ঢাকা, সোমবার, ৩১ মার্চ ২০২৫, ১৭ চৈত্র ১৪৩১

জেনেনিন ঈদের নামাজ আদায়ের নিয়ম ও গুরুত্বপূর্ণ বিধান

২০২৫ মার্চ ৩০ ২০:০৩:২০
জেনেনিন ঈদের নামাজ আদায়ের নিয়ম ও গুরুত্বপূর্ণ বিধান

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হলো ঈদের নামাজ। এটি দুই রাকাত এবং ওয়াজিব। এই নামাজে আজান ও ইকামতের প্রয়োজন নেই। যাদের ওপর জুমার নামাজ ওয়াজিব, তাদের ওপর ঈদের নামাজও ওয়াজিব। জুমার নামাজের মতো ঈদের নামাজেও উচ্চ আওয়াজে কোরআন তিলাওয়াত করা হয়।

ঈদের নামাজের বিশেষত্ব

ঈদের নামাজের মূল পার্থক্য হলো এতে অতিরিক্ত ছয়টি তাকবির রয়েছে।

প্রথম রাকাতে: তাকবিরে তাহরিমার পর হাত বেঁধে অতিরিক্ত তিনটি তাকবির দিতে হয়, এরপর সুরা ফাতিহা ও অন্য কোনো সুরা তিলাওয়াত করতে হয়।

দ্বিতীয় রাকাতে: সুরা ফাতিহা ও অন্য সুরা তিলাওয়াতের পর অতিরিক্ত তিনটি তাকবির দিতে হয়, এরপর রুকুতে যাওয়া হয়।

ঈদের নামাজ কোথায় পড়া উত্তম?

ঈদের নামাজ খোলা মাঠে বা ঈদগাহে আদায় করাই উত্তম। তবে প্রয়োজনে মসজিদেও ঈদের নামাজ পড়া যায়। (সূত্র: বুখারি ১/১৩১, ফাতাওয়া শামি ১/৫৫৫, ১/৫৫৭)

ঈদের নামাজের সময়

সূর্যোদয়ের পর এক বর্শা পরিমাণ (অর্ধহাত) উঁচু হলে থেকে দ্বিপ্রহর পর্যন্ত ঈদের নামাজ আদায়ের সময় থাকে।

ঈদুল ফিতরের ক্ষেত্রে: নামাজ একটু দেরিতে পড়া সুন্নত, যাতে আগে সদকাতুল ফিতর আদায় করা যায়।

ঈদুল আজহার ক্ষেত্রে: নামাজ দ্রুত পড়া উত্তম, যাতে ত্যাগের ইবাদত তথা কুরবানি যথাসময়ে করা যায়। (সূত্র: ফাতহুল কাদির ২/৭৩, আল-মুগনি ২/১১৭)

নামাজের নিয়ত

নামাজের নিয়ত মুখে উচ্চারণ করা জরুরি নয়। মনে মনে নির্ধারণ করলেই যথেষ্ট যে, “আমি আল্লাহর উদ্দেশ্যে ঈদের দুই রাকাত নামাজ কিবলামুখী হয়ে, অতিরিক্ত ছয় তাকবিরসহ এই ইমামের পেছনে আদায় করছি।”

ঈদের নামাজের নিয়ম

প্রথম রাকাতের ধাপসমূহ:

১. তাকবিরে তাহরিমা দিয়ে হাত বাঁধা।

2. সানা পড়া।

৩. অতিরিক্ত তিনটি তাকবির দেওয়া। প্রথম ও দ্বিতীয় তাকবিরের সময় হাত ওঠিয়ে ছেড়ে দেওয়া এবং তৃতীয় তাকবির দিয়ে হাত বাঁধা।

৪. আউজুবিল্লাহ ও বিসমিল্লাহ পড়া।

৫. সুরা ফাতিহা ও অন্য সুরা তিলাওয়াত করা।

৬. স্বাভাবিক নামাজের মতো রুকু ও সিজদা আদায় করা।

দ্বিতীয় রাকাতের ধাপসমূহ:

১. বিসমিল্লাহ পড়া।

২. সুরা ফাতিহা ও অন্য সুরা তিলাওয়াত করা।

৩. অতিরিক্ত তিনটি তাকবির দেওয়া। প্রথম দুই তাকবিরে হাত উঠিয়ে ছেড়ে দেওয়া, তৃতীয় তাকবিরের পর হাত না বেঁধে সরাসরি রুকুতে যাওয়া।

৪. স্বাভাবিক নামাজের মতো রুকু, সিজদা, তাশাহহুদ, দরুদ ও দোয়া মাসুরা পড়া।

৫. সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করা।

ঈদের নামাজের পর খুতবা

নামাজের পর ইমাম দুটি খুতবা প্রদান করবেন, যা মুসল্লিদের জন্য মনোযোগ সহকারে শোনা ওয়াজিব। (সূত্র: ফাতাওয়া শামি ১/৫৫৯, ৫৬০)

নামাজ ছুটে গেলে করণীয়

যদি কেউ ঈদের নামাজ ছুটিয়ে ফেলে, তবে তাকে শহরের অন্য কোনো জামাতে নামাজ পড়ার চেষ্টা করতে হবে। যদি সেটাও সম্ভব না হয়, তবে এর কোনো কাজা নেই। তবে ইশরাকের চার রাকাত নফল নামাজ আদায় করা উত্তম, তবে এতে ঈদের নামাজের অতিরিক্ত তাকবির থাকবে না। (সূত্র: ফাতাওয়া শামি ১/৫৬১)

ঈদের নামাজ মুসলমানদের জন্য বিশেষ আনন্দ ও ইবাদতের অংশ। তাই যথাযথ নিয়ম মেনে এটি আদায় করা গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহ আমাদের সবাইকে ঈদের নামাজ সঠিকভাবে আদায়ের তৌফিক দান করুন। আমিন।

সামিরা বিনতে সাবা/

ধর্ম - এর সব খবর

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ