ঢাকা, সোমবার, ৩১ মার্চ ২০২৫, ১৭ চৈত্র ১৪৩১

সৌদির সঙ্গে মিল রেখে ঈদ জামাত: ঐক্য এবং বিতর্কের মধ্যে

২০২৫ মার্চ ৩০ ১২:৩০:২৩
সৌদির সঙ্গে মিল রেখে ঈদ জামাত: ঐক্য এবং বিতর্কের মধ্যে

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঈদের দিন আসে, আর বিশ্বজুড়ে মুসলিমদের হৃদয়ে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। কিন্তু এই আনন্দের মুহূর্তে, যখন ঈদ জামাতের সময় নির্ধারণের কথা আসে, তখন সৌদির সঙ্গে মিল রেখে তা পালনের বিষয়টি কিছু দেশে আলোচনার জন্ম দেয়। বিশেষত বাংলাদেশসহ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর মধ্যে, সৌদি আরবের সঙ্গে ঈদ জামাতের সময় সমন্বয় করার ধারণাটি কিছুটা ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। কিন্তু কেন এই মিলের চেষ্টা? এর পেছনে আছে ধর্মীয় আদর্শ, ঐক্য এবং কিছু বিতর্কিত দিক।

সৌদির পবিত্রতা: মক্কা ও মদিনার ভূমিকা

এটি আমাদের সবার জানা যে, ইসলামিক বিশ্বের সবচেয়ে পবিত্র স্থান দুটি—মক্কা ও মদিনা—সৌদি আরবে অবস্থিত। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মুসলিম ধর্মীয় কেন্দ্র হিসেবে সৌদির প্রতি সম্মান স্বাভাবিকভাবেই ব্যাপক। তাই, সৌদি আরবের ধর্মীয় সিদ্ধান্তগুলো মুসলিম সমাজে বিশেষ গুরুত্ব পায়। যখন সৌদি আরব ঘোষণা দেয় যে চাঁদ দেখা গেছে এবং ঈদ পালনের দিন নির্ধারণ করা হয়েছে, তখন তা বিশ্বের মুসলমানদের জন্য একটি আলোকবর্তিকা হয়ে ওঠে। সৌদি আরবের সিদ্ধান্তের সাথে মিল রেখে ঈদ উদযাপন একটি ঐক্যবদ্ধ মুসলিম সমাজের প্রতীক হয়ে দাঁড়ায়।

হিজরি ক্যালেন্ডার এবং চাঁদ দেখা: একটি বৈশ্বিক ঐতিহ্য

ইসলামে সময় গণনা চাঁদ দেখে নির্ধারিত হয়, এবং হিজরি ক্যালেন্ডার সেই নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। সৌদি আরবের চাঁদ দেখা, বিশেষত ঈদের দিন ঘোষণা, সারা পৃথিবীর মুসলিমদের জন্য একটি আদর্শ হয়ে ওঠে। এটি শুধু একটি চাঁদ দেখার বিষয় নয়; এটি একটি ঐক্যের প্রতীক, যেখানে একদিনে ঈদ উদযাপন করা, সারা বিশ্বের মুসলমানদের একত্রিত করে একটি ধর্মীয় বন্ধনে আবদ্ধ করে। একে অপরের সাথে একই দিনে ঈদ পালন করলে, সব মুসলিম জাতি একত্রিত হয়ে নিজেদের ধর্মীয় ঐক্য অনুভব করতে পারে।

ঈদ জামাতের সময় সৌদির সঙ্গে মিলানো: ঐক্য vs বৈশ্বিক বাস্তবতা

তবে, সৌদির সঙ্গে মিল রেখে ঈদ জামাতের সময় নির্ধারণ করার ধারণাটি সব দেশে গ্রহণযোগ্য নয়। বাংলাদেশের মতো কিছু দেশে চাঁদ দেখার বিষয়টি স্থানীয় আবহাওয়া, ভূগোল ও পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে, তাই এক দেশের ঘোষণার সঙ্গে অন্য দেশের মিল রাখা কিছুটা জটিল। অনেক মুসলমান মনে করেন, ঈদ উদযাপন শুধুমাত্র সৌদি আরবের সঙ্গে সমন্বিত হওয়া উচিত নয়। বরং, দেশের নিজস্ব চাঁদ দেখা এবং স্থানীয় বৈজ্ঞানিক ও ঐতিহ্যগত প্রেক্ষাপটের ভিত্তিতে ঈদ নির্ধারণ করা উচিত।

এটি যে শুধু ধর্মীয় একতার কথা নয়, বরং স্থানীয় বাস্তবতার প্রতি শ্রদ্ধা রাখার বিষয়ও, তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। কেননা, একটি দেশের জন্য যেখানে ঈদ পালনের দিনটি সম্ভব, অন্য দেশে সেটি উপযুক্ত নাও হতে পারে।

একটি ধর্মীয় ঐক্য: সৌদির সিদ্ধান্তের প্রভাব

যদিও বিতর্ক রয়েছে, সৌদির সঙ্গে মিল রেখে ঈদ জামাতের সময় নির্ধারণে অনেকের মনেই এক ধরনের ধর্মীয় ঐক্য অনুভূত হয়। এই ঐক্য শুধু সৌদির প্রতি শ্রদ্ধা থেকেই নয়, বরং মুসলিম বিশ্বে একটি সুসংহত ও একত্রিত সমাজের ধারণা থেকে উঠে আসে। একদিন ঈদ পালনের মাধ্যমে, বিশ্বের সকল মুসলমান নিজেদের মধ্যে একটি শক্তিশালী বন্ধন অনুভব করেন।

তবে, এই ঐক্য এবং ধর্মীয় সংহতির গুরুত্ব যেন শুধুমাত্র চাঁদ দেখার ভিত্তিতেই সীমাবদ্ধ না থাকে, বরং প্রতিটি দেশের নিজস্ব বাস্তবতা ও প্রেক্ষাপটের দিকে সঠিক দৃষ্টি রাখা জরুরি। ধর্মীয় সিদ্ধান্তগুলো সব দেশের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য নয়, কিন্তু সবার মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং সমঝোতা বজায় রাখা আমাদের একত্রিত হওয়ার শক্তি।

ফারুক/

ধর্ম - এর সব খবর

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ