরুতর রোগ উপেক্ষা করা হতে পারে। তাই, মাইগ্রেনের ব্যথা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

মাইগ্রেন কি?

মাইগ্রেনের ব্যথার মূল কারণ এখনও পরিষ্কারভাবে জানা যায়নি, তবে গবেষণায় এটি পরিষ্কার হয়েছে যে, জিনগত কারণে মাইগ্রেনের প্রবণতা থাকে। যদি মা বা বাবা মাইগ্রেনের শিকার হন, তাহলে সন্তানেও এটি হতে পারে। মাইগ্রেনের সময় শরীর থেকে কিছু রাসায়নিক পদার্থ নিঃসৃত হয়, যার ফলে ধমনীতে রক্ত চলাচল বেড়ে যায় এবং তা মাথার এক পাশে তীব্র ব্যথা তৈরি করে।

মাইগ্রেনের কারণ

মাইগ্রেনের পেছনে কিছু নির্দিষ্ট কারণ রয়েছে, যেমন:

হরমোনের তারতম্য: মাইগ্রেন নারীদের মধ্যে বেশি দেখা যায়, বিশেষ করে হরমোনের পরিবর্তন সময়ে। সাধারণত ৫ জন নারীর মধ্যে ১ জন মাইগ্রেনে ভুগে থাকে।

ঘুমের অভাব: পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব বা ঘুমের সময়কাল পরিবর্তন মাইগ্রেনের প্রকোপ বাড়াতে পারে।

আবহাওয়ার পরিবর্তন: মেঘলা দিন বা আবহাওয়ার অস্থিরতা শরীরে পানির অভাব সৃষ্টি করে, যা মাইগ্রেনের উপসর্গ বাড়াতে পারে।

অতিরিক্ত শরীরচর্চা: অতিরিক্ত শরীরচর্চা বা বিশ্রামের অভাব মাইগ্রেনের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।

খাবারের অভাব: নিয়মিত খাবারের অভাব বা নির্দিষ্ট মিল বাদ দেওয়া মাইগ্রেনের কারণ হতে পারে।

মাইগ্রেনের ধাপ

মাইগ্রেনের কয়েকটি ধাপ রয়েছে, যা রোগীর শারীরিক অবস্থার ওপর নির্ভর করে ভিন্ন হতে পারে।

প্রোড্রোম: মাইগ্রেনের শুরুতে রোগী মেজাজ পরিবর্তন, ঘুমের সমস্যা, ক্লান্তি বা অতিরিক্ত পানির পিপাসা অনুভব করতে পারেন।

অরা: এটি মাইগ্রেনের আগের সতর্কতা চিহ্ন, যেখানে দৃষ্টিশক্তি কমে যেতে পারে, পেশি দুর্বল হয়ে আসতে পারে এবং শরীরে অবশ ভাব দেখা দেয়।

মাথা ব্যথা: মাইগ্রেনের ব্যথা সাধারণত ৪ থেকে ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী হয় এবং তা মাথার এক পাশ থেকে শুরু হয়ে অন্য পাশেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। এতে রোগী আলো, শব্দ, গন্ধ সহ্য করতে পারেন না।

পোস্টড্রোম: মাইগ্রেন শেষ হওয়ার পর, কিছু রোগী "মাইগ্রেন হ্যাংওভার" অনুভব করেন, যেখানে শরীর দুর্বল থাকে এবং মাথায় কিছু অস্বস্তি থাকে।

মাইগ্রেনের উপশম

মাইগ্রেনের চিকিৎসা অনেক ক্ষেত্রে ঔষধ দিয়ে করা হয়, তবে জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তন আনার মাধ্যমে এই ব্যথা কমানো সম্ভব।

খাবার ও পানীয়: মাইগ্রেনের ব্যথা কমানোর জন্য কিছু নির্দিষ্ট খাবার থেকে দূরে থাকা উচিত, যেমন পুরনো চিজ, ডার্ক চকোলেট, রেড ওয়াইন ইত্যাদি।

ঘুমের অভ্যাস: পর্যাপ্ত ঘুমানো, ফোন বা ল্যাপটপের সামনে সময় কম কাটানো, এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের যোগ অভ্যাস করা মাইগ্রেনের তীব্রতা কমাতে সাহায্য করতে পারে।

বাড়িতে উপশম: মাইগ্রেনের সময়, অন্ধকার এবং শান্ত পরিবেশে কিছু সময় ব্যয় করা, ঠাণ্ডা বা গরম কাপড় দিয়ে কপাল এবং ঘাড়ে সেঁক দেওয়া, এবং মাথা মালিশ করা কিছু উপকারী উপায় হতে পারে।

প্যারাসিটামল ব্যবহারের ঝুঁকি

মাইগ্রেনের ব্যথা কমাতে প্যারাসিটামল খাওয়া অনেকের জন্য সহজ কিন্তু এটি নিয়মিতভাবে করা যথেষ্ট ক্ষতিকারক হতে পারে। মাইগ্রেনের ব্যথা সাধারণত অন্যান্য গুরুতর সমস্যা গোপন করতে পারে। তাই মাইগ্রেনের ব্যথা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে এবং অযথা প্যারাসিটামল খাওয়ার বদলে রোগের প্রকৃত কারণ শনাক্ত করা উচিত।

মাইগ্রেনের ব্যথা ভোগান্তির বিষয় হলেও, জীবনযাত্রায় কিছু সতর্কতা অবলম্বন করে এবং সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে এটি manageable করা সম্ভব। তবে, প্যারাসিটামল বা অন্যান্য ওষুধের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীল না হয়ে, প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে।

মোঃ গোলাম রাব্ব্নী/

স্বাস্থ্য - এর সব খবর

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ