ঢাকা, সোমবার, ৭ এপ্রিল ২০২৫, ২৪ চৈত্র ১৪৩১

‘দাগি’ ৭/১০: ক্ষমা, প্রায়শ্চিত্ত ও জীবনের জটিলতার এক রুদ্ধদ্বার ছবি

বিনোদন ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০২৫ এপ্রিল ০৬ ১৪:২১:৩৩
‘দাগি’ ৭/১০: ক্ষমা, প্রায়শ্চিত্ত ও জীবনের জটিলতার এক রুদ্ধদ্বার ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশী চলচ্চিত্র ‘দাগি’ শিহাব শাহীন পরিচালিত একটি কল্পনাপ্রসূত, যন্ত্রণাময় ও মনস্তাত্ত্বিক ছবির উদাহরণ। সিনেমাটি মাত্র দুটি উপাদান দিয়ে পরিপূর্ণ: একদিকে অপরাধ ও পাপের অভিশাপ, অন্যদিকে আত্মমর্যাদা পুনরুদ্ধারের জন্য এক যুবকের সংকল্প। ছবির মূল কাহিনী একটি গাঢ় প্রশ্ন উত্থাপন করে: যদি মানুষ নিজেকে সংশোধন করতে চায়, তবে কি তার অতীত তাকে পরিত্রাণ দিতে ছাড়বে?

‘দাগি’ একটি পুরস্কৃত চরিত্রের যাত্রা, যে তার অপরাধের জন্য দুঃখিত, কিন্তু খুঁজে পায় না কোনো মুক্তি। এটি মুক্তির যন্ত্রণাময় কাহিনী, যেখানে একজন যুবক—নিশান—১৪ বছরের কারাদণ্ড শেষে সমাজের এক কোণে ফিরে আসে। তার পুনঃপ্রবেশ একাধিক দ্বন্দ্ব এবং শত্রুতা সৃষ্টি করে, যা সে জীবনের পুনর্গঠন বা শাস্তি হিসেবে মেনে নেয়। ছবির লক্ষ্য ছিল সমাজের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, মানবিক একতার সংকট ও ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তের পরিণামকে একসাথে উপস্থাপন করা।

এখানে, নিশান তার অতীতকে মুছে ফেলার চেষ্টা করে, কিন্তু তার সামনে আসে বহু প্রতিকূলতা—প্রথমে তার বাবা, পরবর্তীতে তার বোনের পরিবার, এবং শেষ পর্যন্ত সোহাগের মায়ের কাছে ক্ষমা চাওয়ার মিশনে। তবে, প্রতিটি পদক্ষেপে নতুন এক বাধা তার মুখোমুখি হয়। সমাজের লোকেরা তাকে ত্যাগ করে এবং সে এক অসম্ভব পথে এগিয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত, তার জীবনের লক্ষ্য পূর্ণ হয় কিনা, তা প্রশ্নবোধক।

অভিনয় ও সঙ্গীতের বৈশিষ্ট্য

‘দাগি’ ছবিতে আফরান নিশো নিশান চরিত্রে চমৎকার অভিনয় করেছেন। তার চরিত্রের বিকাশ এবং একের পর এক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে তার অভ্যন্তরীণ সংগ্রাম দর্শককে গভীরভাবে টানে। তমা মির্জা, জেরীনের চরিত্রে, আরও একটি শক্তিশালী প্রমাণ রেখেছেন। ছবির অন্যান্য প্রধান চরিত্রগুলোও প্রশংসনীয়, বিশেষত সুনেরা বিনতে কামাল, মনোজ প্রামাণিক এবং এ কে আজাদ সেতু, যারা নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করেছেন।

এছাড়া, ছবির সঙ্গীতের মাধ্যমে আবেগকে পরিপূরক করা হয়েছে। "তোমাদের চোখে দাগি/ সমাজের চোখে দাগি" শিরোনামের গানটি মনোযোগ আকর্ষণ করেছে, যা গল্পের মূল থিমের সঙ্গে একাত্ম। আফরান নিশোর কণ্ঠে গাওয়া এই গানটি ছবির আবেগের সারাংশকে তুলে ধরে। ‘নিয়ে যাবে কী’ ও ‘একটু খানি মন’—এই গানগুলোও ছবির আবেগকে শক্তিশালী করেছে, যার কথা ও সুর সত্যিই এক ধরণের শক্তিশালী অনুভূতি তৈরি করে।

চিত্রগ্রহণ ও পরিচালনা

চিত্রগ্রাহক শুভঙ্কর ভারের কাজ ছবির অন্যতম শক্তিশালী দিক। ছবির দৃশ্য এবং ফ্রেমগুলো নিখুঁতভাবে সন্ত্রাস, বিষাদ, ও যুদ্ধের অবস্থা ফুটিয়ে তুলেছে, যা দর্শককে চরিত্রের অন্তর্দ্বন্দ্বে আরও নিবিষ্ট করে। শিহাব শাহীন পরিচালনার ক্ষেত্রেও বিশেষ প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য, যিনি এক এক করে অনুভূতি, বিপর্যয়, ও রিলেটেবল মানবিক গল্প তুলে ধরেছেন।

সিনেমার মূল বক্তব্য

‘দাগি’ একটি নিছক অপরাধের গল্প নয়; এটি এক ব্যক্তি, তার আত্মসম্মান, অপরাধবোধ এবং ক্ষমা প্রার্থনার গল্প। নিশানের পথচলা ও তার জীবনের শেষ অবধি, ছবিটি আমাদের দেখায় যে অপরাধের যন্ত্রণায় শুধুমাত্র শাস্তি নয়, দীর্ঘ সময় ধরে সংশোধনের প্রক্রিয়াও অন্তরালে থাকে।

এই সিনেমাটি ‘মোরাল অব দ্য স্টোরি’ হিসেবে তেমন কোনো সরল পাঠ দেয় না, বরং পাঠকের মধ্যে নৈতিক দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করে। এটি সেই গল্প যেখানে এক ব্যক্তি সমাজের কাছ থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়ে, তার আত্মত্যাগ ও সংশোধনের পথে চলতে থাকে, অবশেষে এক অবিস্মরণীয় তিক্ত সত্যের মুখোমুখি হয়।

মোট কথা, ‘দাগি’ একটি শক্তিশালী এবং চিন্তাশীল ছবি, যা দর্শকদের একেবারে মুগ্ধ করে এবং তাদের ভাবতে বাধ্য করে। এটি সেই সব দর্শকদের জন্য, যারা জীবনের গভীরতা ও সংকটগুলি অনুভব করতে চান।

মোসাঃ ফারিয়া/

বিনোদন - এর সব খবর

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ