ঢাকা, রবিবার, ৬ এপ্রিল ২০২৫, ২৩ চৈত্র ১৪৩১

আওয়ামীপন্থী ৮ গ্রুপের পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনতে সরকারীয় পদক্ষেপ

২০২৫ এপ্রিল ০৬ ১৩:০৪:১২
আওয়ামীপন্থী ৮ গ্রুপের পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনতে সরকারীয় পদক্ষেপ

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের বৃহত্তম ৮টি আওয়ামীপন্থী শিল্প-বাণিজ্য গ্রুপের বিরুদ্ধে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচারের অভিযোগ উঠেছে। দেশের ব্যাংক ঋণের নামে টাকা লোপাট এবং রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে এই গ্রুপগুলো কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। সামিট, এস আলম, বেক্সিমকো, নাসা, সিকদার, জেমকন, ওরিয়ন এবং আরামিট—এই গ্রুপগুলোর বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে এবং ইতিমধ্যে তাদের পাচারকৃত অর্থ বিদেশে বিনিয়োগের প্রমাণ পাওয়া গেছে।

বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) এবং অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর এক যৌথ তদন্তে জানা গেছে যে, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, হংকং, স্লোভাকিয়া, মালয়েশিয়া, সুইজারল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে এই অর্থ পাচার এবং বিনিয়োগ করা হয়েছে।

এখন, দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার এই চক্র বন্ধ করতে সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে আটটি দেশের সঙ্গে মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিকোয়েস্ট (এমএলএআর) পাঠানো হয়েছে, যার মাধ্যমে পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা চলছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর জানিয়েছেন, "গত তিনটি মেয়াদে প্রায় ১ হাজার ৭০০ কোটি ডলার বিদেশে পাচার হয়েছে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য বিপজ্জনক।" একযোগভাবে কাজ করা সরকারের বিভিন্ন সংস্থা আশা করছেন, এভাবে এই অর্থগুলো ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে, তবে এটা একটি কঠিন প্রক্রিয়া।

তদন্তের সাথে যুক্ত বিভিন্ন সংস্থা, যেমন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং সিআইডি, ইতিমধ্যেই এই শিল্প-বাণিজ্য গ্রুপগুলোর বিরুদ্ধে যথেষ্ট প্রমাণ সংগ্রহ করেছে।

বিশেষত, সামিট গ্রুপ—যেটি আওয়ামী লীগের আমলে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা ভোগ করেছে—এখন টেলিকম, বিদ্যুৎ এবং বন্দর খাতে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগের সম্মুখীন। এস আলম গ্রুপের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের পক্ষ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকার পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে, যা দেশের ইতিহাসে একটি বিরাট পরিমাণ অর্থ।

বেক্সিমকো গ্রুপের বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্যে ৮ কোটি ৩০ লাখ পাউন্ড এবং নাসা গ্রুপের বিরুদ্ধে ৬৭০ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে গভর্নর আহসান এইচ মনসুর আরও বলেন, "পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনার জন্য প্রচেষ্টা বাড়ানো হয়েছে। দেশের নানা আইনশৃঙ্খলা সংস্থাগুলো একযোগে কাজ করলে আমরা এই অর্থ উদ্ধার করতে সক্ষম হতে পারব, তবে এটি একটি কঠিন কাজ।"

এদিকে, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানও এই প্রচেষ্টাকে সমর্থন করেছেন। তিনি বলেন, "এটি একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ, তবে দেশের অর্থনৈতিক নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত জরুরি।"

এখন দেখার বিষয়, সরকার এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো কিভাবে এই অভিযানে সফল হতে পারে এবং পাচারকৃত অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনতে কতটা সক্ষম হয়। এই প্রক্রিয়াটি দেশের অর্থনীতি ও জনগণের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে।

মো: রাজিব আলী/

শেয়ার নিউজ - এর সব খবর

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ