ঢাকা, সোমবার, ৩১ মার্চ ২০২৫, ১৭ চৈত্র ১৪৩১

MD. Razib Ali

Senior Reporter

যে ভাবে গরুর মাংস রান্না করে খেলে হতে পারে ক্যান্সার

লাইফস্টাইল ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০২৫ মার্চ ২৯ ১৫:২১:৪৩
যে ভাবে গরুর মাংস রান্না করে খেলে হতে পারে ক্যান্সার

নিজস্ব প্রতিবেদক: গরুর মাংস আমাদের খাদ্য তালিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। তবে এটি নিয়ে নানা ধরনের বিতর্কও রয়েছে। গরুর মাংস যেমন পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ, তেমনি এটি কিছু স্বাস্থ্যঝুঁকিও তৈরি করতে পারে। তাই এটি খাওয়ার ক্ষেত্রে পরিমাণ ও রান্নার পদ্ধতির দিকে বিশেষভাবে নজর দেওয়া দরকার।

গরুর মাংসের উপকারিতা

গরুর মাংসে উচ্চমানের প্রোটিন থাকে, যা শরীরের চুল, ত্বক, মাংসপেশি, হাড় ও হরমোনের গঠনে সহায়ক। এছাড়া, এতে থাকা ভিটামিন বি১২ মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করে। উদ্ভিজ্জ খাবারে এই ভিটামিন পাওয়া কঠিন, তাই যারা নিরামিষভোজী, তাদের আলাদাভাবে এই ভিটামিন গ্রহণ করতে হয়।

গরুর মাংসে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে, যা নতুন রক্ত তৈরিতে সহায়তা করে এবং অ্যানিমিয়া প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে। এছাড়া, এতে থাকা জিঙ্ক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এসব গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টিগুণের কারণে পরিমিত পরিমাণে গরুর মাংস খাওয়া শরীরের জন্য উপকারী হতে পারে।

গরুর মাংসের স্বাস্থ্যঝুঁকি

যদিও গরুর মাংস পুষ্টিকর, তবে অতিরিক্ত খেলে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়তে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা দিনে ৫০ গ্রাম রেডমিট (যেমন গরু বা খাসির মাংস) খায়, তাদের হৃদরোগে মৃত্যুর ঝুঁকি ১৮% এবং ক্যান্সারে মৃত্যুর ঝুঁকি ৪০% পর্যন্ত বেড়ে যায়। এছাড়া, ডায়াবেটিসের ঝুঁকি ১২% পর্যন্ত বাড়তে পারে।

তবে এই গবেষণাগুলো সরাসরি নিশ্চিত করে না যে গরুর মাংসই এসব রোগের একমাত্র কারণ। জীবনযাত্রার অন্যান্য দিকও এতে ভূমিকা রাখতে পারে। তাই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO), ব্রিটিশ স্বাস্থ্য সংস্থা (NHS) ও আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন সরাসরি গরুর মাংস খাওয়া বন্ধ করতে বলেনি; বরং পরিমাণ কমিয়ে খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। যুক্তরাজ্যে সুপারিশ করা হয়েছে, দিনে ২০০ গ্রাম রেডমিট খাওয়ার পরিবর্তে তা ৭০ গ্রামে সীমাবদ্ধ রাখা ভালো।

সঠিক রান্নার গুরুত্ব

গরুর মাংস কীভাবে রান্না করা হচ্ছে, তার উপরও স্বাস্থ্যঝুঁকি নির্ভর করে। উচ্চ তাপে মাংস পোড়ালে বা বারবিকিউ করলে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী রাসায়নিক উৎপন্ন হতে পারে। এছাড়া, উচ্চ তাপে মাংস রান্নার সঙ্গে ডায়াবেটিসের ঝুঁকিও বাড়তে পারে।

গবেষণায় বলা হয়েছে, কম আঁচে ধীরে ধীরে রান্না করা মাংস স্বাস্থ্যের জন্য তুলনামূলক ভালো। তাই পুড়িয়ে বা উচ্চ তাপে রান্নার পরিবর্তে ধীর তাপে সিদ্ধ করে মাংস খাওয়া ভালো বলে বিশেষজ্ঞরা মত দিয়েছেন।

প্রক্রিয়াজাত মাংসের ঝুঁকি

বিভিন্ন গবেষণায় প্রক্রিয়াজাত মাংস যেমন বিফ সালামি, বিফ পেপারনি, বিফ সসেজের ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে পরিষ্কার প্রমাণ পাওয়া গেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণায় বলা হয়েছে, এসব মাংস ক্যান্সারের কারণ হতে পারে। তাই যতটা সম্ভব প্রক্রিয়াজাত মাংস এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়।

গরুর মাংস খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা

১. গর্ভবতী নারীদের জন্য: গরুর কলিজায় প্রচুর ভিটামিন এ থাকে, যা গর্ভের শিশুর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই গর্ভবতী নারীদের কলিজা খেতে নিরুৎসাহিত করা হয়।

২. কিডনি রোগীদের জন্য: কিডনি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা কতটুকু মাংস খেতে পারবেন, তা অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নির্ধারণ করা উচিত।

৩. পরিমাণ ও বিকল্প: সুস্থ মানুষের জন্য দিনে ৭০ গ্রামের বেশি গরুর মাংস না খাওয়া ভালো। তবে গরুর মাংসে থাকা পুষ্টিগুণ অন্যান্য খাবার থেকেও পাওয়া সম্ভব।

গরুর মাংস খাওয়া একেবারে বাদ দেওয়ার দরকার নেই, তবে পরিমিত পরিমাণে ও স্বাস্থ্যকর উপায়ে রান্না করে খাওয়া উচিত। প্রক্রিয়াজাত মাংস যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলা ভালো। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের জন্য সুষম খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা এবং বিভিন্ন ধরনের খাবার গ্রহণ করাই শ্রেয়।

রাজিব আলী/

লাইফ স্টাইল - এর সব খবর

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ