ঢাকা, সোমবার, ৭ এপ্রিল ২০২৫, ২৪ চৈত্র ১৪৩১

MD. Razib Ali

Senior Reporter

সাইফুল আজম: যেই বাংলাদেশী পাইলোট যেভাবে ১২টা বাজিয়েছিল "ইসরাইলের"

জাতীয় ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০২৫ এপ্রিল ০৭ ১৫:৫৫:১৭
সাইফুল আজম: যেই বাংলাদেশী পাইলোট যেভাবে ১২টা বাজিয়েছিল "ইসরাইলের"

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশী বিমান বাহিনীর ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট সাইফুল আজমের নাম ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। তিনি একমাত্র এমন যোদ্ধা, যিনি তিনটি ভিন্ন দেশের বিমান বাহিনীর হয়ে আকাশে লড়াই করেছেন এবং ইসরাইলের বিরুদ্ধে এককভাবে সবচেয়ে বেশি যুদ্ধবিমান গুঁড়িয়ে দেওয়ার নজির স্থাপন করেছেন। তাঁর সাহসিকতা এবং কৌশলের গল্প এমন একটি অধ্যায়, যা যে কোনো পাঠককে মুগ্ধ করবে।

৫ জুন ১৯৬৭: আরব-ইসরাইল যুদ্ধের শুরু

১৯৬৭ সালের ৫ জুন শুরু হয় আরব-ইসরাইল যুদ্ধ। যুদ্ধের শুরুতে ইসরাইলের বিমান বাহিনী অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল মিশরের ওপর। তৎকালীন সময়ের সবথেকে শক্তিশালী বিমান ঘাঁটি মুহূর্তের মধ্যে ধ্বংস হয়ে যায়। তবে, মিশরের পর ইসরাইলের পরবর্তী লক্ষ্য ছিল জর্ডান। কিন্তু, ইসরাইল জানতো না যে, সেখানে তাদের মোকাবেলা করতে অপেক্ষা করছে এক অসম্ভব বীর – সাইফুল আজম।

সাইফুল আজমের অবদান: দুর্বল বিমান দিয়েই শক্তিশালী ইসরাইলকে পরাস্ত

১৯৬৬ সালে পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে কর্মরত অবস্থায় সাইফুল আজম জর্ডানে বদলি হয়ে আসেন। ১৯৬৭ সালে, আরব-ইসরাইল যুদ্ধের মধ্যে, জর্ডানের বাদশাহ সাইফুল আজমকে অনুরোধ করেন বিমান বাহিনী রক্ষা করার জন্য। সাইফুল আজম, তাঁর তিনজন সহযোদ্ধাকে নিয়ে প্রস্তুতি নেন ইসরাইলি বাহিনীকে প্রতিহত করার জন্য। ইসরাইলিরা অত্যাধুনিক সুপারসনিক ড্যাসোল্ড মিস্ট্রাল বিমান নিয়ে আক্রমণ করেছিল, অন্যদিকে সাইফুল আজমদের হাতে ছিল পুরনো, দুর্বল হকার হান্টার যুদ্ধবিমান। কিন্তু সাইফুল আজমের অসাধারণ কৌশলের কারণে, সেই দুর্বল বিমান দিয়েই তিনি দুটি ইসরাইলি সুপারসনিক যুদ্ধবিমান গুঁড়িয়ে দেন।

৭ জুন ১৯৬৭: ইরাকের জন্য লড়াই

৭ জুন, ১৯৬৭ তারিখে সাইফুল আজম ইরাকের এইচ৩ এবং আল-ওয়ালিদ ঘাটির রক্ষা করার দায়িত্বে ছিলেন। সেদিন ইসরাইলের বাহিনী আক্রমণ করে ছয়টি অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান নিয়ে। এক পর্যায়ে ইসরাইলি ক্যাপ্টেন গিডিওন দ্রোর সাইফুল আজমের উইংম্যানের বিমান ভূপাতিত করেন। তবে, সাইফুল আজম প্রতিশোধ নেন দ্রোরের মিরেজ থ্রি সি বিমানটি গুঁড়িয়ে দিয়ে। দ্রোর যুদ্ধবন্দী হয়ে পড়েন এবং তার বিনিময়ে শত শত ইরাকি এবং জর্ডানি সৈন্য মুক্তি পান।

বিশ্বব্যাপী প্রশংসা এবং সাইফুল আজমের অমরত্ব

এই কাহিনী আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয় এবং সাইফুল আজমের বীরত্ব পৃথিবীজুড়ে প্রশংসিত হয়। যদিও ছয় দিনের এই যুদ্ধে আরবরা পরাজিত হয়, তবুও সাইফুল আজমের অবদান ইতিহাসে চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকে। এমনকি ফিলিস্তিনি জনগণের কাছেও সাইফুল আজমের নাম অতি প্রিয়। ২০২০ সালে ৮০ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন, কিন্তু তার বীরত্বের কাহিনী এখনও প্রতিবছর ফিলিস্তিনি জনগণের স্মৃতিতে জীবন্ত থাকে।

সাইফুল আজমের এই সাহসিকতা প্রমাণ করে যে, এক ব্যক্তি যেকোনো শক্তিশালী বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে এবং ইতিহাসে অমর হয়ে থাকতে পারে। তার নাম আজও বাংলাদেশের প্রতি এক গভীর শ্রদ্ধার স্মারক হিসেবে স্মরণ করা হয়।

মো: রাজিব আলী/

জাতীয় - এর সব খবর

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ